রাখাইনে মানবিক করিডোরের সাথে চীন জড়িত নয় : রাষ্ট্রদূত ওয়েন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
Printed Edition
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন |সংগৃহীত

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, রাখাইনে তথাকথিত মানবিক করিডোরের সাথে চীন জড়িত নয়। এটি মিয়ানমারে সঙ্ঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাখাইন রাজ্যে ত্রাণসরবরাহে জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলোর একটি উদ্যোগ। চীন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার যথাযথ সমাধান করবে এবং প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে পারবে বলে রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন।

গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের পাঁচ দশক’ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দেয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান গাউসুল আজম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কান্ট্রি লেকচারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন।

তিস্তা নদী সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প (টিআরসিএমআরপি) সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে চীন প্রস্তুত রয়েছে। আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চাই। এখন বাংলাদেশ এগিয়ে আসতে চায় কি না, সে সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে হবে।

দ্বিপক্ষীয, ত্রিপক্ষীয় না আন্তর্জাতিক জোটের মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে জানতে চাওয়া হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রকল্পটি কিভাবে এগিয়ে নেয়া হবে, তা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের নেয়া সিদ্ধান্তের প্রতি চীন শ্রদ্ধাশীল থাকবে। প্রকল্পটি যত তাড়াতাড়ি শুরু করা যায়, ততই তিস্তা পাড়ের মানুষের জন্য ভালো।

ভারত ও পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনা নিয়ে ইয়াও ওয়েন বলেন, এ উত্তেজনা প্রশমনের জন্য সন্ত্রাসবাদের অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার। পরিস্থিতি শান্ত করতে উভয় দেশকে কাজ করতে হবে। উত্তেজনা কমাতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা অন্যদের মতো খোলামেলা কথা বলি না। স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে একটি দেশের জন্য মঙ্গল। স্থিতিশীলতা ছাড়া অগ্রগতি সম্ভব নয়।

রাষ্ট্রদূত বলেন, চলতি মাসে চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ১০০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় আসছেন। এর আগে বাংলাদেশে এত বড় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল আসেনি। এটি খুব ইতিবাচক। এই প্রতিনিধিদলের সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমি আশা করছি।

চীন একটি বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বকে সমর্থন করে, যেখানে সার্বভৌমত্ব ও সমতার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পায় মন্তব্য করে ইয়াও ওয়েন বলেন, প্রতিটি দেশ, সেটি যত ছোট বা শক্তিশালী অথবা ধনী হোক না কেন, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার পূর্ণ সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে। কোনো দেশই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। প্রতিটি রাষ্ট্রের সামাজিক ব্যবস্থা ও উন্নয়নের পথ স্বাধীনভাবে বেছে নেয়ার মৌলিক অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, চীন ও বাংলাদেশ সবসময় একে অপরকে সম্মান করে এসেছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবশ্যই বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকা উচিত। বাংলাদেশের জনগণ তাদের উন্নয়নের পথ নিজেরাই নির্ধারণ করার অধিকার রাখে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় এবং এ দেশের নিজস্ব বাস্তবতাভিত্তিক আধুনিকায়নের পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে চীন সবসময়ই ধারাবাহিক ও দৃঢ় সমর্থন দিয়ে আসছে। বিনিময়ে বাংলাদেশও অবিচলভাবে ‘একচীন নীতি’ অটলভাবে সমর্থন করেছে, তথাকথিত ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে দৃঢ় থেকেছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, আন্তর্জাতিক অস্থিরতা এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যেও চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক স্থিতিশীল ছিল। এর মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরো জোরদার হয়েছে। এর মূল রহস্য হচ্ছে সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। এই নীতিগুলো আমাদের ভবিষ্যতের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অটুট থাকবে।

বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্ক আরোপের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ শুল্ক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করছে। কিন্তু চীন মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আপসের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান হবে না। বরং নীতি, ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে দেশগুলো তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।