আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণের বৈধতা দেন শেখ হাসিনা

ট্রাইব্যুনালে নাহিদ ইসলামের জবানবন্দী

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৪৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এনসিপির এই আহ্বায়ক।

নিজস্ব প্রতিবেদক

Location :

Dhaka City
Printed Edition

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো: নাহিদ ইসলাম দাবি করেছেন, ২০২৪ সালের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়নের বৈধতা তৈরি করেছিল।

গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে দেয়া জবানবন্দীতে এ কথা জানান তিনি। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৪৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এনসিপির এই আহ্বায়ক।

জবানবন্দীর একপর্যায়ে নাহিদ বলেন, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করি। ওই দিন রাতে শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদেরকে রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি অভিহিত করে কোটা প্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। মূলত এ বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণের একটি বৈধতা প্রদান করা হয়।

এ দিন বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে ডায়াসে উঠে জবানবন্দী দেয়া শুরু করেন নাহিদ ইসলাম। নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। আমি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১ নং সমন্বয়ক ছিলাম। ২০১৮ সালে আমি প্রথম কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে যুক্ত হই। ওই কোটা সংস্কারের জন্য একটি বড় ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল ওই আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ ও ছাত্রলীগ শাহবাগ এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ছাত্রলীগ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে গিয়ে আক্রমণ করে।

এ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন আরো তীব্র হয় উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, আন্দোলনের একপর্যায়ে শেখ হাসিনা সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। যদিও আমরা চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার, তবে সরকার কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বাতিল করে। তবুও আমরা এটিকে আপাতত মীমাংসা হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। এই ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও এই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের গ্রেফতার শুরু করে এবং ছাত্রলীগ তাদের উপর হামলা করে। পরবর্তীতে সরকার কোটা বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করে। পরবর্তীতে সরকারের আচরণে আমরা বুঝতে পারি যে, সরকার আন্দোলন দমনের জন্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কোটা বাতিল চায়নি। কিছু দিন পর শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন যে, আমি রাগের বশবর্তী হয়ে কোটা বাতিলের কথা বলেছি। আমরা ইতোমধ্যেই আশঙ্কা করেছিলাম যে, কোটা প্রথা আবার ফিরে আসতে পারে। ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়। আমি সে নির্বাচনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। নির্বাচনে অনিয়মের মাধ্যমে আমাদেরকে জিততে দেয়া হয়নি। বেশির ভাগ পদে ছাত্রলীগকে জিতিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের গণরুম-গেস্টরুম নির্যাতন কালচারসহ অন্যান্য অনিয়ম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হই।

এটিকে (আন্দোলন) আরো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নতুন ছাত্র সংগঠন তৈরি করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৩ সালে আমরা ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামে একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করা এবং বিভিন্ন অনিয়ম দূর করাই ছিল এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য। একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ৫ জুন ২০২৪ তারিখে সরকারের কোটা বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলপূর্বক কোটা প্রথা পুনর্বহাল করেন। ওই তারিখেই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করি। পরবর্তীতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এই রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়। আমরা হাইকোর্টের উক্ত রায়টি স্থগিত চেয়ে এটর্নি জেনারেলকে স্মারকলিপি প্রদান করি। সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে কোটা সংস্কারসংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করার জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। ৩০ জুনের মধ্যে সরকার কোনোরূপ সাড়া না দেয়ায় আমরা ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০১৮ সালে জারিকৃত পরিপত্র পুনর্বহালপূর্বক কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে আন্দোলন শুরু করি। ২, ৩, ৪ জুলাই আমাদের আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচি ছিল। ৪ জুলাই আপিল বিভাগে কোটাসংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি ও আদেশ প্রদানের কথা থাকলেও সেদিন কোনো শুনানি হয়নি। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন বিধায় সরকারের কিছু করার নেই। কোনো বক্তব্য থাকলে তা আদালতে গিয়ে বলতে বলা হয়। তখন আমরা জানতাম বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে এবং বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সরকার পরিকল্পিতভাবে কোটা প্রথা পুনর্বহাল করে। সে কারণে আদালতে না গিয়ে রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রাখি। আন্দোলন তীব্রতর করার লক্ষ্যে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে ৭ জুলাই সারা দেশে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করি। সারা দেশের শিক্ষার্থীরা আমাদের কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ১০ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত না করে ১ মাসের স্থিতাবস্থার আদেশ জারি করে। আমরা এতে হতাশ হই এবং নিশ্চিত হই যে, বিচার বিভাগ থেকে এ বিষয়ে কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না। অতঃপর আমাদের দাবি কিছুটা পরিবর্তন করে সরকারি চাকরিতে সব পর্যায়ে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কার দাবি করি। আন্দোলনের এ পর্যায়ে আমরা বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হই। আমরা কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর গেটগুলো ছাত্রলীগ বন্ধ করে দেয় যাতে ছাত্ররা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। আমাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দেয়া হয়। সারা দেশেই এ ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। তবুও সকল বাধা অতিক্রম করে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখি। সারা দেশের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করি।

