নিয়োগবাণিজ্য নিয়ে আলোচনায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ

আলমগীর হুছাইনের অনিয়মের বিরুদ্ধে গত ২৯ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনে এক ভুক্তভোগী মানবাধিকারকর্মী অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ভূমি শাখায় ফ্ল্যাটের সেল পারমিশন, হস্তান্তর বা দান সূত্রে মিউটেশন, চালান পাস, দায়মুক্তি সনদ নিতে আসা সেবাপ্রার্থীদের পরিকল্পিতভাবে হয়রানি করেন এবং প্রতিটা ফাইল বাবদ পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ফাইল ভেদে লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে আদায় করে থাকেন। এসব কাজ তার সিন্ডিকেটের ওই সব সদস্য দিয়ে করান।

মনিরুল ইসলাম রোহান
Printed Edition

নিয়োগবাণিজ্য, টেন্ডার ছাড়া বন্ধুকে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেয়া, ঘুষ না পেয়ে বদলি ও একক কর্তৃত্বে দায়মুক্তি দেয়াসহ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) আলমগীর হুছাইনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) আলমগীর হুছাইনের বিরুদ্ধে। এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি এখন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। তার সিন্ডিকেটে সহযোগিতা করেন অফিস সহায়ক নজরুল ও ড্রাইভার মো: মাসুদ। অফিস শেষে সন্ধ্যার পরে আলমগীর তাদের নিয়ে অফিস রুমে নিয়মিত আড্ডায় মেতে উঠেন এবং নিয়োগে তদবির, প্লট ও ফ্ল্যাটের দায়মুক্তিসহ নানা কাজের চুক্তির পরিকল্পনা ওই অফিসে বসেই করেন। একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে আলমগীর হুছাইনের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে গত ২৯ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনে এক ভুক্তভোগী মানবাধিকারকর্মী অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ভূমি শাখায় ফ্ল্যাটের সেল পারমিশন, হস্তান্তর বা দান সূত্রে মিউটেশন, চালান পাস, দায়মুক্তি সনদ নিতে আসা সেবাপ্রার্থীদের পরিকল্পিতভাবে হয়রানি করেন এবং প্রতিটা ফাইল বাবদ পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ফাইল ভেদে লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে আদায় করে থাকেন। এসব কাজ তার সিন্ডিকেটের ওই সব সদস্য দিয়ে করান।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্টেশনারি বিভিন্ন মালামাল সাপ্লাই দেন নরসিংদীর এক ঠিকাদার। প্রশাসকের এলাকার কাছের বন্ধু হওয়ায় নিয়ম লঙ্ঘন করে টেন্ডার ছাড়াই স্টেশনারি ও বিশ্ব বসতি দিবসের কাজ দেন তিনি। এ ছাড়াও গৃহায়নের (কনকচাঁপা) ২৫৩টি রেডি ফ্ল্যাটের কাজের দায়মুক্তিসহ নানা কাজের অনুমতি দেন তিনি। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওই প্রকল্পের বেশির ভাগ ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে লটারি ছাড়া স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে। তিনি এক সময়কার প্রভাবশালী আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার সুবাধে নিখিলের সুপারিশে ওই প্রকল্পের ফ্ল্যাটপ্রাপ্তদের অনেককেই মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে দায়মুক্তি দিয়েছেন।

অভিযোগ আছে, কৌশলে সাবেক প্রশাসক আতিউর রহমানকে সরিয়ে একসাথে দু’টি দায়িত্ব পালন করছেন আলমগীর হুছাইন। ঢাকা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী পরিচালক ছিলেন একরামুল কবীর। এই দায়িত্ব বহাল থাকতে তার কাছে ঘুষ দাবি করা হয়। কিন্তু টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মাত্র সাত মাসের মাথায় তাকে সিলেট বদলি করা হয়। আরো অভিযোগ আছে, মিরপুর-১০ ব্লক বি মেইন রোড সংলগ্ন বাণিজ্যিক প্লট। বাণিজ্যিক প্লটের বিলম্ব ফি ২১ শতাংশ আদায়ের নিয়ম থাকলেও নিয়মবহির্ভূতভাবে ১৬ শতাংশ ফি আদায় দেখান। রূপনগর গভ: হাউজিং এস্টেট বহুমুখী সমবায়ের নামে জমির জন্য আবেদন করে। কিন্তু চাহিদার চেয়ে ৪.৮ শতাংশ জমি বেশি বরাদ্দ দেন তিনি। যার মূল্য পাঁচ কোটি টাকা বেশি।

এ দিকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী স্থপতি, সহকারী পরিচালক, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল), উপসহকারী প্রকৌশলী (ই/এম), প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এস্টেট এবং বিভাগীয় হিসাবরক্ষক (১১তম গ্রেড) মোট সাত ক্যাটাগরির ১৬টি শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সহকারী স্থপতি (৯ম গ্রেড) একজন, সহকারী পরিচালক (৯ম গ্রেড) দু’জন, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) (৯ম গ্রেড) চারজন, উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) (১০ম গ্রেড) ছয়জন, উপসহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) (১০ম গ্রেড) একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এস্টেট) (১০ম গ্রেড) একজন, বিভাগীয় হিসাবরক্ষক (১১ম গ্রেড) একজন। জাতীয় গৃহায়নের উচ্চমান সহকারী লতিফা আক্তারের মেয়েকে সহকারী স্থপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ আছে, খুশি হয়ে স্যারকে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে ওই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত ১৬ জনের মধ্যে বেশির ভাগই তার সুপারিশে বিশেষ সুবিধায় নিয়োগ পেয়েছেন। একইভাবে আরো ৬০ জনকে অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ১৩তম গ্রেড হতে ২০তম গ্রেডের ১১টি শূন্য পদে সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ড্রাফটসম্যান, অফিস সহকারী, কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, অডিটর, হিসাব সহকারী, ভার্টিকেল ট্রান্সপোর্ট অ্যাটেনডেন্ট, জুনিয়র অডিটর, ড্রাইভার, চেইনম্যান, এমএলএসএস ও গার্ড নিয়োগ হচ্ছে। এদের এমসিকিউ পরীক্ষা শেষে ভাইভা চলছে এবং আলমগীর হুছাইনের বিরুদ্ধে ভাইভা বোর্ডে তার পরিচিতদের সুবিধা করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। যদিও এসব অভিযোগের সবটাই অস্বীকার করেছেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) আলমগীর হুছাইন। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক। এসব অনিয়মের সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোসা: ফেরদৌসী বেগম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, সবকিছু স্বচ্ছতা ও সততার সাথে নিয়ম মেনে করা হচ্ছে। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হয়নি। এজন্য একটি অসাধু সিন্ডিকেটের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে যে অসাধু সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে আমি সেটা ভাঙতে চাই। সিন্ডিকেটের বাইরে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা সেটা বুঝতে পেরে আলমগীরের মতো সৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে।