সুন্দরবনে নোনা পানির নিচে মিঠা পানির সন্ধান

আন্তর্জাতিক গবেষণার ফল

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীপথে আসা পলি এ জলাধারগুলোকে ঢেকে দেয়। এর ওপর যুক্ত হয় এলজিএমপি বা লাস্ট গ্লেশিয়াল ম্যাক্সিমাম প্যালেসল নামক এক প্রাচীন কাদামাটি স্তর, যা উপরের লবণাক্ত পানিকে ভূগর্ভের পানি থেকে আলাদা করে রাখে এবং এ কারণেই হাজার বছর আগের মিঠা পানিকে এখনো অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক
Printed Edition

অবশেষে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ ও প্রাণ প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে একটি আন্তর্জাতিক গবেষক ও বিজ্ঞানী দলের গবেষণা। ২৮ নভেম্বর ইন্টারন্যাশনাল সাইন্স ম্যাগাজিন নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত তাদের গবেষণায় জানা গেছে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে নোনা পানির নিচে রয়েছে মিঠা পানির দু’টি বিশাল স্তর।

উপকূলের মানুষের নিরাপদ পানির সঙ্কট ও সম্ভাবনা নিয়ে এ গবেষণায় অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ মেক্সিকো ইনস্টিটিউট অব মাইনিং অ্যান্ড টেকনোলজি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।

এ দলটি পশুর নদীর তীর বরাবর মোট ১২০ কিলোমিটার এলাকার ২৫টি স্থান এবং ক্ষেত থেকে ভূগর্ভের গঠন অনুসন্ধান করেন। এতে ব্যবহৃত হয় অ্যাডভান্সড ম্যাগনেটোটেলুরিক বা আধুনিক ভূ-তড়িৎ-চৌম্বকীয় পদ্ধতি, যা মাটির গভীরে লবণাক্ত ও মিঠাপানির বৈদ্যুতিক রোধের পার্থক্য নির্ণয় করে।

আবিষ্কৃত জলাধার দু’টির নাম দেয়া হয়েছে ‘আর ওয়ান’ ও ‘আর টু’। আর ওয়ানের অবস্থান খুলনার উত্তর অংশে মাটির ৮০০ মিটার গভীরে এবং এটি ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। পাশাপাশি ‘আর টু’ সর্বোচ্চ ২৫০ মিটার গভীরে এবং এটি ‘আর ওয়ান’ থেকে আকার ও বিস্তার উভয়দিকেই ছোট। মজার বিষয় এ দুই মিঠা পানির জলাধারের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে লবণাক্ত পানির ২০ কিলোমিটার প্রস্থের অঞ্চল যাকে ‘সি ওয়ান’ নামকরণ করা হয়েছে।

গবেষকদের ধারণা এ পানি তৈরি হয়েছিল প্লাইস্টসিন কিংবা শেষ বরফ যুগে যখন সমুদ্রপৃষ্ঠ আজকের থেকে অন্তত ১২০ মিটার নিচে ছিল। তখনকার বালুমিশ্রিত নদীপথে আসা বৃষ্টির পানিই ভূগর্ভে সঞ্চিত হয়েছে।

সে সময় উপকূলরেখা আরো দূরে হওয়ার পাশাপাশি ক্রমেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীপথে আসা পলি এ জলাধারগুলোকে ঢেকে দেয়। এর ওপর যুক্ত হয় এলজিএমপি বা লাস্ট গ্লেশিয়াল ম্যাক্সিমাম প্যালেসল নামক এক প্রাচীন কাদামাটি স্তর, যা উপরের লবণাক্ত পানিকে ভূগর্ভের পানি থেকে আলাদা করে রাখে এবং এ কারণেই হাজার বছর আগের মিঠা পানিকে এখনো অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

বিশ্বজুড়ে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানি জনজীবন ও মিঠা পানির সম্পদের জন্য এক ক্রমবর্ধমান হুমকি। পাশাপাশি রয়েছে নদীতে লবণাক্ততার বিস্তার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর সাথে যুক্ত হয় আর্সেনিক দূষণ। আমাদের দেশে বিশেষ করে সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা অংশের প্রায় মানুষই ভোগেন পানি নিয়ে, বিশেষ করে নিরাপদ পানি নিয়ে।