কিশোরগঞ্জ-৫ আসন

বিএনপির ১২, জামায়াত-১ অন্যান্য ৫ প্রার্থী

আলি জামশেদ, নিকলী (কিশোরগঞ্জ)
Printed Edition

কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তৎপরতা ও মনোনয়ন যুদ্ধ। বিশেষ করে বিএনপির ধানের শীষের প্রতীককে কেন্দ্র করে দলটির ভেতর চলছে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এ আসনে বিএনপির মধ্য থেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী ১০ জন। এছাড়া জোটের হয়ে প্রতীক চায় আরো দুই প্রার্থী। সব মিলিয়ে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ জনে। তবে জামায়াত ইসলামী একক প্রার্থী দিয়ে মাঠে জোর প্রচারণায় রয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য দল মিলিয়ে আরো চার সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে সক্রিয় হওয়ায় আসনটি নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, হাওরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত নিকলী-বাজিতপুর এলাকার এই আসন একসময় ছিল বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। স্বাধীনতার পর বেশ কয়েকটি নির্বাচনেই দলটি এ আসনে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছিল। এরপর দীর্ঘদিনের কোন্দল ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচন ও পরবর্তী সময়েও আ’লীগ একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রাখে।

তবে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর বিরোধী দলগুলোর পুনর্গঠনে স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় কোন্দল নিরসন করতে পারলে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই স্পষ্ট। তবে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সঠিক দলীয় প্রার্থী দিতে নির্বাচনে ব্যর্থ হলে জামায়াত বাজিমাত করতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ধানের শীষের কাণ্ডারি হতে সবচেয়ে আলোচিত দুই প্রার্থী হলেন- কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল এবং ১২-দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা। ইকবাল দীর্ঘদিন সংগঠনে থাকলেও তাকে ঘিরে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে এহসানুল হুদাকে বেশ কয়েকবার আশ্বস্ত করা হয়েছে বলেও গুঞ্জন ছড়িয়েছেন তার সমর্থকরা। ফলে বিএনপির ভেতরে একটি দ্বিমুখী প্রতিযোগিতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির মিত্রদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।

এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন, বাজিতপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র এহেসান কুফিয়া, ইতালিপ্রবাসী বদরুল আলম শিপু, সাবেক জেলা বিএনপি নেতা মীর জলিল, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মামুন (প্রয়াত এমপি মজিবুর রহমান মঞ্জুর ছেলে) এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবদুল ওয়াহাব।

নিকলী উপজেলা থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠু। তার বাবা প্রয়াত আমির উদ্দিন আহমেদ তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা শফিকুল আলম রাজন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম জামিউল হক ফয়সাল ও হাজী মাসুকও মনোনয়নের দৌড়ে আছেন।

বিএনপির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য অধ্যাপক রমজান আলী। ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ক্লিন ইমেজ ও দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক কাজে তিনি এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভেদ নিরসন না হলে জামায়াত প্রভাব বিস্তার করে ভোটের ফল উল্টে দিতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে।

এ ছাড়া অন্যান্য দলের প্রার্থীদের মধ্যে সক্রিয় রয়েছেন, ইসলামী আন্দোলনের উপদেষ্টা মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন, খেলাফতে মজলিসের মোহাম্মদ আলী, এনসিপির রাহাগীর আলম মান্না, গণ অধিকার পরিষদের জাকির হোসেন।

উল্লেখ্য, বাজিতপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং নিকলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১১ হাজার ৩৬৭। এর মধ্যে বাজিতপুরে ভোটার এক লাখ ৯৪ হাজার ৬৯০ এবং নিকলীতে এক লাখ ১৬ হাজার ৬৭৭ জন।