উভয় দিকেই নজরকাড়া পারফরম্যান্স পাকিস্তানের। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনারের উড়ন্ত সূচনা। ৮৪ রান করেন সাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামান। বল হাতেও শুরুতে ফাহিম আশরাফ দুই উইকেট নিয়ে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় ব্যাটারদের। তারপর শাহীন শাহ আফ্রিদিও নিলেন উইকেট। ২০ রানে তিন উইকেট নিয়ে শিরোপার প্রত্যাশা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল টিম পাকিস্তান। কিন্তু ব্যাটিং ও বোলিংয়ে শেষটা রাঙাতে পারেনি সালমান আগা বাহিনী। তাতেই রেকর্ড নবম বারের মতো শিরোপা জিতে নিলো ভারত। ৪১ বছর পর পাকিস্তান-ভারত ফাইনালে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রান করে পাকিস্তান। জবাবে তিলক বর্মার অপরাজিত ৬৯ রানে দুই বল বাকি থাকতে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রান করে, এক আসরে তিনবার পাকিস্তানকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। এটি এশিয়া কাপে ভারতের নবম শিরোপা।
বিশেষ করে ফারহানের ঝড়ো ফিফটিতে শক্ত ভিত পেয়েছিল পাকিস্তান। দারুণ শুরুর পর মুখ থুবড়ে পড়ল পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। সাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামানের ঝড়ো সূচনা যেন একসময় ২০০ রানের আশায় ভাসিয়েছিল দলটিকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাকিস্তানের শুরু দেখে অনেকে বলেছিলেন, ২০০ রানের লক্ষ্য দাঁড় করাবে। কিন্তু বাস্তবতা হয়েছে ঠিক উল্টো। দুর্দান্ত সূচনা করেও ২০ ওভার টিকতে পারেনি তারা। চাপের মুহূর্তে ভেঙে পড়া পাকিস্তানের পুরনো ব্যাধি যেন আবারও সামনে এলো। ওপেনারদের ভালো শুরু ব্যর্থ করে দিলো মিডল অর্ডারের দায়িত্বহীন ব্যাটিং। মিডল অর্ডার ব্যাটাররা একেকজন যেন রীতিমতো আত্মহত্যা করলেন! সালমান আলি-হারিসদের ব্যর্থতায় দেড়শর আগেই অলআউট পাকিস্তান।
ফাইনালের চাপ সামলে পাকিস্তানকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামান। বিশেষ করে ফারহানের দারুণ ব্যাটিং নজর কেড়েছে। ভারতের সাথে সর্বশেষ দেখায়ও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন। গতকালও শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। নতুন বলে জাসপ্রিত বুমরাহ কিংবা মাঝের ওভারে কুলদীপ যাদবের মতো চায়নাম্যান, সবাইকেই স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছেন ফারহান। বড় ম্যাচে এসে ৩৫ বলে ফিফটির মাইলফলক ছুঁয়েছেন। সবমিলিয়ে ৩৮ বলে ৫৭ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।
ফারহান ফিরলে ভাঙে ৮৪ রানের উদ্বোধনী জুটি। এরপর সাইম আইয়ুবকে সাথে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ফখর। তবে ১১ বলে ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি। এরপরই যেন ধস নামে পাকিস্তানের ইনিংসে। মোহাম্মদ হারিস-সালমান আলি আগারা দাঁড়াতেই পারেননি। বাকিদের আসা যাওয়ার মাঝেও ফখর জামান এক প্রান্ত আগলে রেখে ৩৫ বলে ৪৬ রানের বেশি করতে পারেননি। ফখর ফিরলে বেশিক্ষণ টিকেনি পাকিস্তানের ইনিংস। শেষ ২০ রান যোগ করতেই হারায় ৭ উইকেট। প্রথম তিন ব্যাটার ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। পাকিস্তানের ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে বড় ধস নামিয়েছেন কুলদীপ। আর দু’টি করে উইকেট নেন বুমরাহ, বরুণ ও অক্ষর।
জবাবে খেলতে নেমে পাকিস্তানি বোলারদের তোপে যেন চোখে সর্ষেফুল দেখল ভারতীয় টপ অর্ডার। ১০ রানে ২ উইকেট হারায় ভারত। দারুণ ছন্দে থাকা অভিষেক শর্মা এদিন বেশিদূর এগোতে পারেননি। ফাহিম আশরাফের স্লোয়ারে ছক্কার চেষ্টায় আকাশে বল তুলে দিলে মিড অনে হারিস রউফের হাতে ধরা পড়ে শেষ হয়েছে তার ৬ বলে ৫ রানের ইনিংস। তৃতীয় ওভারে ভারতীয় অধিনায়ক সুরিয়াকুমার যাদবকে এক রানে ফিরিয়েছেন শাহীন আফ্রিদি। ফাহিমের আগের বলেই বাউন্ডারি মেরেছিলেন গিল। পরের বলে মিড অনে আবার উড়িয়ে মারতে গিয়ে হারিস রউফের হাতে ধরা পড়েন ১০ বলে ১২ রান করা গিল। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৩৬ রান ৩ উইকেট হারায় ভারত।
আক্রমণে এসেই সাফল্য পেতে পারতেন আবরার আহমেদ। লেগ স্পিনারের বলে সাঞ্জু স্যামসনের ক্যাচ ছাড়লেন হুসাইন তালাত। তখন তিনি ছিলেন মাত্র ১২ রানে। শর্ট বলে ঠিকমতো পুল করতে পারেননি এই কিপার। ডিপ মিড উইকেট থেকে সামনের দিকে এগিয়ে বলে হাত ছোঁয়ালেও মুঠোয় নিতে পারেননি তালাত। লাইফ পেয়ে ৪১ বলে তিনটি করে চার ছক্কায় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিলক। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৬৯ রানে। ৫৩ বলে তিন চার ও চার ছক্কায় ওই রান করেন তিনি।
তিলাক ও সাঞ্জু স্যামসন চতুর্থ উইকেটে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৪৩ বলে গড়েছেন পঞ্চাশ রানের জুটি। এরপর চতুর্থ উইকেটের পতন। ১২.২ ওভারে দলীয় ৭৭ রানে আবরারের বলে সাহিবজাদা ফারহানকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ২৪ রান করা স্যামসন। ১৯তম ওভারের শেষ বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ আউট হন ২৪ রান করা শিভম দুবে। শেষ পর্যন্ত ১৯.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫০ রান করে করে শিরোপা জিতে নেয় ভারত। তিলক ৬৯ রানে এবং রিংকু ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ফাহিম আশরাফ তিনটি, আবরার ও শাহীন একটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : টস ভারত (ফিল্ডিং)
পাকিস্তান : ১৯.১ ওভারে ১৪৬ (ফারহান ৫৭, ফখর ৪৬, সাইম ১৪, হারিস ০, সালমান ৮, তালাত ১, নাওয়াজ ৬, আফ্রিদি ০, ফাহিম ০, রউফ ৬, আবরার ১*; বুমরাহ ২/২৫, বরুন ২/৩০, অক্ষর প্যাটেল ২/২৬, কুলদীপ ৪/৩০)।
ভারত : ১৯.৪ ওভারে ১৫০/৫ (অভিষেক ৫, গিল ১২, সুরিয়াকুমার ১, স্যামসন ২৪, শিভম ৩৩, রিংকু ৪, শাহীন ১/২০, আবরার ১/২৯, ফাহিম ৩/২৯)।
ফল : ভারত ৫ উইকেটে জয়ী।



