নি¤œ মানের বই মুদ্রণের অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত বিভিন্ন প্রেসের তথ্য যাচাই-বাছাই করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এসব প্রেস মালিক ২০২৫ সালের বাতিলযোগ্য বই পুনরায় না ছেপেই ভিন্ন কৌশলে মোটা অঙ্কের বিল তুলে নেয়ার জন্য পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ এসেছে। তাই চিহ্নিত এই ১৯টি প্রেসের বিল ভাউচার (উপজেলা থেকে সরবরাহকৃত চালান) অধিকতর যাচাই-বাছাই করতে কমিটি গঠন করেছে এনসিটিবি। চলতি মাসেই এসব প্রেসের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ প্রমাণিত হলে আর্থিক জরিমানা কিংবা এনসিটিবির কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এই ১৯টি প্রেস। এসব প্রেস ভবিষ্যতে এনসিটিবি বই মুদ্রণের কাজ করতে পারবে না মর্মেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের বিনামূল্যের পাঠ্যবই জেলা-উপজেলায় পৌঁছানো হলেও বেশ কিছু প্রেসের বইয়ের গুণগত মান এতটাই নি¤œমানের যে এই বইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়ার মতো ছিল না। ফলে এনসিটিবির দেয়া শর্ত মোতাবেক এসব বই রিপ্লেস করতে সংশ্লিষ্ট প্রেস মালিকদের চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। অনেক উপজেলায় শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে গেলেও সেই বই পুনরায় ফেরত আনা হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী এসব খারাপ বই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুনরায় ছেপে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়ার কথা প্রেস মালিকদের নিজেদেরই দায়িত্বে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে অনেক জেলা উপজেলায় এই পৌঁছে না দিয়েই ভুয়া চালান তৈরি করে সেখানে জেলা কিংবা উপজেলা মাধ্যমিকে শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে বই পেয়েছি মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র এবং এর সাথে বইয়ের একটি চালান কপিও প্রেস মালিকরা নিজেরাই তৈরি করে এনসিটিবিতে জমা দিয়েছেন।
কিন্তু এনসিটিবির কর্মকর্তাদের বিষয়টি অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক মনে হলে তারা জেলা উপজেলা কর্মকর্তাদের নিকট পুনরায় চিঠি দিয়ে বিষয়টির সত্যতা জানতে চান। কিন্তু ফিরতে পত্রে দুই ডজনের বেশি জেলা (সংশ্লিষ্ট উপজেলাসহ) থেকে জানানো হয় যে, তারা (জেলা কিংবা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা) এ ধরনের চালানের কোনো কপিতে স্বাক্ষর করেননি এবং তারা প্রেস মালিকদের নিকট থেকে রিপ্লেসমেন্টের বইও তারা কিংবা শিক্ষার্থীরাও অদ্যাবধি পাননি। কাজেই প্রেস মালিকদের নিজেদের তৈরি করা এই ভুয়া বিল ভাউচার বা চালানের কপি যে নিছক একটি প্রতারণা তা এনসিটিবির কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায়। তাই সংশ্লিষ্ট এই প্রেস মালিকদের বিষয়ে তথ্য যাচাই করতে উদ্যোগ নিয়েছে এনসিটিবি।
এনসিটিবি সূত্র নয়া দিগন্তকে জানায়, এরকম ১৯টি প্রেসের ভুয়া চালান কপি তাদের হাতে ধরা পরেছে। এখনো যেহেতু তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে তাই এখনি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে চলতি মাসের মধ্যেই সব তথ্য চলে আসবে এবং তথ্য যাচাই-বাছাইও শেষ হবে। তখন কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে তা প্রকাশ করা হবে।
এ দিকে এনসিটিবির তালিতায় থাকা ভুয়া চালান কপি জমা দিয়ে অনিয়ম আর দুর্নীতির নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছেন এমন প্রেসের তালিকায় রয়েছে অক্সফোর্ড প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন, শাফিন প্রেস, রেদওয়ানিয়া প্রেস, লেটার অ্যান্ড কালার, দি গুডলাক প্রিন্টার্স, অ্যারোস্টোক্র্যাটস প্রেস, অনুপম প্রেস, মিলন প্রেস, বর্ণমালা প্রেস, দোয়েল প্রেস, ন্যাশনাল প্রেস, টাঙ্গাইল অপসেট প্রেস, সরকার প্রেস, নাহার প্রেস, নাইমা প্রেস, ঢাকা প্রিন্টার্স, পাঞ্জেরি প্রিন্টার্স, আমাজন প্রেস, ভাই ভাই প্রেস প্রভৃতি।
অভিযোগের বিষয়ে গতকাল এনসিটিবির এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, আমাদের কাছে অভিযোগ আসার পর আমরা নিজেরাই বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে অভিযোগের বিষয়ে তথ্য চেয়েছি। তাদের অনেকেই আমাদের জানিয়েছেন তারা বই রিপ্লেসমেন্টের বিষয়ে কোনো চালান কপি সই স্বাক্ষর করেননি বা আমাদের কাছে চালান কপি পাঠাননি। এই কর্মকর্তা আরো জানান, গত ০৩/০৯/২৫ তারিখ এনসিটিবি থেকে চিঠি দিয়ে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে আরো তথ্য জানাতে বা পাঠাতে বলা হয়। তারা অনেকেই এনসিটিবিকে চিঠি মারফত জানিয়েছেন যে এসব চালান কপি ভুয়া। তবে এখন এনসিটিবি নিজস্বভাবে আরো তথ্য সংগ্রহ করে অধিকতর অনুসন্ধান করে তথ্য যাচাই-বাছাই করছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এসব প্রেসের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানা কিংবা তাদের দীর্ঘ মেয়াদের জন্য এনসিটিবির কালো তালিকাভুক্ত করা হতে পারে। অপর দিকে তালিকায় থাকা কয়েকটি প্রেসকে গতকাল ফোন দেয়া হলেও তারা আনীত অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।



