মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম বরুন্ডী সল্পনন্দপুরে চলছে এক অনন্য কৃষি উদ্যোগ। স্থানীয় কৃষক-কৃষাণীদের নিজ হাতে গড়ে ওঠা ‘বরুন্ডী ধান গবেষণা প্লট’ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এখানে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই ৮২ জাতের আমন ধান রোপণ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, যা নিরাপদ কৃষির নতুন সম্ভাবনার পথ খুলে দিচ্ছে। ছোট গ্রামের এই গবেষণা প্লট হয়ে উঠছে নিরাপদ কৃষির সম্ভাবনার নতুন দিশা।
বরুন্ডী কৃষক-কৃষাণী সংগঠনের পরিচালনায় এই গবেষণার উদ্দেশ্য, কোন ধানের জাত এলাকার মাটির সাথে বেশি মানানসই, কোনটি দুর্যোগে টিকে থাকতে পারে এবং কোনটির ফলন সবচেয়ে ভালো তা নির্ধারণ করা। সংগঠনের ১০০ সদস্যের অর্ধেক নারী; কৃষিকাজে নারী-পুরুষ সম-অংশীদারিত্বের এক সুন্দর উদাহরণ তৈরি হয়েছে। উদ্যোগটিকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বারসিক এবং সরকারি কৃষি বিভাগ।
মাত্র ২৭ শতক জমিতে তৈরি গবেষণা প্লটে কোনো রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়নি। মেহগনি ফল, নিমপাতা, গাছের ছাল ও ন্যাপথলিন গুঁড়া করে তৈরি প্রাকৃতিক বালাইনাশক নিয়মিত ¯েপ্র করা হচ্ছে। সার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ১০০ ভাগ জৈবসার। ফলে গ্রামের মধ্যেই তৈরি হয়েছে এক বাস্তব কৃষি গবেষণাগার।
মঙ্গলবার কৃষক গুরুদাস রায়ের বাড়িতে অনুষ্ঠিত ‘মাঠ দিবস ও নবান্ন উৎসবে’ অতিথিরা গবেষণা প্লটে থাকা বিভিন্ন জাতের ধান পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাহজাহান সিরাজ। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি বৈদ্যনাথ সরকার। আলোচনায় ছিলেন বারসিকের জেলা সমন্বয়ক বিমল রায়।
এ ছাড়া কৃষি গবেষক শিমুল কুমার বিশ্বাস, মুকতার হোসেন, সত্য রঞ্জন সাহা, নারগিস আক্তারসহ দেড় শতাধিক কৃষক-কৃষাণী উপস্থিত ছিলেন। কৃষক গুরুদাস সরকার ও অন্যরা বলেন, কোন বছর কোন জাত নষ্ট হয়, কোনটি টেকে, তা জানতে এই গবেষণা। উপ-পরিচালক শাহজাহান সিরাজ বলেন, কৃষকরাই বড় বিজ্ঞানী। তাদের এই গবেষণা স্থানীয় জাত সংরক্ষণে বড় ভূমিকা রাখবে। গবেষণা প্লটে রয়েছে কাজলশাইল, চাপশাইল, বালাম, রূপকথা, যশোদা, গঙ্গাশাইল, সুগার জামাই, হাতিরজর, তালমুগুরসহ প্রায় বিলুপ্তপ্রায় অসংখ্য স্থানীয় জাত। কৃষকদের লক্ষ্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন। বারসিকের বিমল রায় বলেন, এ গবেষণা শুধু ফলন পরীক্ষা নয়; হারিয়ে যাওয়া স্থানীয় ধানের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারেরও সুযোগ করে দিচ্ছেন কৃষকরা।



