আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করার কাজে হাত দিয়েছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের ইশতেহার গঠিত হবে বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা, জুলাই সনদ এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার সমন্বয়ে।
নির্বাচনী শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ, মানবাধিকার রক্ষা ও দুর্নীতিবিরোধী কাঠামো শক্তিশালীকরণ ইশতেহারের কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, জনগণকে রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়া এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলাই হবে বিএনপির অঙ্গীকার।
জানা গেছে, গত সোমবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনের ইশতেহার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইশতেহারে এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কি কি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে তা নিয়ে নেতারা মতামত দিয়েছেন।
৩১ দফা ও জুলাই সনদের প্রতিফলন : ইশতেহারে বিএনপির ৩১ দফার মূল বিষয়- অবাধ নির্বাচন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোট, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, বাকস্বাধীনতা, স্বচ্ছ প্রশাসন এবং জাতীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বিশদভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া জুলাই সনদের আলোকে নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা দেয়ার পরিকল্পনাও ইশতেহারে গুরুত্ব পাবে।
শ্রেণীভিত্তিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রচারণায় নামবে বিএনপি : দলীয় কৌশল অনুযায়ী এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশাকে আলাদাভাবে টার্গেট করবে। এ তালিকায় রয়েছে আলেম-ওলামা, হিন্দু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, যুবক, কৃষক, নারী ও বৃদ্ধরা।
দলটির ইশতেহারে কওমি মাদরাসা উন্নয়ন, ইসলামিক গবেষণা তহবিল গঠন, ধর্মীয় শিক্ষার আধুনিকায় ও ধর্মচর্চার বাধাহীন পরিবেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার থাকবে। সাম্প্রতিক এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, আলেম-ওলামার সম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব; তারা জাতীয় ঐক্যের অংশীদার।
ইশতেহারে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল রোধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, নিরাপত্তা সেল, উৎসবে রাষ্ট্রীয় সহায়তা এবং সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে কঠোর কার্যক্রম চালুর প্রতিশ্রুতি যুক্ত হবে। তারেক রহমান সাম্প্রতিক এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে রাষ্ট্রের ভিত্তিই দুর্বল হয়ে পড়ে।
যুব সমাজকে টার্গেট করে বিএনপি বড় পরিসরে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি যুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে এক কোটি নতুন চাকরি, স্টার্টআপ ফান্ড, আইটি প্রশিক্ষণ, বিদেশে নতুন শ্রমবাজার ও মাদকবিরোধী টাস্কফোর্স। তারেক রহমানের ভাষায়, নতুন বাংলাদেশ গড়বে যুবসমাজ; চাকরির সঙ্কট নয়, দক্ষতার ভিত্তিতে বৈশ্বিক সুযোগ সৃষ্টি করবে বিএনপি। কৃষককে গুরুত্ব দিয়ে ইশতেহার তৈরি করা হবে। এর মধ্যে কৃষি উপকরণের দাম কমানো, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, কৃষিঋণ সহজ করা এবং ধান-চাল কেনার স্বচ্ছ ব্যবস্থা। তারেক রহমান সম্প্রতি বলেছেন, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফসল বিক্রি করবে- এটা আর হবে না।
নারী নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ, নারী উদ্যোক্তা তহবিল, মাতৃত্বকালীন ভাতা বৃদ্ধি এবং সহিংসতা প্রতিরোধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল- এগুলোও ইশতেহারের অংশ হচ্ছে।
ইশতেহারে ফ্যামিলি কার্ড, বৃদ্ধ ভাতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি শক্তিশালী করার অঙ্গীকারও যুক্ত হবে।
তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যই মূল দিকনির্দেশনা
লন্ডন থেকে ভিডিও বার্তা, ভার্চুয়াল আলোচনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারেক রহমান নিয়মিতই গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের কথা তুলে ধরছেন। তার বক্তব্যে দলীয় রাষ্ট্রের অবসান, গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম ও জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা- এসব বিষয়ই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। দলীয় সূত্র বলছে, এসব দিকই ইশতেহারের চূড়ান্ত ভাষায় প্রতিফলিত হবে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তফসিলের পর একটি বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইশতেহার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
নেতারা আশা করছেন, ৩১ দফা, জুলাই সনদ ও টার্গেট গ্রুপভিত্তিক প্রতিশ্রুতি- এ তিনের সমন্বিত ইশতেহার তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন গতি এনে দেবে।



