অঢেল অর্থ হাসিনার সোয়া ১০ কোটি টাকার সম্পদ কামালের

মানবতাবিরোধী অপরাধে পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সাথে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্তেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই আদেশের পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে আসলে তাদের সম্পদের পরিমাণ কত?

নয়া দিগন্ত ডেস্ক
Printed Edition

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সাথে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্তেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই আদেশের পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে আসলে তাদের সম্পদের পরিমাণ কত? নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেয়া হলফনামা, আয়কর রিটার্ন ও সম্পদ বিবরণী ঘেঁটে তাদের সম্পদের যে তথ্য পাওয়া গেছে তা হলো-

শেখ হাসিনার সম্পদ

ঢাকার পাশে পূর্বাচলে শেখ হাসিনার ১০ কাঠা আয়তনের প্লট, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১৫ দশমিক ৩ বিঘা কৃষিজমি ও তিনতলা ভবনসহ ৬ দশমিক ১০ শতাংশ (আংশিক) জমিও আছে।

২০২৪ সালে জমা দেয়া আয়কর রিটার্নে বলা হয়েছে, টুঙ্গিপাড়া, গাজীপুর ও রংপুরে তার মোট ১৫ দশমিক ৫০ বিঘা অকৃষিজমি রয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে মৌচাকের তেলিরচালা এলাকায় বাংলাদেশ স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পূর্ব পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘেঁষে রয়েছে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের একটি বাগানবাড়ি।

স্থানীয় ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৭০ সালের দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এ জমি লিখে দিয়েছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক হয়েছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জমির কিছু অংশ সন্তানদের লিখে দেন। সেই সূত্রে মালিক হন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ এবং শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক। নথিপত্রে জমির পরিমাণ ২৯৭ শতক (৯ বিঘা)।

হলফনামায় বলা হয়, মোট জমির মধ্যে ৬ দশমিক ৬৫ ডেসিমেল জমি সরকার অধিগ্রহণ করেছে। গহনা রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকার, আসবাবপত্র সাড়ে ৭ লাখ টাকার, দু’টি গাড়ি, এসি এবং ব্যাংকে প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকাসহ তার মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ কোটি ৭১ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকা। আয়কর রিটার্নে আরো উল্লেখ করা হয়, এর আগের অর্থবছরে তার মোট সম্পদ ছিল ৯ কোটি ২৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭০৮ টাকা, সেখান থেকে তিনি মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ৫ কোটি টাকা উপহার দেন।

‘ডামি নির্বাচন’ নামে পরিচিত ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রার্থী হিসেবে ইসিতে জমা দেয়া হলফনামায় তিনি ১৫ দশমিক ৩ বিঘা কৃষি জমির অর্জনকালীন মূল্য দেখান ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। পূর্বাচলের অকৃষি জমির মূল্য দেখান ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। তিনতলা ভবনের ৬ দশমিক ১০ শতাংশ জমির অর্জনকালীন মূল্য দেখানো হয় ৫ লাখ টাকা।

হাসিনা হলফনামায় তিনটি মোটরগাড়ি দেখিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি উপহারের। সেটির দাম দেখাননি। বাকি দু’টির দাম দেখিয়েছিলেন সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা। সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দাম দেখিয়েছিলেন ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা আর আসবাবের দাম ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেখিয়েছিলেন। এ ছাড়া ব্যাংকে প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকাসহ সবমিলিয়ে তখন ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৯৬ হাজার ১০৭ টাকার সম্পদ দেখিয়েছিলেন পলাতক এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, শেখ হাসিনা তার হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এ জন্য তারা ইসিকে ব্যবস্থা নিতে বললে কমিশন জানায়, বর্তমান আইনে এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটির মালিকানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের হাতে রয়েছে। শেখ হাসিনার বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনের মালিকানা রয়েছে সজীব ওয়াজেদ ও সায়মা ওয়াজেদের নামে।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নিজ নামে, ছেলে সজীব ওয়াজেদ, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, ছোট বোন শেখ রেহানা (রেহানা সিদ্দিক), রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের (রূপন্তী) নামে পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। সব মিলিয়ে এই পরিবারের ছয়জন মোট ৬০ কাঠা জমি পেয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে এসব প্লট বরাদ্দের অভিযোগে দুদকের মামলা চলছে এখন।

আসাদুজ্জামান খানের সম্পদ

অপর দিকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ঢাকা-১২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি যে হলফনামা দিয়েছিলেন, তাতে ঘোষিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের বিবরণীতে তিনি উল্লেখ করেন-

নগদ অর্থ আছে ৮৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৮২ লাখ টাকার মতো। বন্ড ও শেয়ার ছিল প্রায় ২৪ লাখ টাকার। ডাকঘর, সঞ্চয়পত্র অথবা স্থায়ী আমানত ২ কোটি ১ লাখ টাকা।

দু’টি মোটরগাড়ির দাম দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ও আসবাব ২ লাখ টাকার। ঋণ বাবদ ব্যবসার মূলধন দেখিয়েছিলেন ২ কোটি ২০ লাখ টাকার। সোনা দেখান ১০ ভরি, তবে দাম উল্লেখ ছিল না।

হলফনামা অনুযায়ী, আসাদুজ্জামান খানের কৃষি জমির পরিমাণ ১৭১ শতাংশ (৫ বিঘার বেশি), যার অর্জনকালীন মূল্য ১ কোটি ৬ লাখ টাকা। অকৃষি জমি সাড়ে ১৮ শতাংশ, যার অর্জনকালীন মূল্য সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা। তিনি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের ঘরে দু’টি সম্পদের মূল্য দেখান। একটি গ্রামের বাড়ি বলে উল্লেখ করেন, যার অর্জনকালীন মূল্য ৮০ লাখ টাকা। অন্য দিকে আরেকটির মূল্য দেখানো হয় প্রায় ১৩ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে আসাদুজ্জামান খানের সম্পদের অর্থমূল্য ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকার মতো (১০ ভরি সোনার মূল্য বাদে)।

আসাদুজ্জামান খানের সম্পদের অনুসন্ধানও করছে দুদক। জ্ঞাত আয়ের বাইরেও তার সম্পদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। দুদক এ বিষয়ে মামলা করেছে। আদালতে বলা হয়েছে, তিনি অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন ও দখলে রেখেছেন।