মেয়াদ পূর্তির আগেই বীমার টাকা তুলে নিতে এনসিটিবির পাঁয়তারা

নিজস্ব ফান্ডের ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা গচ্চা যাবে

শাহেদ মতিউর রহমান
Printed Edition

মেয়াদ পূর্তির আগেই জীবন বীমার টাকা তুলে নিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ১২২ কর্মকর্তা কর্মচারী। জমাকৃত প্রিমিয়ামের সাড়ে তিন কোটির বেশি টাকা গচ্চা দিয়েই এই টাকা তুলে নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বীমা আইনের শর্ত মোতাবেক মেয়াদ পূর্তির আগে টাকা তুলে নিলে জমাকৃত প্রিমিয়ামের পুরো অর্থ পাওয়া যায় না। সূত্র মতে, এনসিটিবির স্থায়ী পদে কর্মরত (বিভিন্ন পদমর্যাদার) এই ১২২ জন কর্মকর্তা কর্মচারী তাদের চাকরির মেয়াদ শেষেই বোনাসসহ জমাকৃত প্রিমিয়াম এবং লাভের অংশের টাকা তুলে নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছু কর্মকর্তা অবৈধ সুবিধা নিয়ে কর্মকর্তাদের নগদ টাকা মেয়াদ পূর্তির আগেই তুলে নিতে প্রলুব্ধ করছেন। আর এতে এনসিটিবির নিজস্ব ফান্ডেরই তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা গচ্চা যাচ্ছে। যদিও প্রিমিয়ামের এই অর্থ তুলে বিলিবণ্টন করার ক্ষমতা বা এখতিয়ার এনসিটিবির রয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

এদিকে ১২২ কর্মকর্তা কর্মচারীর মধ্যে বেশির ভাগ কর্মচারী তাদের বীমার টাকা না তুলে বরং মেয়াদ পূর্তির পর লাভসহ তুলতে চাইছেন। কিন্তু এনসিটিবির শ্রমিক সংগঠনের কিছু নেতা এবং কিছুদিনের মধ্যে অবসরে যাবেন এমন অনেক কর্মকর্তা অন্যদের টাকা তুলে নিতে নানাভাবে প্রলুব্ধ করছেন। এতে অনেকে রাজি না থাকলেও বাধ্য হয়ে তারা প্রিমিয়াম হিসেবে জমা টাকার চেয়ে অনেক কম টাকা তুলে নিতে রাজি হচ্ছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে কিছু কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত), সদস্য (অর্থ) এবং এনসিটিবির সচিবকে ম্যানেজ করে জমাকৃত প্রিমিয়ামের পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪২১ টাকা থেকে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা গচ্চা দিয়ে মাত্র দুই কোটি ১৩ লাখ টাকা তুলে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকছেন। এতে মেয়াদ পূর্তির পর তারা জমাকৃত পুরো টাকা লাভসহ পাওয়ার সুযোগ নিজেরাই হাতছাড়া করছেন। মূলত কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর ব্যক্তিগত ইচ্ছা আর লাভের জন্য।

এনসিটিবির বাজেট ও অডিট বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল হামিদ জানান, প্রেষণে নিযুক্তসহ এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা এখন ২৪১ জন। যদিও শূন্য পদের সংখ্যাই অর্ধশতাধিক। অর্থাৎ এনসিটিবির মোট পদ সংখ্যা ৩১১ জন (পুরাতন অর্গানোগ্রামে)। স্থায়ী পদের মধ্যে এখন কর্মরত আছেন প্রথম শ্রেণীর ছয়জন কর্মকর্তা, দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা আছেন ১৮ জন। তৃতীয়সহ মোট সংখ্যা হচ্ছে ৪৯ জন। তবে নতুন অর্গানোগ্রামে আরো বেশ কিছু পদ সৃজনের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। সেটি নিয়েও কাজ চলমান আছে।

এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার এনসিটিবির সদস্য (অর্থ) মোহা: নায়েব আলী নয়া দিগন্তকে বলেন, বিষয়টি এনসিটিবির অর্থ বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত নয়। কাজেই এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে চেয়ারম্যান এ বিষয়ে ভালো জানেন। পরে চেষ্টা করেও এনসিটিবির চেয়ারম্যানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গতকাল তিনি জরুরি মিটিংয়ে অফিসের বাইরে আছেন বলে জানানো হয়েছে।

অন্য একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্বে থাকা এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী আগামীকাল বৃহস্পতিবার পিআরএলে চলে যাচ্ছেন। তাই আজ এবং আগামীকালের মধ্যেই বীমার টাকা তুলে নেয়ার জন্য কিছু কর্মকর্তা এই দুই দিনকে কাজে লাগাতে চাইছেন। অবশ্য বীমার আওতায় থাকা বেশির ভাগ কর্মকর্তা এবং কর্মচারী মেয়াদপূর্তির পরেই তাদের লাভসহ জীবন বীমার টাকা তুলতে চান। এ বিষয়ে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং শিক্ষাসচিবের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন।

তবে এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক মো: সাহতাব উদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারীদের ইচ্ছার পরিপ্রেক্ষিতেই মূলত জীবন বীমার প্রিমিয়ামের টাকা তুলে তাদের দেয়া হবে। আর এটা অনেকটা বাধ্য হয়েই করতে হচ্ছে। কেননা ২০১৬ সালের পর থেকে এই জীবন বীমার প্রিমিয়ামের কিস্তির টাকা ব্যাংকে জমা হচ্ছে না। ফলে অনেকে চাকরি থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেও তারা বীমার টাকার কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে কর্মচারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই এখন জীবন বীমার লাভের দিকে না তাকিয়ে কিছু টাকা লস দিয়ে হলেও বাকি টাকা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।