আট মাসে পুঁজিবাজার অধঃপতনের স্রোতে
- নতুন করে ব্যালেন্স শূন্য ৩০ হাজার ৪৩২টি
- শেয়ারশূন্য ৬৪ হাজার ৩৮৬টি
- আরো ৩৫ হাজার ৪২১টি বিও নিষ্ক্রিয়
পটপরিবর্তনে কোনো ধরনের উন্নতি হয়নি দেশের সাধারণ মানুষের বিনিয়োগস্থল পুঁজিবাজারের। উল্টো চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) পুঁজিবাজার অধঃপতনের স্রোতেই আছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা এবং আগামী দিনে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কের মধ্যে আছে। ফলে গত আট মাসে বেনিফিশিয়ারি ওনার (বিও) হিসাব ক্রমেই : শেয়ার ও ব্যালেন্স শূন্য হচ্ছে। শুধু আট মাসেই ৬৪ হাজর ৩৮৬টি বিওর শেয়ার বিক্রি হয়ে খালি হয়েছে। আর কোনো ধরনের স্থিতি বা ব্যালেন্স নেই নতুন করে ৩০ হাজার ৪৩২টি বিও হিসাবে বলে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা গেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারী ও মার্কেট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পটপরিবর্তনের পরে আমরা এই পুঁজিবাজারের ব্যাপারে যে ধরণের আশাবাদী ছিলাম, তার কোনোটাই হয়নি। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের স্বস্তি পাচ্ছে না এই বাজার নিয়ে। আস্থাহীনতায় এখনো বিনিয়োগ নিয়ে। শঙ্কায় বিনিয়োগকৃত অর্থ ফিরে পাওয়া নিয়ে। ফলে যা ছিল বিনিয়োগ তা তুলে নিচ্ছে।
শেয়ারশূন্য বিও ৫.০৬ শতাংশ বেড়েছে
সিডিবিএলর সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি ২০২৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যবহার হয়নি এমন বিও হিসাব এক হাজার ৪৬৭টি গত আট মাসে সক্রিয় হয়েছে। ফলে এই আট মাসে ব্যবহার হচ্ছে না এমন বিও হিসাব কমে হলো ৬৫ হাজার ১৮৯টি। যেখানে গত ১ জানুয়ারি ২০২৫ সালে ছিল ৬৬ হাজার ৬৫৬টি। শেয়ার আছে এমন বিও হিসাব বর্তমানে ১২ লাখ সাত হাজার ১৬৩টি। ২০২৫ সালের প্রথম জানুয়ারি এই ধরনের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৭১ হাজার ৫৪৯টি। ফলে গত ৮ মাসে শেয়ার শূন্য হয়েছে ৬৪ হাজার ৩৮৬টি বিও হিসাব। বেড়েছে ৫.০৬ শতাংশ।
সিডিবিএলের তথ্য থেকে আরো জানা গেছে, সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে বিও হিসাব খোলার পরিমাণ বেড়েছে। এই বৃদ্ধির সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। চলতি বছর জানুয়ারীতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৭৯ লাখ ৪২ হাজার ৩২০টি। যা হাসিনা সরকার পতনের পর গত ৭ আগস্ট ২০২৪ সালে ছিল ৭৯ লাখ আট হাজার ২৪৮টি। আর আট মাস পর গত ৪ সেপ্টেম্বর ছিল ৭৯ লাখ ৮২ হাজার ৩১৩টিতে।
স্থানীয় ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা ছাড়ার স্রোতে
বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার ছাড়ার প্রবণতা ২০২৩ সালের নভেম্বরে সূচনা হয়। গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিনিয়ত তাদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমছে বা নিষ্ক্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও সেই বাজার ছাড়ার প্রবণতা কমেনি। তবে বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার ছাড়ার সাথে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও বাজার ছেড়েছে। হাসিনা সরকার পতনের পর দেশ চালানোর দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ১৭ হাজার ৯৪৬টি। আর চলতি ২০২৫ সালের আট মাসে স্থানীয় বিনিয়োগকারী কমেছে ৩২ হাজার ৫৫৬টি এবং বিদেশী কমেছে দুই হাজার ৯১৯টি।
বর্তমানে বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৪৩ হাজার ৭৭২টি। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব ছিল ৪৬ হাজার ৬৯১টি। আর ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট ছিল ৪৭ হাজার ৮১টি। বর্তমান সরকারের এক বছরে বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে দুই হাজার ৫১৮টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব ছিল ৪৭ হাজার ৮৪টি। অর্থাৎ বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ধারাবাহিকভাবে কমেছে। কারণ তারা আস্থা পাচ্ছে না। গত আট মাসে কমেছে দুই হাজার ৯১৯টি। আর সার্বিকভাবে পুরুষ বিনিয়োগকারী আট মাসে ব্যক্তি বিনিয়োগকারী কমেছে ৩৫ হাজার ৪৭৯জন। একক বিও কমেছে ১৬ হাজার ১৭৯টি।
সম্প্রতি এক পর্যালোচনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন শেয়ারবাজার ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য আমরা কাজ করছি। কিছু সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির তালিকা করে তাদের সাথে বসছি আমরা। সরকার এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইনশাআল্লাহ ভালো ফল দেখবো। এ ছাড়া সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকা এবং সার্ভেইল্যান্স কার্যক্রম জোরদার করার কথাও বলেন তিনি।
ব্রোকারেজ হাউজ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারকাজ শুরু করলেও, তার সুফল পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের বাজারে আস্থা ফেরাতে পারছে না সরকার। বর্তমানে বাজারে সক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৭৯ লাখ থেকে কমে সাড়ে ১৬ লাখের নিচে চলে এসেছে। পটপরিবর্তনের পর বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত এক দুই বছরে কোনো আইপিও বা প্রাথমিক শেয়ার আবেদন আসেনি বাজারে। সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারও সরকার পুঁজিবাজারে আনতে পারেনি।