১৪ জুলাই ২০২৪ তারিখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করি। ১৪ জুলাই রাতে শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদেরকে রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি অভিহিত করে কোটা প্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। মূলত এই বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণের একটি বৈধতা প্রদান করা হয়। কারণ আমরা সবসময় দেখেছি, সরকারের বিরুদ্ধে কোন ন্যায্য আন্দোলন করা হলে তাদেরকে রাজাকার আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের ন্যায্যতা নস্যাৎ করা হতো। ছাত্রদেরকে রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যায়িত করায় সমগ্র দেশের ছাত্রছাত্রীরা অপমানিত বোধ করে।

এরপরই সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পরে বলে মন্তব্য করেছেন নাহিদ।

তিনি বলেন, সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল উক্তরূপ বক্তব্য প্রত্যাহারপূর্বক আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের কাছে শেখ হাসিনাকে ক্ষমা চাইতে হবে। ১৫ জুলাই আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিই। একই দিন ছাত্রলীগ পাল্টা কর্মসূচির ডাক দেয়। সে দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন যে, আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। তার এই ঘোষণায় উজ্জিবিত হয়ে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। নারী শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হয় কারণ তারা আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে ছিলেন। হামলাকারীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শয়ন, সাধারণ সম্পাদক সৈকত এই হামলায় নেতৃত্বদান করে। তারা বাইর থেকেও সন্ত্রাসীদের এনে জড়ো করেছিল। এ হামলায় বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রছাত্রীদের ওপরও তারা নির্যাতন চালায় এবং চিকিৎসা প্রদানে বাধা দেয়।

১৬ জুলাই এই হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেই। এই তারিখে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। চট্টগ্রামে ওয়াসিমসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ছয়জন ওই দিন আন্দোলনে শহীদ হন। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৭ জুলাই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা দেই। তৎপ্রেক্ষিতে ইউজিসি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয়। সে দিন যাত্রাবাড়ীতে একজন আন্দোলনকারীকে হত্যা করা হয়। সে দিন বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করে ফেলে। গায়েবানা জানাজা শেষে কফিন মিছিল শুরু করলে পুলিশ মিছিলের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশ আমাদেরকে হলো ত্যাগের নির্দেশ দেয়। সে দিন ডিজিএফআই আমাদেরকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করার এবং সরকারের সাথে সংলাপের জন্য চাপ দেয়। হলের বিদ্যুৎ, পানি ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকারের সাথে সংলাপে আমরা অস্বীকৃতি জানাই এবং বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবি জানাই। ১৭ জুলাই রাতে দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করি। আমাদের ভাইবোনদের হত্যা করা হয়েছে বিধায় আমরা সারা দেশের সব শিক্ষার্থী এবং সর্বস্তরের জনগণকে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান জানাই। আমাদের ঘোষণার প্রেক্ষিতে ১৮ জুলাই সারা দেশের সর্বস্তরের ছাত্র জনতা রাস্তায় নেমে আসে। বিশেষত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা সে দিন রাজপথে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আমরা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জীবনের হুমকির মুখে পড়ি এবং গ্রেফতার এড়াতে আমরা আত্মগোপনে চলে যাই। সে দিন সারা দেশে অনেক ছাত্রজনতা আহত ও নিহত হয়। সে দিন রাতে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়। একইভাবে ১৯ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপরে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে অনেক ছাত্র-জনতা আহত ও নিহত হয়। ১৯ জুলাই আমরা বুঝতে পারি যে, সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। আমাদের আন্দোলনের এবং আহত ও নিহতদের কোনো খবর কোনো মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছিল না।

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলামকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এ সময় তিনি বলেন, অনেক মিডিয়া হয়তো এর বাইরে ছিল বা চেষ্টা করেছে। আমরা পরবর্তী সময়ে এসব শুনতে পেয়েছি। কিন্তু ১৮ বা ১৯ জুলাই আমরা এসব দেখতে পাইনি। মিডিয়া বারবার দেখাচ্ছিল আন্দোলন স্থগিত হবে, সরকারের সাথে বসবে; এমন নানা বিভ্রান্তিমূলক তথ্যে শিরোনাম করা হয়েছিল। আমরা মিডিয়া বা সাংবাদিকদের কাছে যে তথ্য পাওয়ার আশায় ছিলাম কিংবা এত হত্যাযজ্ঞ চলছে, তা টেলিভিশনে আসছিল না। সেই প্রেক্ষাপট থেকে বলেছি মিডিয়াকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে সরকার।

এ দিন বেলা ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নাহিদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। তবে শেষ না হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তা মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। সাথে ছিলেন প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা। এ ছাড়া শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো: আমির হোসেন।

এ দিকে গতকাল সকালেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার অন্যতম আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দী দেয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাাহ আল-মামুনকে। তার উপস্থিতিতেই জবানবন্দী দিচ্ছেন সাক্ষীরা।