ফলাফল বিপর্যয়ে শিক্ষার্থী না পাওয়ার শঙ্কায় নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলো

হামিম উল কবির
Printed Edition

‘ফলাফল বিপর্যয়ে আশানুরূপ শিক্ষার্থী ভর্তি হবে না’ এই আশঙ্কায় প্রমাদ গুনছে বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলো। নির্ধারিত আসনের বিপরীতে এক-পঞ্চমাংশ শিক্ষার্থীও পাস করেনি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে। প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী না পেলে প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসান গুনতে বাধ্য হবে এই আশঙ্কায় রয়েছে। ফলে আগে-ভাগেই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা শুরু করেছে। নার্সিং কলেজগুলোর প্রধানরা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কঠিন হয়েছে বলে জানান। গত বছরের জুলাই আন্দোলনসহ ভর্তি পরীক্ষার আগে প্রায় ৪০ দিন নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলো বন্ধ থাকা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত নার্সিং-বিরোধী নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর কারণে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটেছে বলে কলেজপ্রধানরা বলছেন।

সবচেয়ে বড়ো বিপর্যয়টা ছিল জুলাই আন্দোলনের সময়ে। শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচার তাড়ানোর আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হওয়ায় এখনো অনেকেই মানসিক ট্রমায় ভুগছেন। ফলে খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী হওয়ার পরও নার্সিংয়ের মতো পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে এমন উদাহরণ অনেক। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই মানসিক ট্রমার সাথে শারীরিক সমস্যাতেও ভুগছে। পুলিশের নির্দয় আচরণ এবং শারীরিকভাবে আক্রান্ত হওয়ায় পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারেনি অনেক শিক্ষার্থী।

ইনস্টিটিউট প্রধানরা বলছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, স্টাফসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। ফলে প্রয়োজনীয় অর্থ আয় ও ব্যয় করতে না পারলে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ব্যয় বহন করা সম্ভব হবে না। এ রকম চলতে থাকলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে পারে। এমতাবস্থায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে নতুন করে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এ বিষয়ে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দেয়া শুরু করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো নার্সিং প্রতিষ্ঠানের প্রধানের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদকের কাছে এমন এক ডজনেরও বেশি চিঠি রয়েছে, যারা তারা তাদের প্রতিষ্ঠান সচল রাখতে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চেয়েছেন। তারা বলছেন, এবার নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অন্যান্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কঠিন হয়েছে বলে পাসের হার একেবারেই কম।

যশোরের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রধানের চিঠি থেকে দেখা যায় যে, তার প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং কোর্সে ৭০ আসনের বিপরীতে পাস করেছে মাত্র ১২ জন। রংপুরের একটি নার্সিং প্রতিষ্ঠানে ৪০ আসনের বিপরীতে পাঁচজন কৃতকার্য হয়েছে। পটুয়াখালীর একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন নার্সিংয়ে ৪০ আসনের বিপরীতে ১০ জন শিক্ষার্থী পেয়েছে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ৪০ আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে আটজন। আবার বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সে শিক্ষার্থী আরো কম পাওয়া গেছে অথবা কম কৃতকার্য হয়েছে।

জানা গেছে, সমস্যাটি কেবল বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোর ক্ষেত্রে ঘটেছে। ইতোমধ্যে সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে চলতি মাসের ২২ তারিখ থেকে ক্লাস শুরুর ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। গত ২৯ মে থেকে প্রাইভেটে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও তারা শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। ফলে বেসরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠান প্রধানরা তাদের মোট আসন পূরণ করতে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। সবার প্রস্তাব প্রায় একই রকম। তারা দাবি জানিয়েছেন, পরীক্ষা কঠিন হওয়ায় প্রতিটি অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীকে ২০ নম্বর যোগ করে দেয়া হলে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসন পূরণ করতে পারবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার হালিমা খাতুন গতকাল সোমবার বিকেলে জানিয়েছেন, প্রাইভেট নার্সিং ইনস্টিটিউটে যে পরীক্ষা হয়েছে সেগুলোর সব প্রশ্ন বই থেকেই করা হয়েছে, সিলেবাসের মধ্যেই ছিল। বাইরে থেকে করা হয়নি। তা ছাড়া বেসরকারি ইনস্টিটিউটগুলোরতো আরো সময় রয়েছে। এখনো সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে মাইগ্রেশন প্রক্রিয়াটিই শেষ হয়নি। অপেক্ষা করার সময় চলে যায়নি। তিনটি মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর কিছু শিক্ষার্থী তারা এমনিতেই পেয়ে যাবেন। এ জন্য কমপক্ষে এক মাস সময় লাগবে। সে সময়ের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।