ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নির্বাচনী উত্তাপ

প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি মাঠে সক্রিয় জামায়াত

এম এ করিম, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
Printed Edition

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরের একাংশ) সংসদীয় আসনে এখনো দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। তবে লড়াই করতে চান বিএনপির অর্ধ ডজন প্রার্থী। তারা প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে কাজ করছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে একজন হলেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। এ ছাড়া আরো যারা বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে চান তারা হলেন- বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মো: শামীম, জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা মো: আহসান উদ্দিন খান শিপন, কেন্দ্রীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস এন তরুণ দে, ড্যাব নেতা ডা: নাজমুল হুদা বিপ্লব ও সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুজ্জামান লস্কর তপুসহ বিএনপির আটজন প্রার্থী।

এ নির্বাচনী এলাকার মোট ১৯টি ইউনিয়নে (সরাইলে-৯টি, আশুগঞ্জে-৮টি ও বিজয়নগরে-২টি) ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৯২ হাজার ৭৯৭ জন। তবে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ পেলে ভোটার সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে। বর্তমানে পুরুষ দুই লাখ ৬১ হাজার ৩৯ জন, মহিলা দুই লাখ ৩১ হাজার ৭৫৬ জন এবং ট্রান্সজেন্ডার ভোটার আছেন দুইজন। সরাইল উপজেলায় মোট ভোটার দুই লাখ ৮৫ হাজার ১৭৬। আশুগঞ্জে মোট ভোটার এক লাখ ৫০ হাজার ৬৯৪ জন এবং বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা ও বুধন্তী ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ৫৬ হাজার ৯২৭ জন।

এই আসনটিতে বিএনপি এখনো তাদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। আলোচনায় আছে- এই আসনটিতে বিএনপি জোটের শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবিব মনোনয়ন পেতে পারেন। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে কেউবা স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারেন- এমন আলোচনাও রয়েছে চুন্টায় বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ রহিমকে নিয়ে।

এই আসনে বিএনপির প্রার্থীতা ঘোষণা না করার কারণে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী, জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মাওলানা মোবারক হোসাইন আকন্দ। নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় তিনি পাঁচটি মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছেন। এর মধ্যে আশুগঞ্জে দু’টি এবং সরাইলে তিনটি ক্যাম্প করে অসহায় মানুষকে ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর এই প্রার্থী। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে বিতরণ করেছেন এক ডজন হুইলচেয়ার।

প্রার্থী হিসেবেও মাওলানা মোবারক হোসাইন আকন্দের আলাদা ভাবমূর্তি রয়েছে। তিনি সরাইল, আশুগঞ্জ এবং বিজয়নগরে সবার কাছে একজন পরিচিত ব্যক্তি। তিনি আশুগঞ্জ উপজেলার আন্দিদিল গ্রামের বাসিন্দা। এই উপজেলায় বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও দল থেকে মনোনয়ন ঘোষণা না করায় আপাতত মোবারক হোসাইন আকন্দ ছাড়া আশুগঞ্জ উপজেলা থেকে আর কোনো প্রার্থী নেই। সেই হিসেবে এলাকার মানুষ হিসেবে তিনি বাড়তি সুবিধা তো পাবেনই।

এদিকে সরাইল উপজেলায়ও জামায়াত শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। এই নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে জামায়াতের নেতাকর্মীরা গত পাঁচ-ছয় মাস আগে থেকেই ভোটের জন্য মানুষের কাছে যাচ্ছেন। প্রার্থী নিজে উপস্থিত থেকে গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহলল্লায় সভা-সেমিনার ও উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন নিয়মিত।

সরাইল উপজেলার বিএনপির দাবি- এই আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বাইরে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে জামায়াত প্রার্থীর ভাগ্য খুলে যাবে। নির্বাচনী এলাকার প্রায় সর্বত্রই উঠান বৈঠক করে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে জামায়াত।

উপজেলা জামায়াতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মো: নুরুজ্জামান জাবেদ বলেন, এই আসনে আমাদের দলীয় প্রার্থী এমপি হতে পারলে সব ক্ষেত্রে ন্যায়নীতি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকার প্রায় ৬০-৭০ ভাগ গ্রামে তার গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক শেষ হয়েছে।

এই আসনে জাতীয় পার্টির কোনো তৎপরতা নেই। জাসদ (রব) থেকে অ্যাডভোকেট তৈমুর রেজা, মো: শাহজাদা ভূঁইয়া, জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফ মাহাদী এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এ ছাড়াও কমিউনিস্ট পার্টি থেকে দেবদাস সিংহ রায়, খেলাফতে মজলিসের মাওলানা মাইনুল ইসলাম খন্দকার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মাওলানা নেছার আহমেদ নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন।