এসএ গেমসে জিনাতের সম্ভাবনা কতটুকু

রফিকুল হায়দার ফরহাদ
Printed Edition
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌস
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌস

এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সেই ১৯৭৮ সাল থেকে। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে হয়েছিল সেই গেমস। এই গেমসে বাংলাদেশের প্রথম পদক জয় বক্সিংয়ে। তা ১৯৮৬ সালের সিউল এশিয়াডে সেনাবাহিনীর বক্সার মোশাররফ হোসেনের কল্যাণে। এই মোশাররফই ১৯৮৫ সালে ঢাকা সাফ গেমসে বাংলাদেশকে প্রথম স্বর্ণ এনে দেন। এরপর ১৯৯৩ সালে পুলিশের মোজাম্মেলের পর জুয়েল আহমেদ জনি ও আবদুর রহিমরা স্বর্ণ জয় করেন ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে। এরপর পুরুষ বা নারী দুই বিভাগেই বাংলাদেশের যেকোনো গেমসে বক্সিংয়ে পদক বলতে রৌপ্য আর ব্রোঞ্জেই আটকা। বাংলাদেশে নারী বক্সিংয়ের যাত্রাটা বেশি দিনের নয়। এরপরও তারা এসএ গেমসে পদক জিতেছে। এখন বাংলাদেশের বক্সিংয়ে যোগ হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জিনাত ফেরদৌস। এবারের ৩১তম জাতীয় বক্সিংয়ে তার স্বর্ণ জয় ৫২ কেজিতে। হারিয়েছেন সেনাবাহিনী আছিয়া ও আনসারের আফরা খন্দকার প্রাপ্তিকে।

জাতীয় বক্সিং আগেও হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আরো টুর্নামেন্টও। তবে এবারের মতো এত আগ্রহ কারো ছিল না বক্সিংকে ঘিরে। আর তা জিনাত ফেরদৌসের কারণে। বড় হয়েছেন মার্কিন মুল্লুকে। সব কিছুতেই স্মার্ট তিনি। এবারের আসরেতো তাকে দিয়ে পদকও দেয়ানো হয়েছে। যা অন্য পদক জয়ী বক্সারদের দিয়ে করানো হয়নি। জিনাত বাংলাদেশের বক্সিংয়ে যোগ হয়েছেন। এটা বিশাল ঘটনা দেশের বক্সিং জগতের জন্য। এখন বক্সিং ফেডারেশন কি পারবে তার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ফের এই বক্সিংকে জাগিয়ে তুলতে। আর জিনাত কি পারবেন এসএ গেমসে দেশকে স্বর্ণ এনে দিতে। তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবেন ভারতীয় প্রতিপক্ষরা।

এর আগে প্রবাসী ইমেজ কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন এবং জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশন। এক হামজা চৌধুরী আসার পর দেশের ফুটবল অনন্য উচ্চতায় চলে গেছে। যদিও তার উপস্থিতিতে দুর্বল ভুটান ছাড়া আর কোনো দেশের বিপক্ষে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে ভারতের সাথে ড্র আর সিঙ্গাপুরের কাছে ঘরের মাঠে হার। এশিয়ান কাপের এই দুই ম্যাচে জিততে ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশের এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলাটা ঘোর অনিশ্চয়তায়। এরপরও ইংলিশ ফুটবল লিগের লেস্টার সিটির এই খেলোয়াড়েরে লাল-সবুজ জার্সিতে আগমনের পর থেকে স্পন্সররা এখন ছুটছে বাফুফের পেছনে। ফুটবলপ্রেমীদের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে ম্যাচ দেখার টিকিট পেতে। ইংল্যান্ড প্রবাসী ইমরানুর রহমান লাল-সবুজ জার্সিতে খেলেই এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিক্সে স্বর্ণ জিতেছেন। জিমন্যাস্টিক্সে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাইক সিজার প্রথম আন্তর্জাতিক স্বর্ণ এনে দেন বাংলাদেশকে। এরপর তার কল্যাণেই অলিম্পিক গেমস, কমনওয়েলথ গেমস ও এশিয়ান গেমসে জিমন্যাস্টিক্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব। নিউজিল্যান্ড প্রবাসী আলী কাদের হকও জিমন্যাস্টিক্সে দেশকে একাধিক স্বর্ণ এনে দেন।

