জাহাঙ্গীর আলম হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)
এক যুগেরও বেশি সময় আগে জীবনের উন্নতির আশায় বিদেশে পাড়ি জমান বেকার যুবক মহররম আলী। পরিশ্রমে উপার্জন করা অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে গড়ে তোলেন সংসার ও বসতভিটা। শখের বসেই একদিন নার্সারি করার স্বপ্ন জাগে মনে। সেই শখই আজ রূপ নিয়েছে লাভজনক পেশায়। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর পৌর এলাকার ঢেকিয়ে গ্রামের এই উদ্যোক্তা বর্তমানে নার্সারি ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং বছরে আয় করছেন ছয় লাখ টাকার বেশি।
হোসেনপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের পেছনে অবস্থিত তার ‘সবুজ বাংলা মুয়াজ’ নার্সারিতে বর্তমানে রয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ প্রজাতির ফল, ফুল, বনজ ঔষধি গাছের চারা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাজানো গোছানো নার্সারিতে জলপাই, লিচু, বরই, কাঁঠাল, আম, পেয়ারা, লেবু, জাম, আখ, মরিচসহ নানা জাতের গাছের চারা ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়ছে।
মহররম আলী জানান, প্রায় ১৪ বছর আগে বগুড়ায় ধর্মীয় কাজে গিয়ে একটি নার্সারি দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। দেশে ফিরে ৪০ শতক জমিতে নিজ প্রচেষ্টায় চারা উৎপাদন শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার নার্সারি পরিচিতি লাভ করে উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে আশপাশের বিভিন্ন জেলায়। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গফরগাঁও, পাকুন্দিয়া, ভৈরব, নান্দাইলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
নার্সারিটি পরিচালনায় মাসে খরচ হয় প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে গড়ে মাসিক আয় থাকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এ হিসেবে তার বাৎসরিক আয় ছয় লাখ টাকার ওপরে। শুধু নিজের আর্থিক উন্নয়নই নয়, তার উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে হোসেনপুর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক নতুন নার্সারি। এতে সৃষ্টি হয়েছে স্বনির্ভরতার নতুন সুযোগ। নিজের ব্যবসার পাশাপাশি অন্যদের উৎসাহিত করাও এখন মহররমের লক্ষ্য। যারা নার্সারি করতে আগ্রহী, তাদের তিনি নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন তার নার্সারিতে চার থেকে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করেন। এতে স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের জীবিকাও নিশ্চিত হচ্ছে।
হোসেনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ কে এম শাহজাহান কবির বলেন, বৃক্ষরোপণে মানুষের আগ্রহ বাড়ায় মহররম আলীর মতো অনেক উদ্যোক্তা নার্সারি করে লাভবান হচ্ছেন। এতে এলাকার কৃষকদের আগ্রহও বাড়ছে। কৃষি বিভাগ নিয়মিত জৈব সার উৎপাদন, বালাইনাশক ব্যবহার ও আধুনিক ফল উৎপাদন প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।



