- মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা চলছে
- এভারকেয়ারে লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসক
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি কিংবা অবনতি কোনোটিই হয়নি। চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরা ডাক দিলে কিছুটা সাড়া দেয়ার চেষ্টা করছেন মাত্র।
ফুসফুসে স্বাভাবিকভাবে বাতাস চলাচল করানোর জন্য তাকে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিডনি কার্যক্রম সচল রাখতে ডায়ালাইসিস করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য বিশিষ্ট হেমাটোলজিস্ট অধ্যাপক ডা: নুরুদ্দীন আহমদ গতকাল বিকেলে বলেছেন, ম্যাডামের অবস্থা অপরিবর্তিত। আগের মতোই আছেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আগের মতোই। উন্নতি অবনতি কোনোটাই বলা যাচ্ছে না।
এ দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তার পরিবারের সদস্য ও দলের শীর্ষ নেতারা। তবে বর্তমান শারীরিক অবস্থার কারণে তাকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করার বিষয়ে সংশয় কাটাতে পারছেন না চিকিৎসকরা। চিকিৎসা সংক্রান্ত এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই চীন ও যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দু’টি দল ঢাকায় এসে হাসপাতালে খালেদা জিয়ার অবস্থা সরেজমিন যাচাই করছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কিছুই জানাননি। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে গতকাল বুধবার দুপুরে হাসপাতালে যান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। পরে তার এক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান, ম্যাডাম (ফরিদা আখতার) বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখতে গিয়েছিলেন। উনি সিসিইউর ভিতরে গিয়েছিলেন। উনার সাথে বিএনপি চেয়ারপারসন রেসপন্স করেছেন। ইশারায় সালামের জবাব দিয়েছেন।
তিনি জানান, বুধবার বেলা ১টা ৩৮ মিনিটে খালেদা জিয়ার শারীরিক খোঁজখবর নেয়ার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এভারকেয়ার হাসপাতালে আসেন। বেলা ১টা ৫০ মিনিটে তিনি বের হয়ে আসেন। এই সময় খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন।
মেডিক্যাল বোর্ডের আরেক চিকিৎসক জানিয়েছেন, ম্যাডামের অবস্থা স্থিতিশীল আছে। কিছুটা রেসপন্স করছেন। চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরা ডাক দিলে কিছুটা সাড়া দেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এটাকে আশানুরূপ উন্নতি বলা যাচ্ছে না। তার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটার ওঠানামা করছে।
তিনি জানান, প্রতি রাতেই ঘণ্টাদেড়েক বৈঠক করে বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিক্যাল বোর্ড। যেখানে দেশী-বিদেশী অন্তত দেড় ডজন চিকিৎসক যুক্ত হন। লন্ডন ক্লিনিকের বিখ্যাত চিকিৎসকরাও যুক্ত হন। যাদের অধীনে খালেদা জিয়া লন্ডনে মাসব্যাপী চিকিৎসা নিয়েছেন। ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকেন ছেলে তারেক রহমান, ছেলের বউ ডা: জুবাইদা রহমান। বৈঠকের পর নতুন করে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয় পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে চিকিৎসায় পরিবর্তন আনা হয়। এভাবেই চলছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা। আশানুরূপ উন্নতি না হলে বিদেশে নেয়ার সিদ্ধান্ত হবে না।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে গতকাল বুধবার রাত ৭টার পর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
হাসপাতালে পৌঁছলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা: এ জে এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা: শাহাবুদ্দিন তালুকদার, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান এবং ছোট ভাই শামীম এসকান্দার প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান
প্রধান উপদেষ্টা প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি বেগম জিয়ার পরিবার ও দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান।
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তার চিকিৎসক দল প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই ও জনস হপকিন্স এবং যুক্তরাজ্য ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধান ও সহায়তায় বেগম জিয়ার চিকিৎসা চলছে।
এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।
একই সাথে তিনি দেশবাসীর কাছে বেগম খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানান। হাসপাতাল পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সাথে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল ঢাকায় : খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সহায়তায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল ঢাকায় এসেছেন। বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। ঢাকায় নেমে তিনি প্রথমে একটি হোটেলে যান, পরে দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের যুক্ত হওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গত ২৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। সেদিন রাতে প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়। সেই থেকে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। ২৭ নভেম্বর তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিয়ে নিবিড় চিকিৎসা দিচ্ছে মেডিক্যাল বোর্ড। দেশী-বিদেশী চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চলছে তার চিকিৎসা। এভারকেয়ার হাসপাতাল বলছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সাথে চীনের ১০ সদস্যের একটি চিকিৎসক টিমও কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কাতার, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ভারত ইতোমধ্যে চিকিৎসা সহায়তার হাত বাড়িয়েছে বলে অধ্যাপক জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারে গত মঙ্গলবার তিনি বলেছিলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখার পরবর্তীতে উনাকে (খালেদা জিয়া) যদি ট্রান্সফারেবল হয়, আমাদের যদি ট্রান্সফার করার প্রয়োজন পড়ে, মেডিক্যাল বোর্ড মনে করে, তখনই সেই যথাযথ সময়ে ওনাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই সাথে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে কোনো ধরনের গুজব ছড়ানো এবং গুজবে কান না দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। উন্নত চিকিৎসার জন্য এর আগে গত জানুয়ারিতে লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে প্রথমে হাসপাতালে এবং পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। প্রায় চার মাস লন্ডনে অবস্থানের পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেয়া হয়।
কবে ফিরবেন তারেক রহমান : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার গুঞ্জন ক্রমেই বাড়ছে। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ বলেন, তারেক রহমান তার মায়ের শারীরিক অবস্থাসহ সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণে রাখছেন। তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন। তবে চূড়ান্ত কোনো তারিখ ঠিক হয়নি। দুই দিন আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও প্রায় একই কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার মতো শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিবেন। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।



