মূল্য ধরে রাখতে বাজার থেকে ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কেনার মাধ্যমে বাজারে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। কারণ, বাজারে অতিরিক্ত ডলার সরবরাহ হলে এর দর কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার ডলারের দর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে আমদানি খরচ বেড়ে অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। এই দুই অবস্থাই অস্থিতিশীলতা তৈরি করে।

বিশেষ সংবাদদাতা
Printed Edition

বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাজার থেকে ডলার কিনছে। গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে আটটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে মোট ১০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার কিনেছে। এ লেনদেনটি সম্পন্ন হয়েছে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১২১ টাকা ৮০ পয়সা দরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ জুলাই থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৯৮ কোটি ডলার কিনেছে। এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। তিনি জানান, রিজার্ভ বাড়ানো শুধু আমদানি ব্যয় মেটাতেই সহায়তা করে না, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটায়। ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও দেশের অর্থনীতিকে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করেন।

কেন ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক : অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কেনার মাধ্যমে বাজারে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। কারণ, বাজারে অতিরিক্ত ডলার সরবরাহ হলে এর দর কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার ডলারের দর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে আমদানি খরচ বেড়ে অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। এই দুই অবস্থাই অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনে বাজারে অতিরিক্ত ডলার সরবরাহ যেমন রোধ করছে, তেমনি ডলারের দরকে নির্দিষ্ট সীমায় রাখছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াচ্ছে।

প্রবাসী আয় ও রফতানির প্রভাব : নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনায় প্রবাসী আয় প্রেরকরা উপকৃত হচ্ছেন। কারণ, তারা তুলনামূলক ভালো দরে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন। অন্যদিকে, রফতানিকারকরাও তাদের অর্জিত ডলার বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। এতে প্রবাসী আয় ও রফতানি প্রবাহ দুটোই ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ডলারের দর স্থিতিশীল থাকলে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহিত হয়। আবার রফতানিকারকরাও দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসায় আস্থাশীল হতে পারেন। এতে অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ সুষম থাকে।

বাজার স্থিতিশীলতার গুরুত্ব : ডলারের দর স্থিতিশীল রাখা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডলারের মূল্য একদিকে যেমন আমদানি ব্যয় নির্ধারণ করে, অন্যদিকে রফতানির প্রতিযোগিতা ক্ষমতা ও প্রবাসী আয়ের টেকসই প্রবাহ নিশ্চিত করে। অর্থনীতিবিদদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগ স্বল্পমেয়াদে কার্যকর হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর জন্য কাঠামোগত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, শুধু নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে রফতানি খাত বহুমুখীকরণ, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির নতুন উদ্যোগ গ্রহণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য আনা। সর্বোপরি বলা যায়, নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একদিকে রিজার্ভ শক্তিশালী হচ্ছে, অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে স্থিতিশীলতা আসছে। তবে এই ধারা দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখতে হলে বহুমুখী কৌশল গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প নেই।