হাসিনার সাথে হত্যা মামলার আসামি এখন খুলনা শিল্প পুলিশের এসপি

আমিনুল ইসলাম
Printed Edition

পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে হত্যা মামলার আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে রয়েছেন পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগের পরও তিনি এখন খুলনা জেলার শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার। আনসার উদ্দিন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়েরকৃত একটি হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি।

গত বছরের ৭ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা ২২ নম্বর মামলার ১৭ নম্বর আসামি তিনি। ওই মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৮৭ জন। এ ছাড়াও সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারি ছাড়াও নানা বিষয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দুদক অভিযোগটি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার কায়েতমারা গ্রামের ভুক্তভোগী আলাউদ্দিন বেপারী এসপি আনসার উদ্দিনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপকর্মের বিচার চেয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে আবেদন করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে একাধিকবার পুলিশি তদন্ত হলেও ফলাফল শূন্য।

আরেক ভুক্তভোগী আকতার বেপারীর অভিযোগ, এসপি আনসার উদ্দিন অন্যের জায়গা দখল করে পুলিশ পাহারায় বাড়ি তৈরি করেছেন। অথচ তিনি মাত্র প্রায় ১৭ শতাংশ জায়গা কিনেছেন। বাড়ি করেছেন প্রায় দ্বিগুণ জায়গার ওপর। যে দাগে তিনি জমি কিনেছেন সেই দাগে বাড়ি না করে এসপি আনসার উদ্দিন সুবিধাজনক অন্য দাগে বাড়ি করেছেন। বাড়ি করার সময় স্থানীয় থানার পুলিশ ছাড়াও তার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা আছে। মানুষ পুলিশের ভয়ে প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারেনি। যদিও পরে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে তাদের ছাড়াও যারাই তার বিপক্ষে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। এমনকি নারী নির্যাতনের মামলা দিয়েও হয়রানি করা হয়েছে।

পুলিশকে করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের ২৭তম ব্যাচে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, এসপি আনসার উদ্দিন ট্যুরিস্ট পুলিশের কুয়াকাটা জোনে কর্মরত ছিলেন।

এসপি আনসার উদ্দিন গত বছর বারিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। সে সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সুবিধা দেয়ার অভিযোগ আছে এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

পুলিশ কর্মকর্তা আনসার উদ্দিন হাসিনা সরকারের সময় অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সংগঠনিক সম্পাদক মো: জহির উদ্দিন খসরুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ নেন। নিয়মানুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা কোনো ব্যক্তির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। শুধু তাই নয়, প্রার্থীকে জয় পাইয়ে দিতে তিনি নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। তার সাথে বরিশাল-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম কিবরীয়া টিপুর বিশেষ সখ্যতা আছে। যে কারণে টিপু ও তার লোকজন ক্ষমতার অপব্যবহার করেও টিকে ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক একজন অতিরিক্ত সচিবের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে তিনি তার ব্যাচমেট পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্যান্য ক্যাডারে থাকা কর্মকর্তাদের নানাভাবে হয়রানি করেছেন। আনসার উদ্দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার বাবা আব্দুল খালেক বেপারী বরিশালের চরকালেখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।

তবে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে এসপি আনসার উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, একটি গোষ্ঠী তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে। তার কোনো সত্যতা নেই। যাত্রাবড়ী থানায় মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। সুযোগ বুঝে ওই পুলিশ কর্মকর্তা শেখ হাসিনার সাথে একটি মামলায় তাকে আসামি করিয়েছেন। ওই মিথ্যা মামলা প্রত্যহারের জন্য তিনি আবেদনও করেছেন। আনসার উদ্দিন বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি ডিএমপিতে চাকরি করেননি।