মারদিয়া মমতাজ

ফ্যাসিস্টের কাছে নারী পুরুষের পার্থক্য নাই

ডাক্তারি পড়তে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করতে চেয়েছিলেন বাবা। কিন্তু অবগুণ্ঠনে থেকেও ইসলাম নারীকে যে মর্যাদা দিয়েছে এবং পুরুষের মতো প্রয়োজনে সব কাজে অংশগ্রহণের যে সুযোগ দিয়েছে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দেখিয়েছেন তিনি। সামাজিক আন্দোলন থেকে শুরু করে নির্যাতিতা নারীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। শিক্ষকতা করছেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঘরসংসার সামলানোর কাজ সমান তালে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। ইদানীং টেলিভিশন টকশোতে জটিল প্রশ্নের সহজ সরল অথচ সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে অযথা বিরক্তিকর বিতর্কে না জড়িয়ে অনেকের মন জয় করছেন।

রাশিদুল ইসলাম
Printed Edition

পেশায় প্রকৌশলী মারদিয়া মমতাজ। বুয়েটে যখন ভর্তি হতে চেয়েছিলেন আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে অনেকেই বাদ সেধেছিলেন যে ইট, কাঠ, পাথর আর মাপজোখ করা নারীর কাজ নয়। মেয়েকে ডাক্তারি পড়তে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করতে চেয়েছিলেন বাবা। কিন্তু অবগুণ্ঠনে থেকেও ইসলাম নারীকে যে মর্যাদা দিয়েছে এবং পুরুষের মতো প্রয়োজনে সব কাজে অংশগ্রহণের যে সুযোগ দিয়েছে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দেখিয়েছেন তিনি। সামাজিক আন্দোলন থেকে শুরু করে নির্যাতিতা নারীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। শিক্ষকতা করছেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঘরসংসার সামলানোর কাজ সমান তালে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। ইদানীং টেলিভিশন টকশোতে জটিল প্রশ্নের সহজ সরল অথচ সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে অযথা বিরক্তিকর বিতর্কে না জড়িয়ে অনেকের মন জয় করছেন। নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনে নারী কতটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আগামী দিনে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে তার বিস্তারিত বলেছেন। সেদিক থেকে এ সাক্ষাৎকারটি একটি ভিন্ন আমেজের মনে হলেও তা উন্মোচন করেছে নীরবে নিভৃতে বাংলাদেশের নারীদের একটা বিশাল অংশ এখন কিভাবে ঘর ও বাইরে পুরুষের পাশাপাশি সামাজিক চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছেন।

নয়া দিগন্ত : রাজনৈতিক পরিবর্তন নারীর জীবনে কী প্রভাব ফেলছে? সামাজিক নিরাপত্তাও তো তার জীবনে এক বড় চ্যালেঞ্জ, এ পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করছে সে?

মারদিয়া মমতাজ : এ পরিস্থিতি আসলে লম্বা এক শাসনামলের ফল। স্বৈরশাসনের সময় পুরুষের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেশি ছিল তাই বেশ কিছু ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছিলেন। বিশেষ করে যারা জেলে ছিলেন, অ্যারেস্ট করার পরও অ্যারেস্ট দেখানো হচ্ছে না বা বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাসার পুরুষ সদস্যের খোঁজ খবর নিতে নারীরা গিয়েছেন কারণ পরিবারের অন্য পুরুষ সদস্যদেরও গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। মামলাগুলো পরিচালনা করা, আদালতে আসা-যাওয়ায় নারীদের একটা বিশাল অংশ জড়িত ছিলেন। শহীদ মীর কাসেম আলীর পরিবার, শহীদ কাদের মোল্লার পরিবার কিংবা তুলি আপাকে চিনি মায়ের ডাকের, এ ধরনের কাজে বেশির ভাগ মহিলাই ছিলেন, তারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। দুঃশাসনের মধ্যে তারা কাজ করেছেন। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তনের একটা চেহারা দেখতে পেলাম। নারীর অবস্থানে একটা ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করছি। মিডিয়াতেও ৫ আগস্টের আগেও নারীদের একটা সরব উপস্থিতি ছিল। বিএনপির নিলুফার মনি আপা, শাম্মি আপা ওনাদের সাথে কথা বলেছি, এরকমও হয়েছে যে একটা টকশোতে যাওয়ার জন্য তিন-চারবার গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়েছে। কোনো জায়গায় যেয়ে হয়তো বেসমেন্টে নামতে হয়েছে। সরাসরি বিল্ডিংয়ের গ্যারেজে নামা রিস্ক ছিল। রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বা এ ধরনের কাজগুলো মহিলারা এগিয়ে নিয়ে গেছে।

নয়া দিগন্ত : নারীর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ আগে থেকেই ছিল?

