আমেরিকাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সোমবার প্রকাশিত এক জরিপ অনুসারে, আগামী সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, ৩৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে তারা বিএনপিকে ভোট দেবেন, জামায়াতে ইসলামীকে প্রায় ২৯ শতাংশ ভোট দেবে। গত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে ৬৩টি জেলার ৪,৯৮৫ জন উত্তরদাতা জরিপে অংশ নিয়েছেন।
আইআরআই-এর সেন্টার ফর ইনসাইটস ইন সার্ভে রিসার্চও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে ছয় শতাংশ ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিকে, পাঁচ শতাংশ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে এবং চার শতাংশ জাতীয় পার্টিকে ভোট দেবেন। ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর ইনসাইটস ইন সার্ভে রিসার্চের পক্ষে জরিপটি পরিচালনা করেছে একটি স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ২০২৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সাক্ষাৎকার নেয়া হয় সিএপিআই পদ্ধতিতে সরাসরি উপস্থিত হয়ে।
জরিপে ১১ শতাংশ উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, সাত শতাংশ বলেছেন যে তারা জানেন না এবং দুই শতাংশ বলেছেন যে তারা ভোট দেবেন না। জরিপে আরো প্রকাশিত হয়েছে যে ৪১ শতাংশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতের পক্ষে জোরালোভাবে সমর্থন করেন, যেখানে ২৮ শতাংশ কিছুটা সমর্থন করেন। বিপরীতে, ১৬ শতাংশ ভোট স্থগিতের তীব্র বিরোধিতা করেছেন এবং ১১ শতাংশ কিছুটা হলেও এর বিরোধিতা করেছেন।
আইআরআই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনের প্রতি উৎসাহ বেশি বলে মনে হচ্ছে। ৪,৯৮৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক উত্তরদাতার মধ্যে ৬৬ শতাংশ বলেছেন যে তাদের ভোট দেয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি, অন্য দিকে ২৩ শতাংশ বলেছেন যে তারা কিছুটা অংশগ্রহণ করবেন। তা ছাড়া ৮০ শতাংশ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। একই সময়ে, ৬৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে অতীতের নির্বাচনগুলোতে কারচুপি করা হয়েছে।
সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে ৬৩টি জেলায় পরিচালিত সর্বশেষ জাতীয় জরিপে আরো দেখা গেছে যে ৭২ শতাংশ উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন যে দেশের গণতন্ত্রের অবস্থা ভালো বা কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে, যেখানে ২৬ শতাংশ বলেছেন যে এটি খারাপ বা কিছুটা খারাপ অবস্থায় আছে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে, আরেক জরিপে ৫০ শতাংশ বলেছিলেন যে গণতন্ত্র ভালো বা কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে, যেখানে ৪৫ শতাংশ বলেছিলেন যে এটি খারাপ বা কিছুটা খারাপ অবস্থায় আছে। রাজনৈতিক মত প্রকাশের ক্ষেত্রে, ২৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে তারা তাদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে স্বাধীন বোধ করেন, যেখানে ৩৪ শতাংশ কিছুটা স্বাধীন বোধ করেন।
তবে ৩৫ শতাংশ রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের সময় কিছুটা বা খুব ভয় পান বলে জানিয়েছেন। জরিপে রাজনীতিতে ধর্মের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে। উত্তরদাতাদের অর্ধেক বলেছেন যে গত এক বছরে রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। উনিশ শতাংশ বলেছেন যে এটি উল্লেখযোগ্যভাবে বা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, যেখানে ছয় শতাংশ কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছেন।
আইআরআই’র এশিয়া-প্যাসিফিকের সিনিয়র পরিচালক জোহানা কাও বলেন, বাংলাদেশীরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মক্ষমতার প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করেছেন। ৬৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে ইউনূস ভালো কাজ করছেন, অন্য দিকে ৭০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একই অনুমোদন দিয়েছেন। এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশীরা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছেন, তার এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তাদের আস্থা স্থিতিশীলতা, জবাবদিহিতা ও সংস্কারের জন্য ব্যাপক আকাক্সক্ষাকে প্রতিফলিত করে। কাও আরো বলেন, বাংলাদেশীরা সংস্কার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার এবং নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার গুরুত্ব তুলে ধরে।
এই জরিপে ৪ হাজার ৯৮৫ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়, যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি। বাংলাদেশের আটটি বিভাগের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাঙ্গামাটি জেলা থেকে কোনো নমুনা বাছাই করা হয়নি। জরিপকারীদের দাবি, এই জরিপের আস্থার পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। তবে আরো নিশ্চয়তার ভিত্তিতে ১ দশমিক ৪ শতাংশ এদিক-সেদিক হতে পারে।
জরিপ অনুসারে, একই শর্তে, অর্থাৎ আগামী সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ভোট দেবেন ৬ শতাংশ ভোটার। জাতীয় পার্টিকে ভোট দেবেন ৫ শতাংশ ভোটার এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে ভোট দেবেন ৪ শতাংশ ভোটার। এবং অন্যান্য দলকে ভোট দেবেন ৮ শতাংশ ভোটার।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জরিপ অনুসারে সমর্থন বিচারে প্রধান দুই দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ব্যবধান কম থাকায় ছোট দলগুলো ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। বিশেষ করে এনসিপি, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে যেকোনো এক দিকে নির্বাচনী জোটের পাল্লা ভারী করে দেয়ার সুযোগ আছে। তবে ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট সিস্টেম, অর্থাৎ যে বেশি ভোট পাবে সে জিতবে পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়ায় অনেক সময় জনসমর্থন কাছাকাছি হলেও কোনো একটি দল নির্বাচনে বেশি আসন লাভ করতে পারে।
আইআরআই জরিপে জামায়াত ও বিএনপির ভোটের পার্থক্য ৪%। চরমোনাইর ৪% যোগ করলে ভোটের পারসেন্টেজ সমান সমান হয়ে যায়। জামায়াতের সাথে আট দলের জোট কনফার্ম হলে সিনারজিক ইফেক্টে জামায়াতের ভোট বাড়বে। এনসিপি জামায়াতের সাথে গেলে জামায়াতের ভোট বাড়বে নিশ্চিত। কিন্তু এনসিপি বিএনপির সাথে গেলে এতদিন ‘চাঁদাবাজ’ বলা পোলাপান কি বিএনপিকে আদৌ ভোট দেবে? এনসিপির মিড লেভেল ও রুট লেভেল বিএনপিবিরোধী!



