নিজস্ব সংবাদদাতা
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি মামলার রায় আগামী ২৭ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে। গতকাল রোববার যুক্তিতর্ক শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এ এই দিন ধার্য করেন বিচারক মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর মো: তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিন গ্রেফতার হওয়া একমাত্র আসামি, রাজউকের সাবেক সদস্য খোরশেদ আলমের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী মো: শাহীনুর ইসলাম। তিনি তার মক্কেলকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে মামলার অন্য আসামিরা পলাতক থাকায় তারা আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারেননি। এর আগে গত ১৭ নভেম্বর মামলাগুলোর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। একই বছরের ৩১ জুলাই বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
এই তিন মামলার একটিতে মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক সিনিয়র সচিব পূরবী গোলদারসহ ১২ জন, আরেক মামলায় শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৭ জন এবং অপর মামলায় শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, শেখ রেহানা ও তার সন্তান টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞাসহ শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে দুদক পৃথক মোট ছয়টি মামলা দায়ের করে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের ছয়টি প্লট অবৈধভাবে বরাদ্দ নেন, যদিও তারা আইনগতভাবে ওই প্লট পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না।
এই মামলাগুলো কেবল একটি প্রশাসনিক দুর্নীতির বিষয় নয়; এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার অপব্যবহার, পরিবারতন্ত্র এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যক্তিকরণের সবচেয়ে প্রতীকী মামলাগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নানা কারণে কেন এই রায় গুরুত্বপূর্ণ- প্রথমত, বিচার বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা। শেখ হাসিনার মতো সাবেক এক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার রায় দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা পরীক্ষার একটি বড় মাইলফলক। দ্বিতীয়ত, এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির টার্নিং পয়েন্ট। এই রায় ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীনদের জন্য একটি সতর্ক বার্তা হয়ে উঠতে পারে- ক্ষমতা মানেই আইনের ঊর্ধ্বে থাকা নয়।
তৃতীয়ত, জমি ও আবাসন খাতে দুর্নীতির নগ্ন চিত্র। রাজউকের মতো প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাধর মহলের প্রভাব দুর্নীতির কাঠামোগত দুর্বলতা সামনে এনেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এর নানা ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে। এতে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই রায় রাজনৈতিক আবহকে আরো উত্তপ্ত করতে পারে। সরকারপক্ষ দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে রাজনৈতিক কৃতিত্ব হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। বিরোধী শক্তিগুলো এটিকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে প্রচার করতে পারে। এই মামলার রায় শুধু শেখ হাসিনা বা তার পরিবারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না, বরং এটি বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ের নৈতিক ভিত্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতার একটি বড় পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।



