দুর্নীতি দমনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : ড. ইফতেখারুজ্জামান

Printed Edition

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি দমনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও সমাজে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমকে আরো সাহসী, অনুসন্ধানী ও নৈতিক অবস্থানে থাকতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত গঠন এবং নীতিনির্ধারকদের উপর চাপ সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।

গতকাল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক আয়োজিত ইকোনোমিক রিপোর্টারস ফোরামের (ইআরএফ) সদস্যদের জন্য ‘ওপেন ডেটা অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সি ইন পাবলিক প্রকিউরমেন্ট’ বিষয়ক একটি বিশেষ প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ নয়, এটি গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। এ পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের দায়িত্ব শুধু সংবাদ পরিবেশন নয়, বরং তথ্যভিত্তিক অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ ও ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে দুর্নীতির কাঠামোগত সমস্যাগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, গণমাধ্যম যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তবে দুর্নীতিবাজদের জন্য তা হবে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। তবে এ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার এবং পেশাগত নৈতিকতা রক্ষার ওপর জোর দেন তিনি। তার মতে, ভয়ের পরিবেশ বা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ থাকলে গণমাধ্যম তার প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে পারে না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব বাড়লেও মূলধারার গণমাধ্যমের দায়িত্ব কমেনি, বরং বেড়েছে। ভুয়া তথ্য ও গুজবের এই সময়ে যাচাই-বাছাই করা, সঠিক তথ্য তুলে ধরাই গণমাধ্যমের প্রধান চ্যালেঞ্জ। দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদে প্রমাণ, নথি ও বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি মনে করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গণমাধ্যম, সুশীলসমাজ ও নাগরিকদের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনেক সময় রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করে, এমন উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা একে অপরের পরিপূরক। দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশন যেমন গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়, তেমনি তা দুর্নীতি দমনের আন্দোলনকে শক্তিশালী করে। তারা গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ, আইনি সুরক্ষা এবং তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ বাড়ানোর দাবি জানান।

ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, দুর্নীতি দমনে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করলে হবে না; গণমাধ্যমের সক্রিয় ও স্বাধীন ভূমিকার মাধ্যমেই সমাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এ ধরনের প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।