বছরের শুরুতে বই পাওয়া নিয়ে সংশয়

আটকে গেছে ১২ কোটি বইয়ের মুদ্রণ প্রক্রিয়া

শাহেদ মতিউর রহমান
Printed Edition

মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরির তিনটি শ্রেণীর বিনামূল্যের প্রায় ১২ কোটি বইয়ের মুদ্রণের অনুমতি আটকে গেছে। গত মঙ্গলবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির ৩২তম সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হলেও চূড়ান্তভাবে অনুমোদন না পাওয়ায় এখন পুরো কার্যক্রমই থমকে আছে। ফলে ২০২৬ সালের নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানিয়েছে, মাধ্যমিকের তিনটি শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের টেন্ডার বাতিল না করেও উপদেষ্টা পরিষদের দেয়া নির্দেশনা মতো পুরো প্রক্রিয়ার ত্রুটি বা ঘাটতিগুলো সংশোধন কিংবা পরিমার্জন করে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এতে পাঠ্যবই মুদ্রণ সংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে সঠিক সময়ে সব শ্রেণীর বই মুদ্রণ, বিতরণ ও পরিবহন কাজ যথাসময়েই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এর ফলে নতুন শিক্ষা বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছতে কোনো রকমের জটিলতার সৃষ্টি হবে না।

এ দিকে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণীর বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল মাদরাসা এবং কারিগরির- এই তিন শ্রেণীর জন্য মোট ২৮০টি লটে ১১ কোটি ৮৯ লাখ ৩২ হাজার ৮৭২ কপি বইয়ের জন্য মোট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬০৩ কোটি ৩৭ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৭ টাকা। কিন্তু মঙ্গলবার পুরো এই প্রস্তাবটি অনুমোদন না দিয়ে বরং আরো কিছু অবজারবেশন দিয়ে ফাইলটি ফেরত পাঠিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি। এতে পুরো প্রক্রিয়াটিই এখন এক অর্থে আটকে গেছে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে স্কুল মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৯৭টি লটে মোট বই ছিল ৪ কোটি ৩২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৩৫ কপি। আর এই বইয়ের জন্য খরচ নির্ধারণ করা হয় ১৮০ কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার ৭৭৮ টাকা। আবার সপ্তম শ্রেণীর ৯৪ লটে মোট বই ছিল ৩ কোটি ৯০ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯০ কপি। এর বইয়ের জন্য মূল্য নির্ধারণ ছিল ২০০ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৮৬৬ টাকা। সর্বশেষ অষ্টম শ্রেণীর জন্য ৮৯টি লটে মোট বই ছিল ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৩২ হাজার ১৭৭ কপি। এই বইয়ের জন্য মূল্য নির্ধারণ ছিল ২২৩ কোটি ১২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৩ টাকা। এনসিটিবির বিশাল সংখ্যার এই পাঠ্যবই মুদ্রণ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন না হওয়া প্রসঙ্গে গতকাল প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে জানান, কী কারণে আমাদের প্রস্তাব অনুমোদন হয়নি আমরা এখনো বিষয়টি বিস্তারিত জানি না। এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের ক্রয়সংক্রান্ত মঙ্গলবারের সভায় উত্থাপিত আমাদের প্রস্তাবে কোনো ত্রুটি বা ঘাটতি ছিল কিনা সেটিও আমাদের এখনো জানানো হয়নি। তবে আমাদের যদি কোনো ত্রুটি থাকে তাহলে অবশ্যই চেষ্টা করবো সেই ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে। তবে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি আমাদের প্রস্তাব বাতিল করেনি বা টেন্ডারগুলো রিটেন্ডারের বিষয়েও কোনো ঘোষণা বা নির্দেশনা দেয়নি। তাই এখনি আমরা বিষয়টি নিয়ে আগ বাড়িয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। দেখা যাক, এখনো তো সময় আছে। আমরা আশা করছি সবকিছু সুন্দরভাবেই সমাধান হয়ে যাবে।

অপর দিকে গতকাল কয়েকজন প্রেস মালিক জানান, বিগত দিনে আমরা চেষ্টা করেছি এনসিটিবির দেয়া শর্ত ও নির্দেশনা মোতাবেকই পাঠ্যবই ছেপে শিক্ষার্থীদের হাতে যথাসময়ে তুলে দিতে। তবে এবার যদি মাধ্যমিকের বই মুদ্রণের টেন্ডার বাতিল করা হয় কিংবা রিটেন্ডার আহ্বান করা হয় তাহলে পুরো কাজটি সম্পাদন করতে অতিরিক্ত আরো চার/পাঁচ মাস সময়ের প্রয়োজন হবে। এতে ২০২৬ সালের মার্চ এপ্রিলের আগে বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া সম্ভব হবে না। কাজেই আমরা চাইব কোনো ত্রুটি থাকলে সেগুলো সংশোধন কিংবা পরিমার্জন করে বইয়ের মুদ্রণের কাজে যাতে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি করা না হয়। অন্যথায় পুরো প্রক্রিয়াটিই দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ঝুলে যাবে।