মুন্সীগঞ্জে বিএনপির ঘাঁটিতে ভাগ বসাতে চায় জামায়াত

Printed Edition
মিজানুর রহমান সিনহা, এ বি এম ফজলুল করিম, শেখ মো: আব্দুল্লাহ, এ কে এম ফখরুদ্দীন রাজী, কামরুজ্জামান রতন, অধ্যাপক আবু ইউসুফ
মিজানুর রহমান সিনহা, এ বি এম ফজলুল করিম, শেখ মো: আব্দুল্লাহ, এ কে এম ফখরুদ্দীন রাজী, কামরুজ্জামান রতন, অধ্যাপক আবু ইউসুফ

আব্দুস সালাম মুন্সীগঞ্জ

প্রাচীন সভ্যতার জনপদ বিক্রমপুরখ্যাত মুন্সীগঞ্জে জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ। অতীশ দীপঙ্কর ও বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর স্মৃতিবিজড়িত এই জেলা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজধানীর সন্নিকটে হলেও দীর্ঘ দিন ধরে উন্নয়ন ও রাজনীতির নানা সঙ্কটে থাকা জেলাটিতে এবার নির্বাচন ঘিরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।

৯৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মুন্সীগঞ্জে সংসদীয় আসন তিনটি। ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই জেলায় এবার ভাগ বসাতে উঠেপড়ে লেগেছে জামায়াত। অপরদিকে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ভরে গেছে জেলা।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদে মুন্সীগঞ্জে ভোটার বেড়েছে ৭৭ হাজার ৮৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৭ হাজার ৫৪১ জন, নারী ভোটার ৪০ হাজার ৩২৩ জন এবং হিজড়া ভোটার যুক্ত হয়েছেন তিনজন। খসড়া তালিকা অনুযায়ী জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৬১৪ জন। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এ ছাড়া জেলার ৪৬৯টি ভোটকেন্দ্র সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকবে।

মুন্সীগঞ্জ-১ আসন : বিএনপির ঘাঁটিতে নতুন সমীকরণ শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটি। অতীতে বিএনপির অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। মরহুম সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির সাবেক মহাসচিব ডা: এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী পাঁচবার এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তার দলত্যাগের পর থেকেই এই আসনে বিএনপি বিভক্ত অবস্থায় রয়েছে।

এবার এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ আব্দুল্লাহ। তিনি নিয়মিত উঠান বৈঠক, গণসংযোগ ও সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলায় দলীয় সাংগঠনিক কাঠামো গঠনে তার ভূমিকা থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে তিনি তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তবে মনোনয়নবঞ্চিত কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মমিন আলী ও আব্দুল কুদ্দুস ধীরন পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছেন। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে, এই অন্তঃকলহের সুযোগ নিতে পারে জামায়াতসহ অন্যান্য দল।

এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক এ কে এম ফখরুদ্দীন রাজী। তিনি নিয়মিত মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম, জাকের পার্টি ও এনসিপির প্রার্থীরাও প্রচারণা চালাচ্ছেন। ২৮ ইউনিয়নের এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা পাঁচ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৩।

মুন্সীগঞ্জ-২ আসন : টঙ্গীবাড়ি ও লৌহজং উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও একাধিকবারের এমপি মিজানুর রহমান সিনহা। দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা তাকে এগিয়ে রেখেছে। তবে এই আসনে বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় পুরোপুরি ঐক্য দৃশ্যমান নয়। এ সুযোগ কাজে লাগাতে মাঠে সক্রিয় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক এ বি এম ফজলুল করিম ও এনসিপির প্রার্থী মাজেদুল ইসলাম। ২৩ ইউনিয়নের এই আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৭৩ হাজার ৪২৮।

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসন : আসনটিতে বিএনপির অন্তঃকলহে বিপাকে দলটি। মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলায় বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছে কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন। এতে মনোনয়নবঞ্চিত জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মহিউদ্দিন আহমেদের সমর্থকরা মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে অবরোধ, বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করছে। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী প্রফেসর আবু ইউসুফ নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসনে ব্যর্থ হলে এই আসনে জটিল সমীকরণ তৈরি হতে পারে। দু’টি পৌরসভা ও ১৭ ইউনিয়নের এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা পাঁচ লাখ ছয় হাজার ৮৮৩ জন।

সব মিলিয়ে মুন্সীগঞ্জে এবারের নির্বাচন বিএনপির জন্য শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী দল নয়, নিজেদের ঐক্য রক্ষার বড় পরীক্ষাও। বিএনপির ঘাঁটিতে জামায়াত কতটা জায়গা করে নিতে পারে, তা নির্ভর করবে শেষ পর্যন্ত মাঠের ঐক্য ও ভোটের অঙ্কের ওপর। তবে জামায়াত মনোনীত প্রার্থীরা প্রত্যেক নাগরিকের কাছে যাওয়া এবং বিক্রমপুরের ঢাকা ব্যবসায়ীদের মধ্যে পৌঁছে গেছেন তারা। সাধারণ ভোটারদের ভোট দেয়ার পরিবেশ তৈরি হলে জামায়াত বিজয়ী হতে পারে বলে জামায়াতের সমর্থক ও নেতাকর্মীরা আশা করছেন।