প্রতি গ্রাহক পাবেন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা, বাকি টাকা দেয়া হবে পর্যায়ক্রমে

আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ কার্যকর

নতুন আইনে নির্ধারিত হয়েছে যেকোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি অবসায়িত হলে প্রথমে আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এর বেশি আমানত থাকলে গ্রাহককে অবসায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি উত্থাপন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বিক্রয় বা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত অংশ ফেরতের ব্যবস্থা করা হবে। আমানতকারীদের একাধিক হিসাব থাকলে সবগুলো যোগ করে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সুরক্ষা হিসাব করা হবে।

বিশেষ সংবাদদাতা
Printed Edition
যেকোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি অবসায়িত হলে গ্রাহককে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে
যেকোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি অবসায়িত হলে গ্রাহককে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে |ইন্টারনেট

দেশের আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কার্যকর করা হয়েছে নতুন ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ’, যার মাধ্যমে কোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি অবসায়িত বা দেউলিয়া হলে আমানতকারীরা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন।

অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা আমানতকারীদের জন্য এটি একটি নিশ্চয়তা হিসেবে কাজ করবে। পূর্বে কেবল বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকা পর্যন্ত সুরক্ষা থাকলেও এখন তা বাড়িয়ে দুই লাখ করা হয়েছে এবং একই সাথে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকেও প্রথমবারের মতো সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। ফলে আর্থিক সেক্টরের প্রায় সব ধরনের আমানতই এখন সুরক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হলো।

এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে আগের আমানত বীমা আইন সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন আইনের অধীনে আগের সব বিষয় নিষ্পত্তি হবে। গত ১৩ নভেম্বর জারি করা গেজেট অনুযায়ী অধ্যাদেশটি কার্যকর হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এটি সার্কুলার আকারে সব ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে অবসায়িত হতে যাওয়া পাঁচটি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই নতুন সুরক্ষা কাঠামো কার্যকর হবে। এসব ব্যাংকের আমানতকারীরাও সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সুরক্ষা পাবেন।

তবে তাদের অতিরিক্ত আমানত ফেরত পেতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের নির্ধারিত পুনর্গঠন প্যাকেজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে অথবা অবসায়কের কাছে সরাসরি দাবি জানাতে হবে।

নতুন আইনে নির্ধারিত হয়েছে যেকোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি অবসায়িত হলে প্রথমে আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এর বেশি আমানত থাকলে গ্রাহককে অবসায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি উত্থাপন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বিক্রয় বা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত অংশ ফেরতের ব্যবস্থা করা হবে। আমানতকারীদের একাধিক হিসাব থাকলে সবগুলো যোগ করে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সুরক্ষা হিসাব করা হবে।

আইন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি নতুন ‘আমানত সুরক্ষা বিভাগ’ গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে। এই বিভাগ প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও সার্কুলার জারি, সদস্য প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, তথ্য চাইতে পারা, অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে তথ্যবিনিময়ে সহযোগিতা এবং জনসচেতনতা তৈরিতে বিভিন্ন সভা-সেমিনার আয়োজন করতে পারবে। তহবিল ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড ট্রাস্টি বোর্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এবং বছরে অন্তত একবার সভা অনুষ্ঠিত হবে। তহবিলের প্রিমিয়াম হারও তারাই নির্ধারণ করবে।

এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির জন্য দু’টি পৃথক তহবিল গঠন করা হবে, যা কেবল আমানতকারীদের সুরক্ষায় ব্যবহার করা যাবে। কোনো সদস্য প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ বা তাদের আর্থিক সঙ্কট মেটাতে তহবিল ব্যবহারের বিধান নেই। সদস্য প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রিমিয়াম, বিশেষ প্রিমিয়াম ও জরিমানার টাকা তহবিলে জমা হবে। নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান সদস্য হতে চাইলে মূলধনের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ বা ট্রাস্টি বোর্ড নির্ধারিত প্রিমিয়ামের সমপরিমাণ অর্থ এককালীন জমা দিতে হবে।

আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ায় দেশের আর্থিক খাতে আমানতকারীদের আস্থা কিছুটা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে থাকা ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির আমানতকারীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে।

যদিও দুই লাখ টাকার সীমা অনেকের জন্য কম হতে পারে, তবুও এ সুরক্ষা কাঠামো আর্থিক শৃঙ্খলা এবং গ্রাহক আস্থা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।