ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা, ইশতেহার ঘোষণা, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। এক দিকে বিভিন্ন প্যানেল শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরছে, অন্য দিকে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ ও পাল্টা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্যানেল তাদের ইশতেহার ঘোষণার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিশ্রুতির কথা প্রচার করছে। সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল তাদের ১১ দফার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। এর মধ্যে রয়েছে একাডেমিক মানোন্নয়ন, গণরুম সমস্যার সমাধান, গবেষণা ফান্ড বৃদ্ধি, ক্যারিয়ার উন্নয়ন, নারীবান্ধব ক্যাম্পাস, আবাসন সঙ্কট নিরসন, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা। প্যানেলটি নির্বাচিত হলে প্রথম ৩০ দিনের মধ্যে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রোডম্যাপ তৈরি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালুর মতো যুগোপযোগী পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেয়। অন্য দিকে তাহমিনা আক্তারের নেতৃত্বে ‘বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট’ শুধু ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তাদের ইশতেহারে দলীয় আধিপত্যমুক্ত ক্যাম্পাস, পরীক্ষার ফি বাতিল এবং ছাত্র সংসদ তহবিলের দুই-তৃতীয়াংশ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পেয়েছে।
সম্প্রতি এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করায় অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪ প্যানেলের এক নারী প্রার্থীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘গণধর্ষণের হুমকি’ দেয়ার অভিযোগ কেন্দ্র করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ ও ব্যাখ্যা দিয়েছে। এই হুমকির প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ছাত্রদল নেতারা অভিযোগ করেন, হুমকিদাতাকে এখনো আইনের আওতায় না এনে প্রশাসন নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। এর বিপরীতে, বিকেলে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ এই অভিযোগের ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়। জোটের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ একে ‘দায় চাপানোর রাজনীতি’ বলে অভিহিত করেন এবং দাবি করেন যে, একটি ছবির ওপর ভিত্তি করে হুমকিদাতাকে শিবির হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে আইনি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানান এবং নিজেদের নারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে চলমান সাইবার বুলিংয়ের বিষয়েও অভিযোগ তোলেন। এ ছাড়া ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে এমন অভিযোগ তুলে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর শাখা জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত একটি
উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং হুমকির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ মাহবুব কায়সারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে আপিল বিভাগে শুনানি আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বৃদ্ধি করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। আজ বুধবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আদেশে বলা হয়েছে, আপিল বিভাগের কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে এই শুনানি।
গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব স্থগিতাদেশ বৃদ্ধির এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
এর আগে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করে দেয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছিলেন চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব। হাইকোর্টের আদেশের পর তাৎক্ষণিক হাতে লেখা আবেদনের শুনানি নিয়ে তিনিএ আদেশ দেন। একই সাথে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আপিল বিভাগে আবেদন করতে বলেন চেম্বার আদালত। সে অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে।
সোমবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেন। বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানি নিয়ে উচ্চ আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
হাইকোর্টের আদেশে রিটকারী ও ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমকে জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ডাকসুর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে বলা হয়।