- আজ রাষ্ট্রীয় শোক, জানাজা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়
- ঢাবিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুলের পাশে দাফন
স্বৈরাচারবিরোধী জুলাই আন্দোলনের বীর যোদ্ধা শহীদ মো: শরিফ ওসমান হাদির লাশের পাশে যেন গোটা দেশ, শোকে কাতর আপামর জনতা। গতকাল নির্ধারিত সময়ের আগেই বিমানবন্দরে এই তরুণ নেতার লাশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন হাজার হাজার মানুষ। যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে মোতায়েন ছিল অসংখ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। বিমানবন্দরে হাদির লাশ গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম। হাদির লাশের অপেক্ষায় বিমানবন্দরের বাইরের সড়কে মানুষের ঢল নামে। সাধারণ মানুষের উপস্থিতি দেখে মনে হয়েছে- যেন একটি লাশের পেছনে পুরো দেশ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে লড়াকু যোদ্ধার মৃত্যুতে আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
আজ সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বেলা ২টায় জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে। ঢাকায় ওসমান হাদির লাশ পরিবারের নিকটজনরা ছাড়া অন্য কেউ দেখার সুযোগ পাবেন না বলে জানা গেছে। এর আগে বেলা আড়াইটায় জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে সেই সময়টা আধা ঘণ্টা এগিয়ে ২টায় অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এই তরুণ নেতার বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। তার সাবলীল বক্তৃতা এবং কথার সাথে যুক্তির মিশ্রণ বাংলাদেশের তরুণ-যুবা ও বৃদ্ধদের আকৃষ্ট করেছিল। জুলাই আন্দোলনে সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনে সংসদীয় এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য জনসংযোগ শুরু করেছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর মতিঝিলে প্রচারণা শেষে ফেরার পথে বিজয় নগর এলাকায় ঘাতকের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন এবং গত বৃহস্পতিবার সবাইকে শোকে ভাসিয়ে চির বিদায় নেন। এতো অল্প সময়ে এবং অল্প বয়সে মানুষের হৃদয় কাড়ার উদাহরণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একেবারেই বিরল। তার মৃত্যুতে সারা দেশেই মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে- তীব্র ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে দেশ।
ওসমান হাদির লাশ হজরত শাহ জালাল বিমান বন্দর থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিমঘরে এনে রাখা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় বিমান বন্দরে ওসমান হাদির লাশ গ্রহণের সময় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সাথে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চল সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, ডাকসু ভিপি সাদেক কায়েমসহ আরো অনেকে।
সন্ধ্যা ৬টায় লাশ আসার পর ইনকিলাব মঞ্চের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে ‘শহীদ ওসমান হাদিকে বহনকারী গাড়ি বিমানবন্দর থেকে হিমাগারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর বিষয়টি জানানো হয়। ওসমান হাদির লাশ হিমাগারে রেখে ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা শাহবাগে এসে অবস্থান নেন। পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ওসমান হাদিকে কবি নজরুলের পাশে সমাহিত করার আগে মানিক মিয়া এভিনিউতে বাদ জোহর জানাজার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আজ মিছিলসহ লাশ ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে আনা হবে। ইনকিলাব মঞ্চের পোস্টে ছাত্র-জনতাকে শৃঙ্খলার সাথে আন্দোলন জারি রাখার আহ্বান জানানো হয়, যেন কোনো গোষ্ঠী অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে আন্দোলন স্তিমিত করতে না পারে, একই সাথে সহিংসতা করার সুযোগও না পায়। পোস্টে আরো বলা হয়, ‘লাশ দেখার কোনো সুযোগ থাকবে না। সবার কাছে শৃঙ্খলা বজায় রাখার এবং শহীদ ওসমান হাদির জন্য দোয়া পৌঁছানোর অনুরোধ করা হচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে জানাজায় যারা অংশ নেবেন তাদের সাথে করে ব্যাগ ও ভারী বস্তু না আনতে অনুরোধ করা হয়েছে। একই সাথে সবার অবগতির জন্য জানানো হয়েছে, সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন উড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।



