জনশক্তি ব্যবসার নামে কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের প্রতিনিয়ত নানা কৌশলে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের সাথে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিনের এমন অভিযোগকে এবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে দেখছে।
ইতোমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কর্মকর্তারা বিদেশগামীদের যাতে কোনো ধরনের হয়রানি-ভোগান্তি ও প্রতারণার শিকার হতে না হয় সে জন্য বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। এর মধ্যে যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জামানত রেখে যখন তখন এজেন্সির লাইসেন্স নিয়ে ইচ্ছা মতো কর্মী পাঠানোর যে সুযোগ নিতেন সেটি রোধের পাশাপাশি এই সেক্টরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বৈদেশিক ও অভিবাসী বিধিমালা, ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ফলে একজন ব্যক্তি বা এজেন্সির মালিক একের অধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকানা বা শেয়ার নিজের কাছে রাখতে পারবে না। যারা এই নিয়মের ব্যত্যয় করবে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্প্রতি জনশক্তি কর্মসংস্থাণ ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বিএমইটির বিগত এক বছরে সম্পাদিত উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়। আইন-বিধি সংশোধন সংক্রান্ত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন রকম প্রতারণাসহ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যেতো না। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩৫ সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে অনিয়মিত অভিবাসন এবং প্রতারণা রোধে মোবাইল কোর্টের আওতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিধি সংশোধনের বিষয়ে ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, নিয়োগানুমতির প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ করার লক্ষ্যে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী বিধিমালা, ২০১৭ সংশোধন করা হয়েছে। এই আইন-বিধি সংশোধনের তৃতীয় নম্বর প্যারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা রিক্রুটিং এজেন্ট একই সাথে একাধিক লাইসেন্স গ্রহণ বা একাধিক লাইসেন্সের (অংশ) শেয়ার গ্রহণ করতে না পারে এবং সাব-এজেন্টদের আইনি কাঠামোর আওতায় এনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বৈদেশিক ও অভিবাসী (রিক্রুটিং এজেন্ট লাইসেন্স ও সাব-এজেন্ট নিবন্ধন ও আচরণ) বিধিমালা, ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর লাইসেন্স শাখার একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, একজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক আগে একের অধিক লাইসেন্সের মালিক হতে পারতেন। শুধু তাই নয়, অন্য লাইসেন্সের সাথে অংশীদার (পার্টনার) হতেও কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। এর ফলে কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নিজের লাইসেন্সে বিদেশে কর্মী না পাঠিয়ে সেটি তিনি অন্যজনের কাছে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে পার্টনার বানাতেন। আর যে ব্যক্তি ওই লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতেন তিনি ওই লাইসেন্স কখনো কোন কোন দেশে লোক পাঠাতে সিন্ডিকেটের তালিকাভুক্ত সদস্য হয়ে, কখনো ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজে, আবার কখনো ভিসা ট্রেডিংয়ে জন্য নাম লিখাতেন। এমনও অভিযোগ আছে ওই লাইসেন্সের নামে বিদেশগামীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধা হয়ে যেত। এমন হাজার হাজার অভিযোগ বিএমইটির কর্মসংস্থান শাখায় আসার পরই কর্তৃপক্ষ বৈঠকের পর বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিলো, একজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক একটির বেশি লাইসেন্সের মালিক বা শেয়ার কোনোভাবে তার নামে রাখতে পারবেন না। এতে জনশক্তি ব্যবসায় স্বচ্ছতা ফেরার পাশাপাশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে তিনি মনে করছেন।
গত রাতে কাকরাইল এলাকার একজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার নামে দুটি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স ছিল। সরকার নতুন বিধি প্রণয়ন করার পর সেটির কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। অপর একজন বলেন, আমারও দুটি লাইসেন্স আছে। একটির নামে অভিযোগ উঠার পর বিএমইটির সার্ভারে লক করে দিছে। এখন বাকি একটা লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা করছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে মালিকদের কারো একটির বেশি লাইসেন্স রাখার সুযোগ নেই। যদি কারো থাকে তা হলে তাকে আইনের আওতায় আনবে বিএমইটি। এতে বিদেশগামীদের সাথে রিক্রুটিং এজেন্সি বা তাদের মনোনীত মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রতারণার হার অনেকাংশে কমে আসবে। বিএমইটি কর্তৃপক্ষও প্রতিনিয়ত এজেন্সির মালিকদের ভিসা প্রসেসিংয়ের আবেদন জমা দেয়ার কার্যক্রম ডিজিটালি মনিটরিং করছেন। কারো এক নামে দুটি লাইসেন্সের অস্তিত্ব পাওয়া যায় কি-না।
উল্লেখ্য, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো আড়াই হাজারেরও বেশি এজেন্সির অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত করা আছে। আবার কিছু লাইসেন্সের কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে।