দেশের পুঁজিবাজারে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সূচকের অবনতি ঘটেছে। গতকাল সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে দেশের দুই পুঁজিবাজারই সূচক হারায়। এর আগে রোববারও সূচকের কমবেশি অবনতি হয়েছিল। তবে গতকাল দিনের শুরু থেকেই বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ছিল ভালো। এতে সূচকের অবনতিতেও দিনশেষে বেড়েছে লেনদেন। এভাবে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল আবার ৫০০ কোটি টাকা অতিক্রম করে লেনদেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারির পর ডিএসইর লেনদেন আর পাঁচ শ’ কোটির ঘরে পৌঁছেনি।
সোমবার পুঁজিবাজারে সূচকের অবনতির বড় কারণ ছিল বীমা খাতের দরপতন। গতকাল এ খাতে ৮০ শতাংশ কোম্পানি দরপতনের শিকার হয়। এর আগে গত তিন দিন ধরে এ খাতে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়তে দেখা যায়। ফলে দীর্ঘদিন দরপতনে ধুঁকতে থাকা খাতটি কিছুটিা সচল হয়ে ওঠে। এ কয়দিনে খাতটির বেশির ভাগ কোম্পানির মূল্যস্তর কমবেশি বেড়েছে। আর এ সুযোগে গতকাল মুনাফা তুলে নেন বিনিয়োগকারীরা। এতে এ খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ৫৫টিই দরপতনের শিকার হয়।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তিসম্পন্ন খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বীমা খাত। এ খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে লভ্যাংশ প্রদানের সংস্কৃতি যেমন রয়েছে তেমনি আর্থিক প্রতিবেদনে কমবেশি স্বচ্ছতাও দেখা যায়। আবার এ খাতের কোম্পানিগুলোর মূলধনের আকারও খুব বেশি নয়। যার ফলে বিগত দিনগুলোতে কোন কোন সময় বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। তখন এ খাতে ভালো মুনাফা তুলে নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এ খাতে ব্যাপক দরপতন ঘটতে থাকে। বর্তমানে এ খাতের গড় মূল্য-আয় অনুপাত (পিই) ১২ দশমিক ১৩ যা বিনিয়োগের জন্য খুবই উপযোগী মনে করছেন তারা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচকটি গতকাল ১৬ দশমিক ৫১ পয়েন্ট কমেছে। সকালে পাঁচ হাজার ২২১ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি দিনশেষে নেমে আসে পাঁচ হাজার ২০৫ দশমিক ৪২ পয়েন্টে। অপর দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়া সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৬ দশমিক ০১ ও ১ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট। সূচকের উন্নতি দিয়েই গতকাল দিন শুরু করে দুই পুঁজিবাজার। আগের দিনের পাঁচ হাজার ২২১ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করা সূচকটি সকাল সোয়া দশটায় পৌঁছে যায় পাঁচ হাজার ২৩০ পয়েন্টে। লেনদেনের এ পর্যায়ে শুরু হয় বিক্রয়চাপ। দিনের বাকি সময় এ চাপ অব্যাহত থাকলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাজার।
সাম্প্রতিক সময়ের বাজার আচরণ পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে হাতেগোনা কিছু কোম্পানি বাদ দিলে বেশির ভাগ কোম্পানিতেই মূল্যস্তর বৃদ্ধি পাওয়া মাত্রই বিক্রয়চাপ তৈরি হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাজারে যেহেতু এখানো আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়নি তাই বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিজেদের প্রয়োজন মেঠাতে মুনাফা তুলে নিচ্ছে। এতে গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বাজার সূচক একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর ফলে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে হতাশায় ভুগছেন।
দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সার্বিক মূল্যসূচকটির অবনতি ঘটেছে ২৭ দশমিক ১৫ পয়েন্ট। এখানে সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচক হারায় যথাক্রমে ১২ দশমিক ২৬ ও ১০ দশমিক ১৭ পয়েন্ট।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানি শাইন পুকুর সিরামিকস। ২৪ কোটি ৮ লাখ টাকায় কোম্পানিটির এক কোটি তিন লাখ ৬৩ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় গতকাল। ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ৯ লাখ ৭৫ শেয়ার বেচাকেনা করে স্কয়ার ফার্মা উঠে আসে দ্বিতীয় অবস্থানে। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় অন্যগুলো হলো যথাক্রমে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ওরিয়ন ইনফিউশন, ফু ওয়াং সিরামিকস, ফু ওয়াং ফুড, বসুন্ধরা পেপার মিলস, বিচ হ্যাচারিজ, ইন্ট্রাকো ও বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম।
অন্য দিকে সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল লভেলো আইসক্রিম। এখানে শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো ছিল শাইন পুকুর সিরামিকস, ফু ওয়াং সিরামিকস, রবি অজিয়াটা, কেডিএস অ্যাক্সেসরিজ, উত্তরা ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, রহিমা ফুডস, বিচ হ্যাচারিজ ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।
ডিএসইতে দিনের মূল্যবৃদ্ধিতে এগিয়ে ছিল টেক্সটাইল খাতের কোম্পানি এম হোসাইন স্পিনিং মিলস। গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারের ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। এ ছাড়া বসুন্ধরা পেপারের ৯ দশমিক ১৮, ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৮ দশমিক ৭৭ ও এসইএম লেকচার ফান্ডের ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ দাম বেড়েছে। এ তালিকায় আরো ছিল ফু ওয়াং সিরামিকস, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, সাউথইস্ট ব্যাংক, বেঙ্গল উইন্ডসের থার্মোপ্লাস্টিকস ও শাইনপুকুর সিরামিকস। অন্যদিকে দরপতনে ডিএসইতে শীর্ষস্থানে ছিল ব্যাংকিং খাতের এনবিএল। গতকাল ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। এ ছাড়া রবি অজিয়াটা ৬ দশমিক ৭৬, মাগুরা মাল্টিপ্লেক্স ৬ দশমিক ১৪ ও ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ৫ দশমিক ১২ শতাংশ দর হারায়। দরপতনে শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, প্রাইম আইসিবি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজ, সিকদার ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স।
চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে মূল্যবৃদ্ধিতে এগিয়ে ছিল আইসিবি থার্ড এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড। গতকাল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ দাম বাড়ে ফান্ডটির। এ ছাড়া বসুন্ধরা পেপারস ৯ দশমিক ৫০, ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৯ দশমিক ০৯ ও ন্যাশনাল পলিমারের ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।
অপর দিকে এখানে দরপতনের তালিকার শীর্ষে উঠে আসে শমরিতা হাসপাতাল। গতকাল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। এ ছাড়া গ্রিনডেল্টা ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৯ দশমিক ৩৭, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস ৮ দশমিক ৬৯ ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ দর হারায়।