ফিল্মের লাইনটা আমি পুরোপুরি জানি : পপি

সাকিবুল হাসান
Printed Edition
ফিল্মের লাইনটা আমি পুরোপুরি জানি : পপি
ফিল্মের লাইনটা আমি পুরোপুরি জানি : পপি

নব্বই দশকের শেষ ভাগে ঢাকাই চলচ্চিত্রে পা রেখেছিলেন সাদিকা পারভীন পপি। ‘কুলি’, ‘কারাগার’, ‘লাল বাদশা’, ‘বিদ্রোহ চারিদিকে’, ‘গঙ্গার পাড়’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। লম্বা সময় ধরে ছিলেন ঢালিউডের অন্যতম শীর্ষ নায়িকা। তবে ২০২০ সালে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ সিনেমার শুটিংয়ের পর হঠাৎ করেই গাঢাকা দেন তিনি। চারপাশে শুরু হয় গুঞ্জন- কোথায় পপি? কী করছেন এখন? দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবারো প্রকাশ্যে এলেন এই চিত্রনায়িকা। জানালেন, তিনি বিয়ে করেছেন, হয়েছেন একজন সন্তানের মা। পারিবারিক জীবনে স্থিতির খোঁজে এই আড়ালে যাওয়া। তবে এত বছর পর ফিরে এসে চমকে দিলেন তার নতুন সিদ্ধান্ত দিয়ে তিনি আর অভিনয়ে ফিরছেন না। এবার ফিরবেন প্রযোজক হিসেবে। শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার সময় পপি বলেন, ‘অভিনয়ে ফিরব না, এটি একেবারেই নিশ্চিত। তবে পুরোনো কিছু অসমাপ্ত কাজ আছে, সেগুলো শেষ করব। এরপর আমি নিজের মতো করে সিনেমায় ফিরব, সেটি প্রযোজক হিসেবে।’ তার ভাষায়, সিনেমা প্রযোজনা তার জন্য নতুন কিছু নয়। আগেও এই ভূমিকায় কাজ করেছেন, যদিও সেই অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। ‘মনোয়ার খোকন পরিচালিত একটি ছবির প্রযোজনা করেছিলাম। টিমের অসহযোগিতার কারণে তখন প্রায় ২০ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হয়েছিল। তবে এবার আমি অনেক পরিপক্ব। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে নানা রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। ফিল্মের লাইনটা আমি পুরোপুরি জানি। এবার প্রযোজনা করলে ভালো করব বলেই বিশ্বাস।’

অনেকেই হয়তো জানেন না, পপি কেবল একজন সফল অভিনেত্রীই ছিলেন না, তিনি একজন প্রযোজক হিসেবেও নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ‘কিডন্যাপ’, ‘জীবন মানেই যুদ্ধ’সহ আরো দু’টি ছবির প্রযোজনা করেছেন তিনি। ‘আমার সব সময় মনে হয়েছে, ভালো গল্পের ছবির সাথে যুক্ত থাকলে সবচেয়ে ভালো লাগে। সেই জায়গা থেকেই প্রযোজনায় ফেরার সিদ্ধান্ত। অভিনয়ের শুরু থেকেই প্রযোজনার দিকে আগ্রহটা ছিল বেশি।’

খুলনার সোনাডাঙ্গায় জন্ম পপির। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবা আমির হোসেন ছিলেন পেশায় ঠিকাদার, আর মা মরিয়ম বেগম একজন গৃহিণী।

নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় মা-ই তার ছবি পাঠিয়ে দেন ‘লাক্স-আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী’ প্রতিযোগিতায়। সেখানেই বাজিমাত করেন কিশোরী পপি, হয়ে ওঠেন চ্যাম্পিয়ন। এরপর ঢাকায় এসে ভর্তি হন লালমাটিয়া মহিলা কলেজে। মায়ের উদ্যোগে চলচ্চিত্রে জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা শুরু হয়। এক পর্যায়ে পরিচয় হয় পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের সাথে। তার হাত ধরেই ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় পপির। তবে দর্শকের হৃদয়ে ঠাঁই পান ‘কুলি’ ছবির মাধ্যমে।

তারকা খ্যাতির শীর্ষে থাকাকালীন সময়ে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন। রিয়াজ, ফেরদৌস, মান্না, শাকিল খান, ওমর সানীর সাথে জুটি বেঁধে কাজ করে হয়েছেন অন্যতম সফল নায়িকা। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা। তবে এই দীর্ঘ যাত্রায় একটি বিষয় আজো তাকে নাড়া দেয় পড়াশোনার অপূর্ণতা। ‘উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছি। এরপর আর সময় পাইনি। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ। যদি লেখাপড়াটা শেষ করতে পারতাম, তাহলে আফসোস থাকত না।’ পপি এখন গুছিয়ে নিতে চান নিজের প্রযোজনা সংক্রান্ত পরিকল্পনা। কী ধরনের গল্প নিয়ে কাজ করতে চান তা নিয়েও ভাবনায় রয়েছেন। বলেন, ‘এখন আর শুধু তারকা খ্যাতির জন্য ছবি করতে চাই না। এমন কিছু করতে চাই, যা শিল্পমানেও সমৃদ্ধ হবে। এখন গল্পটিই সবচেয়ে বড় বিষয়।’ এক সময়ের সুপারস্টার নায়িকা এখন পর্দার পেছনে থাকলেও চলচ্চিত্রকে ছেড়ে যাচ্ছেন না; বরং নতুনভাবে শুরু করতে চাইছেন চলচ্চিত্রেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে। তার নিজের কথাতেই তা স্পষ্ট ‘এই জায়গাটা আমি চিনি। ফিল্মের লাইনটা আমার রক্তে মিশে গেছে।’