ব্রিটেনে বাংলাদেশীসহ ৮০ হাজার পরীক্ষার্থীর ভিসা বাতিল

জালিয়াতি করে আইইএলটিএস পাস

অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ থেকে গত কয়েক বছরে যে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও যারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় ব্রিটেন গেছেন, তাদের অনেকেই জালিয়াতির মাধ্যমে আইইএলটিএস পাস করে ব্রিটেনে এসেছেন।

আবদুল কাদের তাপাদার, সিলেট ব্যুরো
Printed Edition

আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিসটেম) পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে লক্ষাধিক অভিবাসী স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় ব্রিটেনে এসেছেন, এমন অভিযোগ সামনে নিয়ে এসেছে ব্রিটিশ হোম অফিস। এ অভিযোগে প্রায় ৮০ হাজার পরীক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। যারা প্রকৃতপক্ষে আইইএলটিএস পাস করেননি। অভিযুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত, তাইওয়ানসহ কয়েকটি দেশ। লন্ডন হোম অফিসের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন আইনজীবী এমন তথ্য জানিয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ থেকে গত কয়েক বছরে যে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও যারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় ব্রিটেন গেছেন, তাদের অনেকেই জালিয়াতির মাধ্যমে আইইএলটিএস পাস করে ব্রিটেনে এসেছেন।

ব্রিটিশ হোমের অভিযোগে বলা হয়, পুলিশের একটি চক্র যারা মূলত আইইএলটিএস পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার গ্যারান্টি দিত এবং বিনিময়ে এক হাজার থেকে শুরু করে দুই হাজার ৫০০ পাউন্ড পর্যন্ত চার্জ গ্রহণ করত। এর সত্যতা যাচাইয়ের পর প্রায় ৮০ হাজার পরীক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। যারা শুধু বাংলাদেশ, ভারত, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী। এদের অনেকেই প্রকৃতপক্ষে পাস করেনি; জালিয়াতির মাধ্যমে ভুল নম্বর দেখিয়ে তাদের ‘পাস’ দেখানো হয়েছিল। এসব ভুলভাবে উত্তীর্ণদের চিহ্নিত করা শুরু করেছে ব্রিটিশ সরকার। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ইংরেজি ভাষা পরীক্ষা আইইএলটিএসের বহু স্কোর ভুল ছিল। ব্রিটিশ কাউন্সিল, ক্যামব্রিজ প্রেস অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি অ্যাসেসমেন্ট ও আইডিপি যৌথভাবে এ পরীক্ষাটি পরিচালনা করে।

আইইএলটিএস কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে লিসনিং ও রিডিং অংশে ভুল স্কোর তৈরি হয়। তাদের মতে, মাত্র ১ শতাংশ পরীক্ষায় সমস্যা হয়েছিল, তবে পরবর্তীতে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৮ হাজার পরীক্ষার্থী। ভুলটি ধরা পড়ার পর পরীক্ষার্থীদের নতুন স্কোর পাঠিয়ে ক্ষমাও চাওয়া হয় ।

এ দীর্ঘ বিলম্বের ফলে ভুলভাবে উত্তীর্ণ অনেক শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, এমনকি এনএইচএস-এ চাকরি নিয়েও ব্রিটেনে চলে এসেছেন। বাংলাদেশ, চীন ও ভিয়েতনামে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তাই অভিবাসন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

একটি আলাদা তদন্তে উঠে এসেছে, এসব দেশে সঙ্ঘবদ্ধ চক্র প্রশ্নফাঁস করে অভিবাসীদের কাছে বিক্রি করেছে। বাংলাদেশে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা এক হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ পাউন্ড নিত প্রশ্ন ফাঁসের জন্য।

ভিয়েতনামে পরীক্ষার আগ মুহূর্তে ব্রিটিশ কাউন্সিল পুরো সেশন বাতিল করে ব্রেক-আপ পরীক্ষা নিতে বাধ্য হয় সম্ভাব্য প্রশ্নফাঁসের কারণে। চীনেও প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ব্রিটেনের এনএইচএস-এ এ ধরনের ঝুঁঁকির কারণ হচ্ছে অনেক কর্মী পর্যাপ্ত ইংরেজি জানেন না। প্রশ্নফাঁসের সুযোগ নিয়ে তারা চাকরি পেয়েছেন।

এনএইচএস-এর কিছু কর্মীর ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা এতটাই কম যে রোগীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। এক ঘটনায় জানা যায়, একজন কেয়ার-ওয়ার্কার ‘ব্লিডিং’, ‘অ্যালার্জড’ ও ‘আলাইভ’ শব্দের পার্থক্য বুঝতে পারেননি, ফলে জরুরি সেবায় বিলম্ব ঘটে। এ বিষয়ে সমালোচনা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টি বলছে, যারা ইংরেজি পরীক্ষায় প্রকৃতভাবে উত্তীর্ণ হতে পারেননি, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিলিপ বলেছেন, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ ইংরেজি না জেনেই বসবাস করছেন। এর মধ্যে আরো ৭৮ হাজার জন ভুল স্কোরের কারণে অনাকাক্সিক্ষতভাবে ভিসা পেয়েছেন, এটাই এক ধরনের বিপর্যয়। তিনি বলেন, অধিবাসীরা ইংরেজি না জানলে তারা সমাজে একীভূত হতে পারে না এবং রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, কারণ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভর্তির স্থগিতাদেশ দিয়েছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।

এ দিকে, ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, কিছু ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কিছু ভর্তির আবেদন সাময়িক স্থগিত করেছে, ভিসা সিস্টেমের অপব্যবহার ও ভাষা দক্ষতার অপ্রতুলতার কারণে।