সিডরের সেই ভয়াল ১৫ নভেম্বর আজ

১৮ বছর আগের এই দিনে সিডর নামক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ভয়াবহ আঘাত হেনেছিল দক্ষিণের উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে। লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল সমগ্র উপকূলকে।

আযাদ আলাউদ্দীন, বরিশাল ব্যুরো
Printed Edition
সিডরে আশ্রয়হীন মানুষেরা অস্থায়ী আবাস নির্মাণ করছেন
সিডরে আশ্রয়হীন মানুষেরা অস্থায়ী আবাস নির্মাণ করছেন |ফাইল ফটো

সিডরের সেই ভয়াল সেই ১৫ নভেম্বর আজ। ২০০৭ সালের দুঃসহ সেই স্মৃতি আজও কাঁদায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় ৩০ জেলার স্বজনহারা মানুষদের।

১৮ বছর আগের এই দিনে সিডর নামক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ভয়াবহ আঘাত হেনেছিল দক্ষিণের উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে। লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল সমগ্র উপকূলকে। ভয়াবহ ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল সাড়ে ৩ হাজার আদম সন্তান। নিখোঁজ হয়েছিল আরো সহস্রাধিক। সে সময়ে বেঁচে যাওয়াদের স্বজন হারানোর স্মৃতি এখনো তাদের বেদনা বিদুর করছে।

সূত্র মতে, সেদিন মুহূর্তের মধ্যেই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় জনপথগুলো মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, মাঠ-ঘাট এমনকি গাছের সাথে ঝুলে ছিল অনেক মানুষের লাশ। দুর্যোগের সেদিন গৃহহীন হয় লাখ লাখ মানুষ।

সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় বরিশাল, বরগুনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলায়। বহু মানুষ তাদের প্রিয়জনের লাশও খুঁজে পায়নি। ঘূর্ণিঝড়ের পর টানা দুই মাস পর্যন্ত স্বজন হারানোদের কান্নায় উপকূলের আকাশ বাতাস ভাড়ি ছিল। অতীতের সবকটি ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে ২০০৭ সালের সিডর নামের ঝড়টি ছিল প্রবল শক্তিশালী।

বরিশালের গৌরনদীর হরিসেনা গ্রামের দুলাল সরদার স্বজন হারানোদের একজন। সেদিনের ভয়াল স্মৃতির বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি এখনো আঁতকে ওঠেন। বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। এরপর মধ্যরাতে শুরু হয় সিডরের তাণ্ডব। মুহূর্তের মধ্যে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পার্শ¦বর্তী হরিসেনা এলাকার সুবিশাল একটি গাছ এসে উপরে পরে আমার বসত ঘরের ওপর। আমি গুরুতর আহত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পরি। দুই দিন পর যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন আমি গৌরনদী হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলাম। এ ঘটনার চার দিন পর জানতে পারি ওইদিন রাতে গাছ চাঁপায় আমার ৭ বছরের আদরের ছেলে শামীম মারা গেছে।

সূত্রে আরো জানা গেছে, সিডরের ভয়াবহতা এতটা নির্মম হবে তা বুঝে উঠতে পারেনি উপকূলের বাসিন্দারা। সিডরের মাত্র কয়েক মাস পূর্বে সুনামির পূর্বাভাস ও তা আঘাত না হানায় সিডর নিয়ে আতঙ্ক ছিল না এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে।

পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার তথ্য মতে, ওই ঝড়ে উপকূলীয় এলাকাসহ ৩০টি জেলায় প্রাণ হারিয়েছিল সাড়ে ৩ হাজার আদম সন্তান। নিখোঁজ হয়েছিল আরো সহস্রাধিক। সরকারি হিসাবে ২০ লাখ ঘরবাড়ি, প্রায় ৪০ লাখ একর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার গবাদি পশুর। এরমধ্যে খুলনা বিভাগের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরায় মারা গেছে ৭০ হাজার গবাদি পশু। বাকি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়।

দিনটিকে স্মরণ রাখতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় আজ শোক পালন ও দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।