গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর হলেও স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায় বসবাস করতেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে নিহত আবুল কালাম (৩৫)। নারায়ণগঞ্জ থেকে নিয়মিত রাজধানী ঢাকায় যেতেন কর্মস্থলে। ঢাকায় একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে চাকরি করতেন তিনি। এখন আর রাত হলেই নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার তাড়া থাকবে না আবুল কালামের। স্বামীর জন্য আর অপেক্ষা করবেন না স্ত্রী আইরিন। দুই শিশু সন্তান আর অপেক্ষা করবে না বাবার জন্য।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে পিলার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আবুল কালাম মারা যান।
নিহতের স্বজন আরিফ হোসেন জানান, আবুল কালাম ঢাকায় একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে চাকরি করতেন। নিয়মিত কাজের সূত্রে রাজধানীতে যাতায়াত করতেন। দুপুরে তার মোবাইল নম্বর থেকে অপরিচিত একজন ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দেন। পরে তিনি হাসপাতালে গিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন।
আরিফ আরো বলেন, আবুল কালামের মা-বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায় থাকতেন। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভিড় করেন নিহতের স্বজনরা।
এ দিকে হঠাৎ মৃত্যুর খবরে শোকে স্তব্ধ আবুল কালামের গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরকাঠি গ্রাম। চার ভাইয়ের টিনের ঘরের একটি ছিল আবুল কালামের। ঘরটি এখন তালাবদ্ধ। বড় ভাই খোকন চোকদারের ঘরে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বড় বোন সেলিনা বেগমসহ স্বজনেরা। শোকে মুহ্যমান গ্রামের মানুষ ও বন্ধুরাও ছুটে এসেছেন তাদের সান্তনা দিতে।
আবুল কালামের শৈশবের বন্ধু রিহিনুজ্জামান বলেন, এক মাস আগে যখন গ্রামে এসেছিল, তখনও হাসিখুশি ছিল। এভাবে চলে যাবে, তা ভাবতেই পারছি না।
বড় বোন সেলিনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ভাইটা ছোটবেলা থেকেই কষ্ট করেছে। বাবা মা নেই, এখন দুই বাচ্চা রেখে সেও চলে গেল। কে দেখবে এখন ওর বাচ্চাগুলোকে? আল্লাহ, কেন এমন করলে, আমাদের সাথে?
বড় ভাই খোকন চোকদার বলেন, গত মাসে গ্রামের জমিজমার খোঁজ নিতে এসেছিল সে। কে জানত ওটাই তার শেষ আসা হবে! এখন সে ফিরবে প্রাণহীন দেহ হয়ে। আমাদের পরিবারের এ শোক আমরা কীভাবে সইব?