জিনাত অবশ্য এরই মধ্যে পাঁচটি আন্তর্জাতিক পদক জিতেছেন। এর মধ্যে গত বছর ক্যারিবিয়ান দ্বীপ রাষ্ট্র ডোমেনিকান রিপাবলিকে অনুষ্ঠিত কোপা ইন্ডিপেনডিয়েন্ট কাপ বক্সিংয়ে স্বর্ণ জয় করেন। যা বাংলাদেশের পরিচয়ে প্রথম। এবার জিতেছেন পর্তুগালের টুর্নামেন্টে স্বর্ণ। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বক্সিংয়ে এসএ গেমসে স্বর্ণ পুনরুদ্ধার। জিনাত কি পারবেন দেশের নারী বক্সিংয়ে এসএ গেমসে প্রথম স্বর্ণ এনে দিতে। জিনাত এই মিশনে সর্বাত্মক চেষ্টার কথা জানান।

বক্সিং ফেডারেশনও আশা দেখছেন নিউ ইয়র্কে বড় হওয়া এই নারী বক্সারকে ঘিরে। ফেডারেশন সেক্রেটারি আবদুল কুদ্দুস জানান, ‘জিনাতের অ্যাটাক এবং ডিফেন্স দু’টিই ভালো। সে বিদেশে উন্নত সরঞ্জামে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সুতরাং তার পক্ষে আগামী জানুয়ারিতে এসএ গেমসে স্বর্ণ জেতা সম্ভব। এ জন্য তাকে ট্রেনিংয়েই থাকতে হবে। সে সাথে এসএ গেমসের সময় দিনগুলোও ভালো যেতে হবে।’ রেফারি ও জাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কুদ্দুস জানান, ‘দেখা গেল ম্যাচের সময় হঠাৎ একটি বাজে পাঞ্চ খেয়ে বসলো। এতে সব শেষ।’

জিনাত-ইমেজ কাজে লাগানোর জন্য এখন তাকে আরো বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলাতে হবে। সেখানে পদকও পেতে হবে। নভেম্বরেই সৌদি আরবে ইসলামী সলিডারিটি গেমস। তবে সেখানে খেলার সুযোগ সেই জিনাতের। সেক্রেটারি কুদ্দুস জানান, ‘সলিডারিটি গেমসে বক্সিং ইভেন্টটি নেই। ফলে জিনাতের খেলা হবে না সেখানে।’

অবশ্য চলতি মাসেই চীনে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প এবং ক্যাম্প শেষে টুর্নামেন্ট আছে। সেখানে জিনাতকে পাঠানো যায় কিনা সে চেষ্টা করছে ফেডারেশন। এ ছাড়া রাশিয়াতেও দল পাঠানোর আমন্ত্রণ পেয়েছে ফেডারেশন। কুদ্দুসের মতে, ‘আসলে আমাদের মতো ফেডারেশনগুলো আর্থিক সঙ্কট প্রকট। বিদেশে খেলতে শুধু একজন বক্সার পাঠালেই তো হবে না। সাথে কোচ, ম্যানেজারও পাঠাতে হয়। এতে বিশাল অর্থ ব্যয় হয়। এত টাকা জোগাড় করাও একটি বিষয়।’ তার দেয়া তথ্য, এবার জিনাতকে বাংলাদেশে এনে খেলাতেই ব্যয় হয়েছে ৪-৫ লাখ টাকার মতো। অবশ্য এই টাকা তার ক্লাবই বহন করেছে।

জিনাত-টনিক কাজে লাগিয়ে বক্সিংয়ে এগিয়ে যেতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন। ফেডারেশন সেক্রেটারি জানান, আমরা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছি। সেখানে থেকে মিলেছে আশ্বাস। সে সাথে আমাদের বক্সার খুঁজে বের করতে হবে সারা দেশ থেকে। তাহলেই সাফল্য আসবে। জাতীয় দলের জন্য আনতে যাচ্ছি কিরগিজস্তানের কোচকে।