বিশেষ সংবাদদাতা
সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দুই-তিন বছরের মধ্যে নববায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরিত হতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, কার্বন নির্গমন কমানো মানে শুধু উৎপাদন নয়, দায়িত্বশীল ভোগও নিশ্চিত করা। টেকসই ভোগ ও উৎপাদনের ওপর জোর দিয়ে তিনি সকল খাতে পরিবেশবান্ধব কর্মকৌশল গ্রহণের আহ্বান জানান। গতকাল ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক সম্মেলন রোড টু কপ-৩০ : হাউ ক্যান ন্যাশনাল ইন্টারেস্টস বি অ্যালাইন্ড উইথ গ্লোবাল ক্লাইমেট গোলস’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এবার সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘এ ওয়ার্ল্ড বিয়ন্ড ক্রাইসিস : ক্লাইমেট সলিউশনস দ্যাট ওয়ার্ক।’
‘আকাক্সক্ষাকে কাজে রূপান্তর’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ক্লাইমেট উইক-২০২৫ আয়োজন করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ১৮ থেকে ২১ অক্টোবর ঢাকায় চার দিনের এই আয়োজনে থাকছে সম্মেলন, সংলাপ, প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী। এতে অংশ নেবেন নীতিনির্ধারক, গবেষক, তরুণ প্রজন্ম, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা।
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিবেশ অধিদফতর বিভিন্ন অঞ্চলে সবুজ অফিস ভবন নির্মাণ করছে এবং স্থপতি ও প্রকৌশলীদের সহযোগিতায় পরিবেশবান্ধব ভবনের মডেল তৈরি করছে। তিনি বলেন, জলবায়ু অর্থায়নে দ্বৈত হিসাব এবং দুর্বল বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা আস্থার ঘাটতি তৈরি করেছে ও অভিযোজন সহায়তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে। যদি প্রধান অর্থনীতিগুলোর নির্গমন বাড়তেই থাকে, তাহলে শুধু প্রযুক্তি হস্তান্তর সমস্যার সমাধান করবে না। তিনি আরো জানান, নবগঠিত বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের (বিসিডিপি) অধীনে চারটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে এবং সেখানে সিভিল সোসাইটি ও একাডেমিয়ার প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে তারা কারিগরি ও নীতিগত সহায়তা দিতে পারেন।
ইটভাটার পরিবেশগত ক্ষতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বিকল্প নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটা কার্বন নিঃসরণ কমাবে, কৃষিজমি রক্ষা করবে এবং পাহাড় কাটার প্রবণতা প্রতিরোধ করবে। এ সময় তিনি উর্বর মাটির পরিবর্তে নদী খননের পলি ব্যবহার করে ইট তৈরির কথা বলেন।
সিপিডি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য খুশি কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের উপদেষ্টা ড. আইনুন নিশাত, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) উপসচিব ড. শাহ আব্দুল সাদী, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মো: জিয়াউল হক, জার্মান দূতাবাসের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী উলরিশ ক্লেপম্যান, বিজিএমইএ পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শিরিন সুলতানা লিরা এবং এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সিনিয়র ক্লাইমেট চেঞ্জ কর্মকর্তা মৌসুমি পারভীন।
জলবায়ু ন্যায়বিচার, অর্থায়ন, সহনশীলতা ও উদ্ভাবনী সমাধান বিষয়ক নানা দিক এ সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। এই আয়োজনটি ডেনমার্ক দূতাবাস ও বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গতকাল প্রথম দিনে জাতীয় স্বার্থকে বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য করার উপায় নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ছয়টি বিষয়ভিত্তিক সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
দ্বিতীয় দিনে তরুণ গবেষক ও পেশাজীবীরা উপস্থাপন করবেন অভিযোজন, প্রশমন, সহনশীলতা, সবুজ প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ে গবেষণাপত্র। সেরা প্রবন্ধগুলো পুরস্কৃত করা হবে এবং প্রকাশনার জন্য বিবেচনা করা হবে।
তৃতীয় দিনে থাকবে তরুণদের নিয়ে নীতিবিষয়ক কর্মশালা ও সংলাপ। এতে আলোচনা হবে- জলবায়ু বাজেটিং, আর্থিক কাঠামো এবং অভিযোজন পরিকল্পনা নিয়ে।
আর শেষ দিনে থাকবে ক্লাইমেট অলিম্পিয়াড, নীতিবিষয়ক কেস প্রতিযোগিতা এবং গ্রিন প্রজেক্ট প্রদর্শনী। শিক্ষার্থী ও তরুণ উদ্ভাবকরা উপস্থাপন করবেন জলবায়ু সমাধান ও নীতি ধারণা।



