জানুয়ারিতে কি হবে এসএ গেমস

রফিকুল হায়দার ফরহাদ
Printed Edition

সর্বশেষ এসএ গেমস হয়েছিল ২০১৯ সালে। এরপর কখনো করোনা, কখনো পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মাঠে গড়াতে দেয়নি এসএ গেমসকে। শেষ পর্যন্ত গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ২০২৬-এর ২৩-৩১ জানুয়ারিতে তারা আয়োজন করবে পরবর্তী এসএ গেমস। পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান অলিম্পিক কমিটির (এসএওসি) সভায় সিদ্ধান্ত। এরপর গেমসের ডিসিপ্লিন চূড়ান্ত হয়। ২৮টি ডিসিপ্লিন থাকছে ইসলামাবাদ, লাহোর ও ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই গেমসে। যেখানে বাংলাদেশ অংশ নেবে ২৬টি ডিসিপ্লিনে। সেই মোতাবেক বাংলাদেশের অধিকাংশ ফেডারেশনই তাদের অনুশীলন শুরু করে। কয়েক ফেডারেশন বিদেশী কোচও নিয়ে এসেছে; কিন্তু যে গেমসের জন্য এত কিছু, সেই গেমস আদৌ সময় মতো হবে কি না সন্দেহ। বিওএ থেকে পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ করে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পায়নি। তাই সন্দেহ।

গেমস হতে এখনো প্রায় চার মাস বাকি। এখনো অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড করা, টেকনিক্যাল হ্যান্ডবুক তৈরি, স্পোর্টস এন্ট্রি কোনো কিছুই করা হয়নি। স্পোর্টস এন্ট্রি মানে কোন ইভেন্টে কয়জন খেলোয়াড় খেলবে তা চূড়ান্ত করা, কোনো ইভেন্টে অংশ নেয়া দেশের সংখ্যা কম হলে কিভাবে তা ম্যানেজ করা ইত্যাদি। গেমসের ফিকশ্চারও করা হয়নি। এসব করার বিষয়ের কোনো তাগাদাই নেই পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের। তাই বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তার সন্দেহ আসলে পাকিস্তান সময় মতো এই গেমস করতে পারবে কি না। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ দলের বহর হবে ছয় শতাধিক।

বিওএ’র সূত্রটি বলছে সাধারণত যেকোনো গেমস শুরুর ছয় মাস আগে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড করার কাজ শুরু করতে হয়। অথচ এখন চার মাস বাকি। কোনো কিছুই করছে না পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ। গেমসের সময় অ্যাথলেটরা কোথায় থাকবেন সেই আবাসন ব্যবস্থাও একটি জরুরি বিষয়। তা ছাড়া বাংলাদেশ দলে যারা যাবেন তাদের পোশাক প্রস্তুত করা, বিমানের টিকিট কাটা অনেক কাজই বাকি।

বিওএ থেকে কৌশলে করা হলেও কোনো উত্তর নেই পাকিস্তান থেকে। আবার দেশটির বিশাল অংশজুড়ে বন্যা। এসএ গেমসের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ ভারতের অংশগ্রহণ নিয়েই কোনো সুখবর নেই। যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে এসএওসির সভায় ভারত যোগ দিয়েছিল অনলাইনে। এই সবকিছুই গেমসকে ফেলে দিয়েছে অনিশ্চয়তায়।

এসএ গেমসের আগে আগামী মাসে বাহরাইনে হবে ইয়ুথ এশিয়ান গেমস। এরপর নভেম্বরে সৌদি আরবে ইসলামিক সলিডারিটি গেমস। এসএ গেমমের জন্য প্রস্তুতিরত দলগুলো এই দুই গেমসের জন্য নিজেদের ঝালিয়ে নিতে পারবেন। তবে যদি শেষ পর্যন্ত এসএ গেমস না হয় তাহলে ট্রেনিং বাবদ যে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে তা বিফলেই যাবে। তবে ইয়ুথ এশিয়ান গেমস ও ইসলামিক সলিডারিটি গেমসের যেসব ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশ অংশ নেবে এর চেয়ে বেশি ডিসিপ্লিন এসএ গেমসে। এসএ গেমসের ২৮ ডিসিপ্লিনের মধ্যে বাংলাদেশ ২৬টি ডিসিপ্লিনে অংশ নেবে। রোইং ও প্যারাগ্লাইডিংয়ে অংশ নিচ্ছে না। অন্য দিকে ২২-৩১ অক্টোবরের ইয়ুথ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ মোট ১৩টি ডিসিপ্লিনে অংশ নেবে। এগুলো হলো কাবাডি, অ্যাথলেটিকস, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন, সাইক্লিং, জুডো, থ্রি অন থ্রি বাস্কেটবল, বক্সিং, গলফ, কুস্তি, টেবিল টেনিস, তায়কোয়ানডো ও ভারোত্তোলন। ৭-২১ নভেম্বরের ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করবে ১১ ডিসিপ্লিনে। এগুলো হলো- অ্যাথলেটিকস, ফেন্সিং, কারাতে, থ্রি অন থ্রি বাস্কেটবল, জুডো, সাঁতার, টেবিল টেনিস, তায়কোয়ানডো, ভারোত্তোলন, উশু ও কুস্তিতে।

সুতরাং যদি এসএ গেমস জানুয়ারিতে না হয় তাহলে এই ইয়ুথ এশিয়ান গেমস ও সলিডারিটি গেমসের ডিসিপ্লিনের বাইরের ডিসিপ্লিনের ক্রীড়াবিদদের ভীষণ লোকসান হবে হবে। এই ডিসিপ্লিনের অ্যাথলেটদের অনুশীলনই বিফলে যাবে। এসএ গেমসের জন্য খেলোয়াড়দের অনুশীলনের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে ৩৫ কোটি টাকা বাজেট দিয়েছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। যদিও ক্রীড়া পরিষদ প্রশিক্ষণের জন্য টাকা বিওএকে না দিয়ে সরাসরি ফেডারেশনগুলোকে দেবে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে দুবাই বা দোহা হয়ে পাকিস্তানে যাওয়ার বিমানভাড়া বাবদ ২৭/২৮ কোটি টাকা বাজেট করা হয়েছে। এতে জনপ্রতি ভাড়া এক লাখ টাকার উপরে। তবে যদি ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট চালু হয় তাহলে এই ভাড়া নেমে আসবে অর্ধেকে বা আরো কম।