চাকরির বাজারে বড় পরিবর্তন আনছে এআই

আহমেদ ইফতেখার
Printed Edition
চাকরির বাজারে বড় পরিবর্তন আনছে এআই
চাকরির বাজারে বড় পরিবর্তন আনছে এআই
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পূর্বাভাস দিচ্ছে, ব্যাংকিং, ক্যাশিয়ার, ডেটা অ্যান্ট্রি অপারেটর এবং প্রশাসনিক সহকারীর মতো কাজগুলো এআই সহজেই প্রতিস্থাপন করতে পারবে। ‘গোল্ডম্যান স্যাকস’-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি কর্মী চাকরি হারাতে পারেন। বিশেষ করে ব্যাংক টেলার, গ্রাহকসেবা প্রতিনিধি এবং ট্রান্সক্রিপশনিস্টদের মতো পেশাগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে

গুগল ডিপমাইন্ডের সিইও ডেমিস হাসাবিস সম্প্রতি ‘হার্ড ফর্ক’ নামে একটি জনপ্রিয় টেক পডকাস্টে কিশোর-কিশোরীদের উদ্দেশে বলেন, আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে চাকরির বাজারে অনেক বড় পরিবর্তন আনবে এআই। কিছু চাকরি হারিয়ে যেতে পারে, আবার নতুন অনেক পেশার জন্ম হবে। তাই কিশোর-কিশোরীদের এখন থেকেই এআই শেখার উদ্যোগ নিতে হবে। এক সময় যেমন করে ইন্টারনেট মিলেনিয়ালদের আর স্মার্টফোন জেনারেশন জির (জেড) জীবনকে বদলে দিয়েছে, ঠিক তেমনি জেনারেশন আলফার ভবিষ্যৎ গড়বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। তিনি শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে অবসরে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে।

যেভাবে ইন্টারনেট আর স্মার্টফোন মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে, ঠিক সেভাবেই এআই হয়ে উঠছে এ যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। তাই যিনিই এখন থেকে এআই সম্পর্কে জানবেন ও বুঝবেন, ভবিষ্যতে তিনিই এগিয়ে থাকবে।

ডেমিস হাসাবিস জেমিনি চ্যাটবটের গবেষণা ল্যাবের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, ‘শুধু প্রযুক্তি ব্যবহার জানলেই হবে না, বুঝতে হবে কীভাবে সেটা কাজ করে। তাই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল আর গণিত (এসটিইএম) বিষয়ে ভালো ভিত্তির পাশাপাশি দরকার কিছু অতিরিক্ত দক্ষতা। যেমন শেখার আগ্রহ, মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা, সৃজনশীলতা। কারণ ভবিষ্যতে অনেক কাজই মেশিন করে ফেলবে, যা এখন মানুষ করে। তাই যেমন কঠিন টেকনিক্যাল জ্ঞান দরকার, তেমনই দরকার নিজেকে বদলাতে পারার মানসিক ক্ষমতা।’

২০২২ সালে ওপেনএআই চ্যাটজিপিটি চালু করার পর থেকেই এআই প্রযুক্তির অগ্রগতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এতে যেমন অনেক উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি চাকরি হারানোর আশঙ্কা নিয়ে দুশ্চিন্তাও বেড়েছে। এখন যেহেতু এআই নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতা চলছে, তাই হাসাবিস মনে করেন তরুণদের এআই বুঝতে শেখানো, ব্যবহার শেখানো আর নতুন কিছু উদ্ভাবনে আগ্রহী করে তোলা হবে আগামী দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এআই কেবল ভবিষ্যৎ নয়, এটি এখনকার বাস্তবতা। এটি বর্তমানে আমাদের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। যারা এখনই এর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে, তারাই আগামী দিনে মেশিননির্ভর পৃথিবীতে এগিয়ে থাকবে।

এই পেক্ষাপটে ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৭৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের পুনঃপ্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে চায়। এর ফলে কর্মীরা এআইয়ের সাথে সমন্বয় করে কাজ করার সুযোগ পাবেন এবং কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পূর্বাভাস দিচ্ছে, ব্যাংকিং, ক্যাশিয়ার, ডেটা অ্যান্ট্রি অপারেটর এবং প্রশাসনিক সহকারীর মতো কাজগুলো এআই সহজেই প্রতিস্থাপন করতে পারবে। ‘গোল্ডম্যান স্যাকস’-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি কর্মী চাকরি হারাতে পারেন। বিশেষ করে ব্যাংক টেলার, গ্রাহকসেবা প্রতিনিধি এবং ট্রান্সক্রিপশনিস্টদের মতো পেশাগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

বিশ্ব দ্রুত এআইচালিত হয়ে উঠছে, যা চাকরির বাজারে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে। তবে প্রযুক্তির এ পরিবর্তন শুধু চ্যালেঞ্জ নয়, এটি একটি সুযোগও বটে। দক্ষতা উন্নয়ন, নতুন কাজের সুযোগ এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে কর্মীরা এ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন। গবেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলাই হবে ভবিষ্যতের টিকে থাকার মূল কৌশল।