ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে এখন পুরো ক্যাম্পাস সরগরম। ২৬ আগস্ট চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর থেকেই প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেছেন। এ নির্বাচনে ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৪৭১ জন। এর মধ্যে নারী রয়েছেন ৬২ জন। ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। হলগুলোর বাইরে নির্ধারিত আটটি কেন্দ্রে ভোট হবে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ডাকসুর ভোট ফিরছে, তাই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবার আকাশচুম্বী। টিএসসি, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, বিভিন্ন অনুষদ ও ইনস্টিটিউট সব জায়গাতেই লিফলেট বিতরণ, ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন, কুশলাদি বিনিময় আর সোশ্যাল মিডিয়া লাইভে সরব হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা।
ছাত্রদল এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি হল কভারেজ নিশ্চিত করতে পেরেছে বলে দাবি করছে। ১৮টি হলের মধ্যে ১৪টিতে তারা পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে সক্ষম হয়েছে। প্রচারণায় তারা ‘প্রতিশ্রুতি নয়, পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’ স্লোগান তুলে ধরছে। আবাসন সঙ্কট নিরসন, ছাত্রাবাস ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহনের রুট সম্প্রসারণ, গবেষণার জন্য আলাদা অনুদান, এসব দাবি নিয়ে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করেছে। তারা হলভিত্তিক দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, যাতে ভোটের দিন সংগঠিতভাবে ছাত্রদের ভোট আদায় সম্ভব হয়।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ এবারের নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ ২৮ সদস্যের প্যানেল দিয়েছে। তারা প্রচারণায় মূলত নৈতিক ও আদর্শভিত্তিক রাজনীতির কথা বলছে। টিউশন ফি স্থিতিশীল রাখা, ক্যাম্পাসে সহিংসতা রোধ, শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও পড়াশোনার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার প্রতিশ্রুতি তাদের। প্রচারণার ধরনেও শিবির বরাবরের মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সংগঠিত। শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি আলাপচারিতা এবং নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে তারা নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও শিক্ষার সুযোগসুবিধা বাড়ানোর দিকেই তাদের প্রতিশ্রুতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
বাম গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটও পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ নাম দেয়া প্যানেলের ভিপি পদে শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি), জিএস পদে মেঘমল্লার বসু এবং এজিএস পদে জাবির আহমেদ জুবেলকে নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে। তাদের প্রচারণার মূল বিষয় হচ্ছে ক্যান্টিনে ভর্তুকি, হলের সিট বণ্টনে স্বচ্ছতা, গবেষণা ও কল্যাণ তহবিল গঠন এবং ক্যাম্পাসে নারীর নিরাপত্তা। তারা মনে করছেন, বাম জোটের এজেন্ডা ইস্যুভিত্তিক এবং বাস্তবসম্মত, যা ভোটে তাদের এগিয়ে দিতে পারে। তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় লিফলেট বিতরণ ও অনলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) এবারের নির্বাচনে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে প্যানেল দিয়েছে। ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আব্দুল কাদের, জিএস পদে আবু বাকের মজুমদার এবং এজিএস পদে আশরেফা খাতুন। তাদের প্রচারণায় অন্যতম আকর্ষণ হলো এক পাতার নীতিপত্র বিলি, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা সমাধানে ধাপে ধাপে পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের টকশোতে অংশগ্রহণ, শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিশ্রুতি জানান দিচ্ছেন। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তাদের বেশ কিছু কল্যাণমূলক কাজ রয়েছে, যেগুলো তাদের ভোটব্যাংক বাড়াতে সাহায্য করবে।
অন্যদিকে ছাত্র অধিকার পরিষদ ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ স্লোগান নিয়ে প্রচার শুরু করেছে। তারা ভোটারদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত সংস্কার, হলে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, নারীশিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গবেষণায় বৃত্তি বৃদ্ধি এবং প্রশাসনের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া পাশাপাশি তারাও রুমে রুমে গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে প্যানেল ঘোষণা করেছে। ভিপি পদে ইয়াসিন আরাফাত, জিএস পদে খায়রুল আহসান মারজান এবং এজিএস পদে সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের প্রচারণা মূলত নৈতিক শিক্ষাঙ্গন এবং সার্বজনীন সহায়তা তহবিল গঠনের প্রতিশ্রুতিতে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। তারা সংবাদ সম্মেলন, ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের প্রচারণা চালাচ্ছে।
এর পাশাপাশি রয়েছে বেশ কয়েকটি স্বতন্ত্র প্যানেল ও স্বাধীন প্রার্থী। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যজোট’ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয় প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে চাইছে যে, দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে ব্যক্তিকে ভোট দিলে প্রকৃত পরিবর্তন আসবে। তাদের প্রচারণার প্রতিশ্রুতিতে ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা, ডিজিটাল সার্ভিস ডেস্ক, গবেষণা সহায়তা এবং কর্মসংস্থানের বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
প্রচারযুদ্ধ যত তীব্র হচ্ছে, ততই ক্যাম্পাসের পরিবেশ উৎসবমুখর হয়ে উঠছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ২০১৯ সালের ছয় বছর পর ডাকসুর ভোট হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর গণতান্ত্রিক এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পেরে তারা রোমাঞ্চিত। চায়ের টেবিলে, ক্যান্টিনে, ক্লাসরুমে সর্বত্র চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা। অনেক হলে মক ভোট হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা মজা করে ভোট দিচ্ছেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে।
তবে প্রচার চললেও আচরণবিধি মানা নিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কড়া নজরদারি। নির্ধারিত স্থানের বাইরে কোনো পোস্টার বা ব্যানার টাঙাতে দেয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যেই টাস্কফোর্স বেশ কিছু ব্যানার সরিয়ে ফেলেছে। প্রার্থীরা বাধ্য হয়ে এখন বিভাগভিত্তিক সভা ও অনলাইন প্রচারণার ওপর নির্ভর করছেন। পাশাপাশি ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থীর বিরুদ্ধেও প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে প্রশাসন তেমন পদক্ষেপ নেয়নি।
এদিকে, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে গুঞ্জন উঠলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ স্পষ্ট করেছে, ডাকসু নির্বাচনে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না। এতে কিছুটা হলেও শঙ্কা দূর হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে কে এগিয়ে আছেন, তা নিয়ে এখনো স্পষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে মাঠপর্যায়ের চিত্র বলছে, হল কভারেজে এগিয়ে ছাত্রদল ও শিবির। বাম জোট ইস্যুভিত্তিক প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের সমর্থন পাচ্ছে। অন্যদিকে ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বৈষমবিরোধী ছাত্র সংসদ, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যজোট ‘চেঞ্জ ন্যারেটিভ’ দিয়ে তরুণ ভোটারদের মধ্যে সাড়া তুলতে পেরেছে। ফলে এবারের ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও ভোটের হিসাব পাল্টে দিতে পারে।
ছয় বছর পর অনুষ্ঠেয় ডাকসুর নির্বাচন ফিরে আসায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের গণতান্ত্রিক উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। তবে সেই উচ্ছ্বাসকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার জন্য প্রশাসনও সক্রিয়। নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা খুবই স্পষ্ট। যেই জিতুক, প্রতিশ্রুতিগুলো যেন বাস্তবে রূপ নেয় এবং ক্যাম্পাসকে সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীবান্ধব করা যায়।
স্বতন্ত্রভাবে লড়বেন আলোচিত মহিউদ্দিন রনি : ডাকসু নির্বাচনে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে অনশন কর্মসূচি পালন করা আলোচিত মহিউদ্দিন রনি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের একজন শিক্ষার্থী।
গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন তিনি।
এ সময় তিনি ঢাবি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বলেন, ঢাবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন হিসেবে কীটপতঙ্গের মতো জীবনযাপন উপহার দিয়েছে। তারা এখন পর্যন্ত শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করতে পারেনি। স্বাধীনতার পর এত বছরের মধ্যে সবাই তাদের দলীয় স্বার্থ হাসিল করার জন্য কাজ করে গেছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো কাজ তারা করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওই সদিচ্ছাটা নেই যে, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ডাল ঘন হবে নাকি পাতলা হবে। হলের ডালের ঘনত্ব দেখে মনে হয় কেউ মাত্র হাত ধুয়ে এঁটো পানি রেখে গেছে। অথচ আমরা এই প্রশাসনের কাছে অনেক কিছু আশা করেছিলাম।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী লিজা অকালেই মারা যায়। তার অসুখ সম্পর্কে যদি সে আগে থেকে জানতো তাহলে সে প্রোপার ট্রিটমেন্টটা (উপযুক্ত চিকিৎসা) নিতে পারত। আমাদের ঢাবি মেডিক্যালে যদি ওই চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকত তাহলে হয়তো এই সমস্যা হতো না। এভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের পুরস্কৃত করছে।
রনি বলেন, আমাদের নারীশিক্ষার্থী বোনেরা প্রতিনিয়ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাঘাটে হেনস্তা, ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। এমন একটা বিশ্ববিদ্যালয় কি আমাদের কাম্য ছিল? সবশেষে প্রার্থিতা ঘোষণা করে তিনি বলেন, আমাদের অনেক অভিযোগ ও অপ্রাপ্তির জায়গা আছে। সেখানে ডাকসু আমাদের জন্য একটি সম্ভাবনার দুয়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এত ঋণ পূরণ করার এখন সময় এসেছে। সেজন্য আমি সবার ম্যান্ডেট নিয়ে ও সবার কর্মী হয়ে এসব সঙ্কট নিরসনে কাজ করে যেতে চাই।
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটদানের সুযোগ ব্যাহত করা হচ্ছে : তানভীর বারি হামিম
আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটদানের সুযোগ সীমিত করার অভিযোগ তুলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী তানভীর বারি হামিম। গতকাল জুমার নামাজ শেষে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।
হামিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য হল আইডি কার্ড নবায়নের যে শর্ত আরোপ করেছে, তা অনেক শিক্ষার্থীর ভোটদানের ক্ষেত্রে বড় বাধা সৃষ্টি করবে। তিনি উল্লেখ করেন, অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা সাধারণত হলে থাকেন না, তাই তাদের আইডি কার্ড নবায়ন করার প্রয়োজন পড়ে না। নির্বাচনের মাত্র দশ দিন আগে এমন শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যা অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে পূরণ করা কঠিন। এই পদক্ষেপের ফলে অনেক শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত এই সমস্যার সমাধান করা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটদানের প্রক্রিয়া সহজ করা। এর সহজ বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে শুধুমাত্র প্লেইন স্লিপ, স্মার্ট আইডি কার্ড অথবা লাইব্রেরি কার্ড দেখিয়ে যাতে তারা ভোট দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা উচিত।
তানভীর বারি হামিম বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে ডাকসু নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা হলে তা বাংলাদেশের বৃহত্তর গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারে।
ট্যাগিং পলিটিক্স করে কণ্ঠরোধ করতে চাওয়াদের বিষয়ে শিক্ষার্থীরাই সিদ্ধান্ত নেবেন : এসএম ফরহাদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও ডাকসুর জিএস পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদ বলেছেন, ট্যাগিং পলিটিক্স করে যারা শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করতে চায়, তাদের বিষয়ে সচেতন শিক্ষার্থীরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাতে ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি এই মন্তব্য করেন। ওই পোস্টে ফরহাদ লিখেছেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিকে অবশ্যই প্রতিটি প্রশ্ন যথাযথভাবে অ্যাড্রেস করতে হবে। কে প্রশ্ন করেছেন সেটির চেয়ে কী বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, সেটিই মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশো চলাকালীন এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ‘শিবির ট্যাগ’ দেন ছাত্রদল মনোনীত এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ।
প্রচারণার সাথে থেমে নেই আচরণবিধি লঙ্ঘন : নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গ করে রাত এগারোটার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল মনোনীত ডাকসু সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে। বিধি অনুযায়ী একজন প্রার্থী রাত ১১টার পরে কোনো ধরনের প্রচারণা চালাতে পারবেন না। কিন্তু বুধবার রাত ১২টার পরও শেখ মুজিবুর রহমান হলে প্রচারণা চালাতে দেখা যায় আবিদুলকে।
হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, আবিদুল ইসলাম খান বুধবার রাত ১০টার পর থেকে শেখ মুজিবুর রহমান হলে প্রচারণা শুরু করেন। তিনি এই প্রচারণা রাত ১২টার পরও করতে থাকেন। এই প্রতিবেদকের কাছে ওই সময়ের একজন শিক্ষার্থীর সাথে আবিদুল ইসলাম খানের প্রচারণার সময়ের একটি ছবি এসেছে। সেই ছবিতে দেখা যায় আবিদুল ইসলাম খান রাত ১২টা ২০ মিনিটে ওই শিক্ষার্থীর রুমে ছবি তুলেন।
এ ছাড়া রাত সাড়ে ১২টার পরে আবিদুলকে শেখ মুজিবুর রহমান হলের অতিথি কক্ষে অবস্থান করতে দেখা যায়। সেখানে হল ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দসহ ছাত্রদলের মনোনীত মুজিব হল সংসদের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ও হল প্রশাসনের কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ।
এদিকে, গত ২৬ আগস্ট থেকে শুরু হয় ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণা। প্রার্থীদের সাদা-কালো পোস্টার-ফেস্টুনে সয়লাব হয়ে গেছে ঢাবি ক্যাম্পাস। এর মধ্যে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট ও উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোটের ব্যানার দেখা মেলে সবচেয়ে বেশি। যদিও আচরণবিধিতে ক্যাম্পাসের কোনো বিল্ডিং গাছ কিংবা অন্য স্থাপনায় পোস্টার, ব্যানার লাগানো যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়। তবে এসব ব্যানার নিজস্ব খুঁটি ও কাঠামোতে ক্যাম্পাসের সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায় । যাকে আচরণবিধির লঙ্ঘন নয় বলে মনে করেন প্রার্থীরা। তবে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রশাসন। গত ২৬ আগস্ট দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করা হয়। টিএসসি ও বিভিন্ন হল গেটে থাকা ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ ও ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’সহ অন্যান্য প্যানেলের ব্যানার-ফেস্টুন প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়িতে তুলে অপসারণ করা হয়।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো: জসীম উদ্দিন বলেন, আচরণবিধিতে ফেস্টুন লাগানোর বিষয়ে একটু ভুল বুঝাবুঝি ছিল। ফলে অনেকে ফেস্টুন বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় টানায়। তবে আমরা সবাইকে জানিয়েছি, নিজেদের ব্যানার-ফেস্টুন তুলে নিতে। তারা না সরালে প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় আমাদের টাস্কফোর্সের টিম তা সরিয়ে ফেলে।