স্পর্শকাতর মিন্টো রোড থেকে মার্কিন নাগরিক গ্রেফতার

গভীর ষড়যন্ত্রের মিশনে গোপন বৈঠকের ইঙ্গিত

এস এম মিন্টু
Printed Edition

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট হিসেবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের মিশন বাস্তবায়নের অভিযোগে আটক করা হয়েছে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫)। গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায়ই মিন্টো রোডের স্পর্শকাতর এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন। গত শনিবার সকালে রাজধানীর নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকা মিন্টো রোডে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করার সময় এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপরই তার মোবাইল ফোন সার্চ করা হলে বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। গোয়েন্দারা যে তথ্য পেয়েছে তা সরকারকে উৎখাত করার গভীর ষরযন্ত্র বলে জানিয়েছেন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা। পুলিশ জানায়, বর্তমান সরকারকে সরিয়ে ‘নতুন জাতীয় সরকার’ বা ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে আসেন এই ব্যক্তি। তিনি নিজেকে একটি বিশেষ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার ‘চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট’ বলে দাবি করেছেন।

সন্দেহজনকভাবে প্রাইভেটকার নিয়ে ঘোরাফেরা করায় শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এনায়েতকে গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। তবে আদালত তাৎক্ষণিকভাবে রিমান্ড মঞ্জুর না করে আজ সোমবার শুনানির দিন ধার্য করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, এনায়েত করিমকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে তার ফোন বিশ্লেষণ করেছি, যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য মিলেছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে তাকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদনও করা হবে। তিনি আরো বলেন, এই ব্যক্তি কিছু রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে গোপনে সাক্ষাৎ করেছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন একটি সময় যখন বাংলাদেশ নির্বাচনকালীন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, তখন বিদেশী নাগরিকের এ ধরনের ‘গোপন তৎপরতা’ উদ্বেগের কারণ হতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের সাথে তার যোগাযোগের দাবি দেশীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক পরিস্থিতির জন্য গুরুতর ইঙ্গিত বহন করে।

রমনার গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, সরকার উৎখাতের এই মিশনে আরো কারা জড়িত রয়েছে তাদের শনাক্ত করতে বিভিন্ন ক্লু ধরে এগোচ্ছেন তারা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী মহলের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন এমন তথ্য সামনে এসেছে। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিদের সাথে এনায়েতের যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য শনাক্তে কাজ শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে তার কার্যক্রমের তথ্যগুলো গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সাথে গোপনে সাক্ষাৎ করেছেন বলেও দাবি তার।

ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, এনায়েতের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত আমরা করব। তবে এখনো মামলার নথি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আমরা ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগসংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যও যাচাই করা হচ্ছে। আমরা বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি তবে তদন্তের স্বার্থে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। রিমান্ডে নিয়ে এসব তথ্য সামনে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে আরো কারা জড়িয়েছেন, তারা কতদূর এগিয়েছেন তা গুরুত্বসহকারে দেখা হবে এবং জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

জানা গেছে, এনায়েত করিম চৌধুরী ১৯৮৮ সালে আমেরিকায় যান এবং ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট পান। গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। প্রথম দুইদিন হোটেল সোনারগাঁওয়ে ছিলেন। পরে গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর রোডের ২২/এ বাসায় থাকতেন। এনায়েতের আমেরিকান পাসপোর্ট নাম্বার A34814791.