- অগ্রগতি ৫.৭ বছরে ব্যয় ৭৬০ কোটি টাকা
- বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৭৭.৮৪ শতাংশ
- প্রশাসনিক অনুমোদন পেতেই তিন মাস
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেয়া মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ প্রকল্পটি তারা অনুমোদিত মেয়াদ তিন বছরে শেষ করতে পারেনি। করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে বর্ধিত মেয়াদেও মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান কেনার কাজ সমাপ্ত সম্ভব হয়নি। ফলে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পটির মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়ে সাড়ে ৬ বছরে শেষ করতে হচ্ছে। এতে করে বাস্তবায়ন খরচ ১৬৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা বেড়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৬০ কোটি ৩০ লাখ টাকা খরচের বিপরীতে কাজ হয়েছে ৭৭.৮৪ শতাংশ। মেয়াদ সাড়ে ৬ বছরে উন্নীত করার পাশপাশি ব্যয় এখন ৯৩৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। টাকার সাথে ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধির কারণে যেসব পণ্য কেনা হবে সেগুলোর দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে বলে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা গেছে। জানুয়ারিতে প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেও প্রশাসনিক অনুমোদন পেতে তিন মাস লাগল।
সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, দেশের অন্যতম সমুদ্র বন্দর মোংলা বন্দরের কিছুসংখ্যক সহায়ক জলযান ৩০ থেকে ৭০ বছরের পুরাতন। ইনল্যান্ড শিপিং আদেশ, ১৯৯৬ সালের সংশোধনী ২০০৫ এর ধারা ৩০ মোতাবেক অভ্যন্তরীণ নৌযানের অনুকূলে জারিকৃত রেজিষ্ট্রেশন সনদের মেয়াদ ৩০ বছর নির্ধারিত। এ প্রেক্ষিতে মোংলা বন্দরের জলযানগুলো প্রতিস্থাপন আবশ্যক। এ ছাড়া মোংলা বন্দরে আগত জাহাজ ও সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠু হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রস্তাবিত সহায়ক জলযানগুলো সংগ্রহের জন্য ৭৬৭ কোটি ২৫ লাখ প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুন হতে ২০২২ সালে জুন, তিন বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য হাতে নেয়া হয়। যা ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল নিরাপদ চ্যানেল বিনির্মাণ, সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিং, সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধার কাজ পরিচালন। এই উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে ওই ব্যয়ে একটি পাইলট মাদার ভেসেল, দুই টি টাগ বেট (অব দা সেফ বা নিউ কনস্ট্রাকশন), একটি সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ ভেসেল, একটি সার্ভে অ্যান্ড রিসার্চ ভেসেল এবং একটি বয়া লেইং ভেসেল সংগ্রহ করা।
কিন্তু বাস্তবায়ন অবস্থায় প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে সংশোধিত টিওআর নৌ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদন গ্রহণ, করোনা মহামারীর কারণে দরপত্র আহ্বান ও গ্রহণ বিলম্বিত হয়। ফলে প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি : পরিকল্পনা কমিশন ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৯ সালে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির সহায়ক জলযানের ড্রইং, ডিজাইন এবং দরপত্র দলিল প্রণয়নের জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগের ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করা হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে সময় বৃদ্ধি করে সর্বশেষ একই বছর ২৮ জুলাই ইওআই মূল্যায়ন করা হয়। মূল্যায়ন শেষে প্রাপ্ত তিনটি প্রস্তাবই নন-রেস্পন্সিভ হিসেবে প্রতীয়মান হয়। বিধায় মূল্যায়ন কমিটি কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রস্তাব উন্মুক্তকরণের পরিবর্তে এই প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের জন্য আবার ইওআই আহ্বানের সুপারিশ করে। ডিপিপিতে অনুমোদিত টিওআরের আলোকে ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা শর্ত থাকায় প্রথম প্রকাশিত ইওআই এ দাখিলকৃত অনেক প্রতিষ্ঠানই বাদ পড়ে যায়। ফলে টেন্ডারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আনতে অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে টিওআরের শর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে শিথিল করে আবার ইওআই আহবান করা হয়। ২০২১ সালে ২৪ মে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগপূর্বক চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এতে প্রায় ১ বছর ৬ মাস সময় অতিবাহিত হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ায় জলযান সংগ্রহের মূল দরপত্র আহ্বানে বিলম্বিত হয়।
অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়, চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত অগ্রগতি হলো, ৭৭.৮৪ শতাংশ কাজে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৭৬০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর কাজের মধ্যে বর্তমানে দুটি টাগ বোট সংগ্রহের জন্য ২০২২ সালের মার্চে চুক্তি হয়। যার ৯৮ বাস্তব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একটি বয়া লেইং ভেসেল সংগ্রহে একই বছর ২৯ মার্চ কিলেইং সম্পন্ন হয়। যেখানে একই বছর ২৮ জুন এলসি খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বয়া লেইং ভেসেলের ৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একটি সার্স অ্যান্ড রেসকিউ ভেসেল সংগ্রহের জন্য একই বছর ১৯ এপ্রিল চুক্তি স্বাক্ষর হয়। আর ৯ জুন এলসি খোলা হয়েছে। এখানে ৫০ শতাংশ বাস্তব অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। একটি পাইলট মাদার ভেসেল সংগ্রহে ২০২২ সারের ২০ এপ্রিল কিলেইং হয়। আর ২০ জুন এলসি খোলা হয়েছে। এটার ৬৩ শতাংশ বাস্তব অগ্রগতি। একটি সার্ভে অ্যান্ড রিসার্চ ভেসেল সংগ্রহের জন্য ২০২২ সালের ১ আগষ্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যেখানে ৬৪ শতাংশ বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে। প্রকল্পের মোট ভৌত অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে ৭২.৬৬ শতাংশ। এ বিবেচনায় প্রকল্পের সার্বিক কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের স্বার্থে প্রকল্পের মেয়াদ আরো ১৮ মাস অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার প্রস্তাব একনেক থেকে চলতি বছর অনুমোদন দেয়া হয়।
নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ব্যাপারে বলছেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ সম্পাদনের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন পর্যায়ে একাধিক লটে রি-টেন্ডার করা, ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়া, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে সাপ্লাই-চেইন প্রক্রিয়া বিঘিœত হওয়ায় বিভিন্ন মাদার ম্যানুফেকচারার কোম্পানি প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ ও অন্যান্য ইকুইপমেন্ট চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করতে না পারা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটির ব্যয় এবং সময় উভয়ই বৃদ্ধি পূর্বক সংশোধন প্রয়োজন। তারা বলেন, কোনো ধরনের বৈশি^ক জটিলতা না হলে আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত করা সম্ভব হবে।