মারদিয়া মমতাজ : হ্যাঁ অবশ্যই। জামায়াতের কথা যদি বলি, ঘরোয়া বৈঠক থেকে মহিলাদের অ্যারেস্ট করা হয়েছে। মগবাজার থেকে ২০ জন মহিলাকে অ্যারেস্ট করা হয়, তাদের সাথে মিসেস কাদের মোল্লাও ছিলেন, শ্যামলীর আরেকটি বাসা থেকে ২০ জনকে অ্যারেস্ট করা হয়। বিভিন্ন সময় পুরুষদের অ্যারেস্ট করতে এসে তাদেরকে না পেয়ে মহিলাদেরকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এমনকি সন্তানসম্ভবা বা শিশুসন্তানসহ মহিলাদের ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। নারীরা এভাবে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন। ফ্যাসিস্টের কাছে আসলে নারী-পুরুষের কোনো পার্থক্য নাই। পরিস্থিতির কারণে মহিলাদেরকে আস্তে আস্তে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ম্যাচিউর হতে হয়েছে। ভূমিকা পালন করতে হয়েছে।

নয়া দিগন্ত : ৫ আগস্টের আগে থেকেই নারীদেরকে পরিবর্তিত ভূমিকা নিতে হচ্ছে।

মারদিয়া মমতাজ : জুলাই-আগস্টে নারীদের সরব ভূমিকা ছিল, সিগনিফিকেন্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথের সেই মেয়েটার একটা স্ট্যাটাসের কারণে কিংবা আরেকটি মেয়ে যাকে খুব নির্মমভাবে ছাত্রলীগের কর্মীরা পেটাল- এসব ছবি ছড়িয়ে পড়ার কারণে মানুষ আর ভয় না পেয়ে ঘর থেকে রাস্তায় নেমে এসেছে। নারীর ওপর এরকম আক্রমণ অর্ডিনারি বিষয় ছিল না। মানুষ তাই ঘর থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। যারা কোনো দিন হয়তো কারো সামনে কথা বলেননি সেসব মায়েরাও ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিলেন। তারা মিডিয়াতে কথা বলেছেন, আন্দোলনকারীদের খাবার দিয়েছেন, এ ভূমিকার কারণে নেতৃত্বে নারীরা আসছেন। কিছু রাজনৈতিক দলের কাঠামোর মধ্যে যেমন বিএনপির মিডিয়া সেলে নারীরা কাজ করছেন। জামায়াতের বেশ কিছু নারী মিডিয়াতে কথা বলছেন, সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, শহীদ পরিবারের সদস্যরা বা জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী যিনি সেক্রেটারি তিনি কথা বলছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দিচ্ছেন। জুলাইয়ের পর কথা বলার একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তারা যে ঘটনাগুলোর মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন এগুলো মানুষের সামনে আসা দরকার। দলগুলো বুঝছে নারীদের ভয়েস সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এনসিপির মতো নতুন রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীরা খুব কনফিডেন্টলি কাজ করছেন। বয়স কম অথচ কথা বলছেন, নির্বাচনে দাঁড়ানোর সাহস করছেন।

নয়া দিগন্ত : নারী ঘরে ও ঘরের বাইরে যেভাবে কাজ করছে, ইসলাম তাকে কিভাবে সহায়ক ভূমিকা পালনে সহায়তা করছে?

মারদিয়া মমতাজ : পারিবারিক দায়িত্ব শুধু নারীরা নয় পুরুষও নিচ্ছেন। তাকে ভরণপোষণ থেকে পরিবারের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। পুরুষের স্বভাবজাত কর্মক্ষেত্র বাইরে হওয়ায় এটাকে আলাদা করে দেখা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘরে নারীরা সময় দেন বেশি। বেসিক হচ্ছে কোনো বৈধ কাজে নারীকে ইসলাম কখনো আলাদা করে বিধিনিষেধ দেয় না। সমাজের একটা এক্সট্রা দায়িত্ব আছে। নারীকে বাইরে আসতে হলে কিছু জিনিস এনশিওর করতে হবে। নারীকে যদি ট্রাফিফ পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয় তার জন্য একটা ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। মিনিমাম একটা ব্যবস্থা তার জন্য রাখতে হবে।

নয়া দিগন্ত : টিভি টকশোতে আপনাকে অদ্ভুত কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হতে দেখি, যেমন বেহেস্তের টিকিট, চোরের হাত কাটা, শরিয়া আইন চালু ইত্যাদি, এমন বাক্যালাপ ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা নাকি ইসলামকে সার্টেন একটা ফ্রেমের মধ্যে আটকে রাখার কৌশল?

মারদিয়া মমতাজ : একই প্রশ্নের জবাব বারবার দিলেও তা বারবার করাও হচ্ছে। আজকে একটা চ্যানেলে যে প্রশ্নটি করা হয়েছে সাত দিন পর একই চ্যানেলে একই প্রশ্ন করা হয়েছে অনরেকর্ড আমি দেখাতে পারব। একই চ্যানেলে একই উপস্থাপক পরপর তিনটি অনুষ্ঠানে একই প্রশ্ন করেছেন। তারা উত্তর চান না, কমন সাইকোলজি হচ্ছে ইসলামকে মসজিদে দেখতে পছন্দ করি, কিন্তু মসজিদের বাইরে এসে বাজারে জিনিসের ওজন ঠিক করে দিতে হবে, ইসলাম ব্যাংকে এসে হারাম হালালের রেস্ট্রিকশনের কথা বলবে, রাজনীতির কথা বলবে এটা অনেকে পছন্দ করেন না। ধরেই নেয়া হয় এগুলো নোংরা কাজ। যারা ইসলামী রাজনীতি করছেন তাদেরকে হীন দেখানোর একটা অপচেষ্টা আছে। এ ব্যাপারে ডান, বাম, আওয়ামী লীগ, বিএনপি সবাই এক। ইসলামিস্টদেরকে রাজনীতি করতে দেয়া যাবে না। জুলাই আন্দোলনে ইসলামী দলগুলো ভূমিকা পালন করেছে, উঠে এসেছে, তাদেরকে মানুষ আসলে চিনতে পারছে, তখন ইচ্ছে করেই এ ধরনের বিতর্কিত জায়গায় ঠেলে দেয়া হচ্ছে, কেবলমাত্র ইসলামী দলগুলোকে বিতর্কিত করে দেয়ার জন্য।

নয়া দিগন্ত : জান্নাতের টিকিট বিক্রির কথা তাহলে অযথা বিতর্ক তৈরির জন্যে নয়?

মারদিয়া মমতাজ : বিএনপির বড় বড় নেতারাই বলছেন, অমুক নেতার নাম অজু করে নিতে হবে, একজন বলছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতির নাম বললে বেহেস্ত নিশ্চিত, আরেকজন বলছেন বেগম খালেদা জিয়ার নাম উচ্চারণ করলেও মুখ পবিত্র হয়ে যায়, একজন বলছেন, স্বামীর পায়ের নিচে জান্নাত, আপনারা পুরুষরা বাড়িতে গিয়ে বলবেন ভোট ধানের শীষে দিতে- তা না হলে জান্নাত পাবে না। ঢাকা-৭ এর বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হামিদুর রহমান বলছেন, একজনের ব্যবসা আছে, সে আমাকে দুই লাখ টাকা দিতেই পারে, আমি সেটাকে চাঁদাবাজি মনে করি না। এসব কথা হাইলাইট না করে ইসলামী দলগুলোকে ব্লেম করার জন্য সবাই একজোট হয়ে বিরক্তিকর প্রশ্নের অবতারণা করে তা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। এটাও এক ধরনের ইসলামোফোবিয়া।

নয়া দিগন্ত : মিডিয়াকে কি কেউ ডিক্টেট করছে?

মারদিয়া মমতাজ : অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে কথা বলার চেয়ে ইসলামী দলগুলোকে কিভাবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ঘায়েল করবে সে প্রচেষ্টা থেকে এটা হয়। বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে দলটির কোনো মনোনীত প্রার্থীকে কথা বলতে দেখি না। বরং কোথায় জামায়াত, কোথায় কোন ইসলামী দল কী করেছে সেগুলো নিয়ে কথা বলছেন। অহেতুক বিতর্ক না করে ব্রেইন স্টরমিং বা কাজের বিতর্ক করলে জনগণ উপকৃত হবে বা ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বাছাই করে নিতে সুবিধা পাবেন এটা ওনারা জানেন কিন্তু এ বছর অক্সফোর্ড ডিকশনারি প্রতি বছরের মতো এবার যে শব্দটি পছন্দ করেছে তা হচ্ছে ‘রেইজ বেইজ’ মানে হচ্ছে মানুষকে রাগিয়ে দিয়ে বেশি ভিউ আদায় করা। প্রতিপক্ষকে রাগিয়ে বেফাঁস কথা আদায়, উত্তপ্ত একটা বিতর্ক, সোশ্যাল মিডিয়ার ভাষায় অতিরিক্ত মনোযোগ আদায় করা। চ্যানেলটার ভিউ বা সাবস্ক্রিপশন বাড়াতে গিয়ে আলোচনার জায়গাগুলোকে নষ্ট করে দেয়া। কে কী কেমনে করবে কনস্ট্রাকটিভ আলোচনা হতে পারত। অমুক রাজনৈতিক নেতাকে জিজ্ঞেস করা আপনি আপনার ৫ নম্বর দফা কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসেন, কথা বলি। এক ঘণ্টার একটা টকশো হয়, এটার আউটকাম জিরো। শুধু কথাচালাচালি।

নয়া দিগন্ত : বাংলাদেশে নারীদের কেমন ভবিষ্যৎ দেখেন আপনি?

মারদিয়া মমতাজ : বাংলাদেশে যে টিপিক্যাল পলিটিক্যাল ফিলসফি, ছাত্রসংগঠন থেকে শুরু করলে দলের বিস্তার, শক্তিশালী কেন হবে তাহলে সে ওই এলাকার দোকানগুলোতে চাঁদাবাজি করতে পারবে, দল চালাতে পারবে। এরপর নির্বাচনে সে বিনিয়োগ করে মানুষকে টাকা দিয়ে বলবে আমাকে ভোট দাও। এখানে এজেন্ডা, ইশতেহার কিছুই আসছে না। সরাসরি মানুষের একটা কম সময়ের একটা লোভকে কাজে লাগানো। আগের দিন রাতে যে পাঁচ শ’ দেবে আর যে এক হাজার দেবে- এক হাজার দেয়া লোকটা জিতে যাবে। নির্বাচিত হয়ে কিছু উন্নয়নকাজ বাগানোর চেষ্টা করবে। ভদ্রভাষায় ১০ কোটি টাকার একটা রাস্তার কাজ দুই কোটি টাকায় করে বাকি আট কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করা। সে রাস্তা টিকবে না, ক’দিন পর আবার এই রাস্তা দেখিয়ে উন্নয়ন বরাদ্দ আদায় করা হবে। কিন্তু বরাদ্দের টাকা প্রকল্প পর্যন্ত আসেই না। এই সাইকেল ভেঙে বের হতে পারছি না, আমাদের পুরুষ বলেন মহিলা বলেন সবাই কলুষিত। নেতাকর্মীদের খাওয়াতে হবে কিন্তু পকেট থেকে নয়, এটার জন্য টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি করতে হয়, এক দুষ্টু চক্রের দুর্নীতিতে আবদ্ধ। এখানে নারী-পুরুষের কোনো পার্থক্য নাই। পলিটিক্সের থিউরি হচ্ছে যেকোনো জায়গায় নারীকে দায়িত্ব দিলে দুর্নীতি কমে বা কাজটি ভালো হয়, ২০১২ সালের এক জরিপ বলছে। আমাদের দেশে এটা কাজ করে না কারণ এখানে কোনো চেয়ার কোনো জেন্ডারকে রিপ্রেজেন্ট করে না। করপোরেশনের একটা অংশ হিসেবে হাসিনার ক্ষেত্রে এটা দেখেছি। তাকে ব্যবহার করে ভারত যে রেজিমটাকে টিকিয়ে রেখেছিল সেখানে একজন নারী না থেকে পুরুষ থাকলে এই কাজগুলোই করতে হতো। ইটস নট দ্য চেয়ার, ইটস এ পারসন। পরিশুদ্ধ রাজনীতি করতে চাইলে উন্নয়নকাজ করে দেয়ার মুলা ঝুলিয়ে মানুষের ভোট নেব না। মানুষ দেখবে আইন প্রণয়নের যোগ্যতা রাখি কি না? লেনদেন ছাড়াই মানুষের সামনে নিজেকে প্রেজেন্ট করা মানুষ চয়েস করে ভোট দেবে। নিজ এলাকা বা দেশের উপকারের জন্য আইন প্রণয়নে যেন পড়াশুনা করতে পারি, সরকার বেতন দেবে পাঁচ বছরের জন্য। যেন আর কোনো কাজ করতে না হয়। এটা শুরু করতে পারলে নারী ও পুরুষের কোনো কোটার প্রয়োজন হবে না। কোনো বাধা থাকবে না, প্রত্যেকে তার দক্ষতা অনুযায়ী জায়গা পাবে।

নয়া দিগন্ত : তুরস্ক, ইরান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলিম দেশগুলোতে কি নারীরা তাদের অভিভাবকদের লিবারেল ভূমিকার জন্য এগিয়ে গেছে?

মারদিয়া মমতাজ : চোখের সামনে মানুষ যেমন একটা এক্সাম্পল দেখে তখন সে খেয়াল করে যে লোকটি বিপদে পড়ে কি না। বিপদে না পড়লে সে ওই কাজটা করতে অনুসারী হয়ে ওঠে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাইলে অনেক ধার্মিক মানুষ ও আত্মীয়স্বজন আমাকে বলেছিল মেয়েরাতো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে না। চাকরি পায় না। বুয়েটে চান্স পেয়েও কেন আমি পড়ব না? শুধুমাত্র মেয়ে হওয়ার কারণে? আমার পর দেখলাম অনেক ফ্যামিলি তাদের মেয়েকেও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে দিয়েছে। ট্র্যাক অব লাইফ কিভাবে যায় মানুষ তা দেখে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জামায়াত বেশ কয়েকজন ধার্মিক মহিলাকে সংসদে পাঠিয়েছে। চোখের সামনে হাফেজা আসমা খাতুন, সুলতানা রাজিয়া আপার উদাহরণ পারিবারিকভাবে দেখেছি। প্রচণ্ড বোল্ড মানুষ, প্রচণ্ড অর্গানাইজড মানুষ। একই সাথে তারা ফ্যামিলি লাইফকে ঠিক রেখেছেন। টকশোতে যাওয়ার আমন্ত্রণ আসলে তাই আমার পরিবার আমাকে সহযোগিতা করেছে। এই সংস্কৃতি তৈরি করতে পারলে মেয়েদের মন থেকে ভয়ের সংস্কৃতি দূর হয়ে যাবে।

নয়া দিগন্ত : লিগ্যাল এইডের সাথেও তো আপনি জড়িত?

মারদিয়া মমতাজ : হ্যাঁ ইসলামিক ল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে কাজ করছি, তারা বাংলাদেশে প্রতি তিন মাসে একমাত্র আইনবিষয়ক জার্নাল বের করে। ফ্যামিলি এইডের কাজ করছি সেখানে। বেশ কিছু সুন্দর কাজ হচ্ছে প্রেস্টিজিয়াস এ প্লাটফর্মে। মেয়েদেরকে ইসলামের আলোকে সঙ্কটের সময় ওয়ানস্টপ সলিউশন দিতে গিয়ে কোনো নারী তার পারিবারিক সমস্যা নিয়ে আসলে আগেই তাকে ডিভোতর্সের উপায় ধরিয়ে দেবো না। যেকোনো রিলেশনশিপে মানুষের অনেক ধরনের সাহায্য লাগে। দুই সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলিং সেন্টার কাজ করছে। শক্তিশালী আইনজীবী প্যানেল আছে। শরিয়া কাউন্সেলিং দিতে পারে এমন একটা প্যানেল আছে। নারীদের সহায়তার জন্য বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে যোগাযোগ করিয়ে দেই, তারা আমাদের মাধ্যমে গেলে কনসেশন পায়।

নয়া দিগন্ত : তরুণদের প্রতি আপনার কী আহ্বান?

মারদিয়া মমতাজ : তরুণদের আসলে ভয় দেখানোর অপচেষ্টা চলছে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের জন্য হুমকি হয়ে ওঠায় আমাদের ভাই শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। যেন আমরা এই পরিবর্তনের কথা না বলি। যেন আমরা আঙুল না তুলি। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে তরুণদের নিজেকে নিজেই সমর্থন করতে হবে। জুলাইয়ে আমাদেরকে কেউ সমর্থন দেয়নি। আমাদের তরুণরা নেমে গেছে। সাহস করে নেমে গেলে ছায়ারা সরে যাবে। ওরা কয়জন হাদিকে মারবে।