অভিযুক্ত গৃহকর্মী পেশাদার খুনি!

আমিনুল ইসলাম
Printed Edition

  • মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ড
  • নেপথ্যে থাকতে পারে কোনো চক্র

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশাকে ‘প্রফেশনাল কিলার’ বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে চুরি নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে সে বিষয়ে এখনো কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযুক্ত আয়েশার সাথে বড় কোনো চক্র বা ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ, যারা এই জোড়া খুনের নেপথ্যে রয়েছে।

জানা গেছে, এক সিকিউরিটি গার্ডের মাধ্যমে ঘটনার মাত্র চার দিন আগে আয়েশা ওই বাসায় কাজে যোগ দেয়। তবে ওই গার্ড তার চেহারা দেখতে পারেনি। কারণ কাজে আসা-যাওয়ার সময় আয়েশা বোরখা পরে থাকত। ওই গৃহকর্র্মী কাজে যোগদানের দ্বিতীয় দিন বাসার মেইন গেটের চাবি হারিয়ে যায়। পুলিশের ধারণা, ডুপ্লিকেট চাবি বানাতেই মেইন দরজার চাবি সরিয়ে নেয় আয়শা। তাছাড়া নাম-পরিচয় বিস্তারিত জানতে চাইলে আগুনে পুড়ে তার বাবা-মা মারা গেছে বলে জানিয়েছে। পুলিশের ধারণা, এটিও তার একটি মিথ্যা তথ্য হতে পারে। তার কোনো মোবাইল নম্বর দেয়নি বাড়ির মালিককে। এমনকি অল্প দিন কাজ করায় তার কোনো ছবিও পাওয়া যায়নি। এ সব কিছুতে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন অভিযুক্ত আয়েশা কোনো সাধারণ গৃহকর্মী ছিল না। হাতে গ্লাভস পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মা-মেয়েকে আঘাত করা হয়েছে।

এ দিকে নিহত গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজের স্বামী আজিজুল ইসলাম বাদি হয়ে গৃহকর্মী আয়েশাকে আসামি করে মামলা করেছেন। অভিযুক্তকে গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম গঠন করে অভিযান শুরু করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, সম্পূর্ণ ম্যানুয়ালি তদন্ত করতে হচ্ছে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনাটির। কারণ আয়েশার কোনো ছবি বা মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলের আশপাশের সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

নিহত নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের বাবা আজিজুল ইসলাম জানান, ভবনের তত্ত্বাবধায়ক ও নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে চার দিন আগে ওই গৃহকর্মীকে কাজে নেয়া হয়েছিল। সকালে এসে বাসার কাজ করে চলে যেতেন। এর মধ্যে রোববার বাসার মূল দরজার চাবি হারিয়ে যায়। সন্দেহ হলেও গৃহকর্মীকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি। মেয়েটির পরিচয় ও ফোন নম্বর চাওয়া হলে বলে ‘আগুনে পুড়ে তার মা-বাবা মারা গেছেন। সেও আগুনে দগ্ধ হয়েছিল। এসব বলে পরিচয় ও ফোন নম্বর দেয়নি। তিনি বলেন, ধারণা করেছিলাম কয়েক দিন কাজ করুক তারপর না হয় পরিচয় বা ফোন নম্বর নেয়া যাবে। কিন্তু তার আগেই এত বড় ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে সেটি কল্পনাও করা যায়নি। আজিজুলের গ্রামের বাড়ি নাটোর সদর উপজেলায়। ২০১২ সাল থেকে তিনি পরিবার নিয়ে মোহাম্মদপুরের ওই ভবনটির সপ্তম তলায় নিজের ফ্ল্যাটে থাকতেন।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন বলেন, মামলার আসামি গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ধারণা করা হচ্ছে এ হত্যাকাণ্ডে গৃহকর্মী আয়েশা জড়িত। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক। তবে ওই ভবনসহ আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার পরনে ছিল নিহত নাফিসার স্কুল ড্রেস। ভবনের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নাফিসার বাবা সকাল ৭টার দিকে স্কুলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ওই বাসার লিফটে উঠে সাত তলায় যান গৃহকর্মী আয়েশা। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে কাঁধে স্কুল ব্যাগ নিয়ে ড্রেস পরে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বের হয়ে যান। পুলিশ জানিয়েছে, নাফিসার গলায় একাধিক গভীর ক্ষত এবং লায়লার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাতে গ্লাভস পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মা-মেয়েকে আঘাত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ডিএমপির তেজগাঁও জোনের ডিসি ইবনে মিজান নয়া দিগন্তকে বলেন, ঘটনাটির তদন্তে ইতোমধ্যে একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে। তবে অভিযুক্তের কোনো ধরনের ছবি, প্রকৃত পরিচয় বা মোবাইল নম্বর না থাকায় ম্যানুয়ালি তদন্ত করতে হচ্ছে। তারপরও আশা করা হচ্ছে শিগগিরই অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে চুরির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিলেও হত্যাকাণ্ডের পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। কারণ অভিযুক্তের টোটাল মুভমেন্ট কোনো সাধারণ গৃহকর্মীর মতো ছিল না।