চৌগাছায় আমনে বিঘাপ্রতি ৫ হাজার টাকা লোকসান কৃষকের

প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০ টাকায়। ধানের দাম ভালো না হওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)
Printed Edition

যশোরের চৌগাছায় আমন সিজনে বিঘাপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। আমন ধান উৎপাদনের খরচ না ওঠায় কৃষকরা দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। কার্তিক মাসে ধান ঘরে তোলার ধুম পড়লেও চাষিরা খুশি হতে পারছেন না। তারপরও নতুন ধানে স্বপ্ন বুনেছেন কৃষকরা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে যখন নিম্নআয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে ঠিক তখনই আগাম ধান কৃষকের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফুটেছে। তবে লোকসানের আশঙ্কা কাটছে না।

গতকাল উপজেলার বিভিন্ন মাঠে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে আগাম ধান কাটা শুরু হয়েছে। কেউ ধান কাটছেন আবার কেউ ধান বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউবা জমিতে ও বাড়ির উঠোনে ধান মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি মাসেই চৌগাছা উপজেলায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে শুরু হবে ধান কাটার মহোৎসব। ব্যস্ততম সময় কাটবে কৃষক-কৃষানীদের। খুব সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে সোনালী স্বপ্ন ঘরে তোলার কাজ। ধানের দাম ভালো না থাকায় চাষিদের মন বেজার। অপরদিকে মজুরি বেশি ও শ্রমিক সঙ্কট থাকায় অনেকে পড়েছেন বেকায়দায়। কোনো কোনো এলাকায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে কৃষি শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এদিকে বাজার ঘুরে জানা গেছে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০ টাকায়। ধানের দাম ভালো না হওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য ফয়সাল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় আগাম জাতসহ ব্রি-৫১, বি-৪৯, ব্রি-৭৫, ব্রি-৮৭, রডমিনিকেট, বিনা-১৭, স্বর্না ও প্রতীক জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে ১৭ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন।

উপজেলার বাঘারদাড়ি গ্রামের কৃষক নুরুনব্বী বলেন, সার-কিটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও ধান চাষ করেছি। গত বছর এক বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াই করতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা লেগেছে। এবার প্রায় দুই গুণ বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে তবুও শ্রমিক সঙ্কট। তবে বর্তমানে ধানের দাম তুলনামূলক অনেক কম।

সিংহঝুলী গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই শেষ করেছি। আগাম ধান ঘরে উঠাতে পেরে খুশি। এবার অনেক ধার দেনা করে আমন ধান করেছিলাম। ধানের দাম ভালো না পাওয়ায় দেনা শোধ করতে পারছি না। তিনি বলেন, এক বিঘা আমন ধানে জমি লিজ ৯ হাজার টাকা, বীজতলা তৈরি বিঘা প্রতি দুই হাজার টাকা, জমি তৈরি এক হাজার ৫০০ টাকা, রোপন দুই হাজার, সার টিএসপি, ডিএপি, ইউরিয়া ও পটাশ চার হাজার টাকা, নিড়ানী-ওষুধ, পচন রোধ বাবদ দুই হাজার টাকা, সেচ দুই হাজার, কাটা-বাঁধা, বহন-মাড়াই ও গোলাজাত করণ ছয় হাজার, সর্বমোট খরচ হয় প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ টাকা। এক বিঘায় ধানের ফলন হয়েছে গড়ে ২০-২১ মণ। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকা।

পাশাপোল গ্রামের মমিনুর রহমান, কয়ারপাড়া গ্রামের ইউনুচ অলী, মাসুদুর রহমান, আবু কালাম, রামকৃষ্ণপুর গ্রামের নুরুজ্জামান বলেন, এক বিঘা জমির ধানজমি প্রস্তুত থেকে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ২৮ হাজার টাকা খরচ। তবে যারা বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্পের পানি এবং নিজেরাই পরিচর্যা করেছেন তাদের জন্য খরচ একটু কমবে। সেক্ষেত্রে প্রতিমণ ধান এক হাজার ৫০০ টাকার উপরে বিক্রি করতে পারলে তাদের আসল ঘরে আসবে। কৃষকরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন, প্রতিমণ ধানের দাম কমপক্ষে এক হাজার ৫০০ টাকা করা হোক।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। ধানের আশানুরূপ ফলনও হয়েছে। এ বছরে আবহাওয়া ভালো তাই ধানের ফলন ভালো হবে। ইতোমধ্যে কৃষকরা ধান কাটতে শুরু করেছেন। এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এক লাখ টন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। সরকার কৃষকদের প্রণোদনার সার-বীজ বৃদ্ধি করছেন।