রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে এখনো ক্রেতারা পুরোপুরি স্বস্তি ফিরে পাননি। সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। অন্য দিকে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে। এক ডজন ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা দোকানে।
রাজধানীর বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, শীতের আগাম সবজি আসতে শুরু করায় সবজির দাম কিছুটা নিম্নমুখী। বিক্রেতারা বলছেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বাজারে নতুন সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম আরো কমবে। তবে ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির দাম তুলনামূলক বেশি থাকায় ক্রেতারা এখন ডিমের দিকে ঝুঁকছেন, ফলে চাহিদা বেড়েছে।
গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর, রামপুরা, মালিবাগ, তেজগাঁও ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, আলু, পেঁপে, বেগুন, মুলা, শসা ও কচুরমুখির মতো সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে।
রামপুরা বাজারে একটি ভ্যানে ৬ কেজি আলু বিক্রি হচ্ছিল ১০০ টাকায়। অবশ্য বাজারের ভেতরে আলু কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে ২০-৩০ টাকা কেজি। বেগুনের দাম কিছুটা কমে ৮০-১০০ টাকায় নেমে এসেছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৬০ টাকা। মুলা, শসা ও কচুরমুখি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে। পটোল এখনো ৭০-৮০ টাকা কেজিতে স্থির রয়েছে। চিচিঙ্গা ৫০-৬০, করলা-৮০-১০০, ধুন্দুুল ৬০-৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
তবে কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমে আবার বেড়েছে। গত সপ্তাহে যেখানে মরিচ ১৬০ টাকা কেজির নিচে পাওয়া যায়নি মাঝে ১২০-১৪০-এ নেমেছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে খুচরায় ১৮০-২০০ টাকা দরে। দুই সপ্তাহ আগে বৃষ্টির কারণে মরিচের দাম এক লাফে ৪০০ টাকায় পৌঁছেছিল। বাজারে এখনো শীতের আগাম সবজি যেমন শিম, ফুলকপি ইত্যাদি দামি। শিম বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৬০ টাকা কেজিতে, ঢেঁড়স, ঝিঙে, কাঁকরোল ইত্যাদি ৬০-৮০ টাকা দরে। নতুন বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
সবজি বিক্রেতা জুবায়ের আলী বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা কমেছে। নতুন কোনো বিপত্তি না ঘটলে দাম আর বাড়বে না। বরং শীতের সবজি এলেই দাম আরো কমবে।
বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি। সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী মিলমালিকরা প্রতি লিটার ৬ টাকা এবং পামতেলে ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনো অনুমোদন দেয়নি। ফলে খুচরা বাজারে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সয়াবিন তেলের দুই লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৩৭৫-৩৭৮ টাকায়, পাঁচ লিটারের বোতল ৯২০-৯২২ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৮৫-১৯০ টাকা, আর পামতেল ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সেগুনবাগিচা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী সিফাত বলেন, ‘ডিলাররা জানিয়েছেন দাম বাড়তে পারে, কিন্তু এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। সকালে ভোক্তা অধিদফতরের কর্মকর্তারা এসে খোঁজ নিয়ে গেছেন।
সবজির দাম কিছুটা কমলেও ডিমের বাজারে উল্টো প্রবণতা দেখা গেছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কাওরান বাজারে গতকাল দেখা গেছে, ফার্মের বাদামি ডিম ডজনে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০ টাকা। সাদা ডিমের দাম তুলনামূলক কিছুটা কম-ডজনে ১৪৫ টাকা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছের দাম বেশি হওয়ায় ডিমের চাহিদা বেড়েছে।
তেজগাঁওয়ের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী আমানত উল্লাহ বলেন, ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় অন্যান্য মাছের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে। এতে মানুষ ডিমের দিকে ঝুঁকেছে। তাই দাম বেড়েছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
ফার্মের মুরগির দামেও কিছুটা ওঠানামায় রয়েছে। সোনালি জাতের মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৯০-৩১০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০ টাকার বেশি। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়।
ভোজ্যতেলের মতো চিনি, ডাল, আদা ও রসুনের দামও গত সপ্তাহ থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকা কেজিতে। ছোট দানার মসুর ডাল ১৫০-১৬০ টাকা, মাঝারি দানার ১৩০-১৪৫ টাকা, আর বড় দানার ডাল ১১৫-১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম স্থির আছে ৭০-৮০ টাকায়।
চালের বাজারেও উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের মধ্যে ডায়মন্ড, মঞ্জুর ও সাগর ব্র্যান্ড ৮০ টাকা, রশিদ ব্র্যান্ড ৭২ টাকা এবং মোজাম্মেল মিনিকেট ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে বাজারে মাছের দাম আগের মতোই চড়া রয়ে গেছে। মাছের সরবরাহ কমে যাওয়ায় রুই, কাতলা ও তেলাপিয়ার দাম কিছুটা বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর বাজারে সবজির দাম ধীরে ধীরে কমছে, তবে এখনো তা স্বস্তিকর নয়। নতুন মৌসুমের সবজি বাজারে আসা শুরু হলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে সবজির দাম আরো ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।