বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন প্রধান আলোচনার বিষয়- ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’। অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি সনদের ধারাগুলো বাস্তবায়নে আইনি কাঠামো প্রণয়নের যে খসড়া প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন করে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। এই বিভাজন আসন্ন ফেব্রুয়ারি ২০২৬ জাতীয় নির্বাচনকে কতটা অনিশ্চিত করে তুলতে পারে, সেই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের কেন্দ্রে।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতানৈক্য ও সন্দেহের আবহ তৈরি হয়েছে তাতে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট এই আদেশকে ‘সনদের চেতনার পরিপন্থী’ বলে আখ্যা দিয়েছে। অন্য দিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও নাগরিক ঐক্য বলছে- বাস্তবায়নের ধাপে ধাপে অগ্রগতি ছাড়া প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। এই বিভাজন আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নতুন অনিশ্চয়তার আশঙ্কা তৈরি করেছে। জামায়াত ও এনসিপি সাধারণ নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের গণভোট চাইছে। আর বিএনপি চাচ্ছে একই দিন গণভোট ও সাধারণ নির্বাচন।
ক্ষুব্ধ বিএনপি বলছে- নির্বাচন সময় মতো হতে না দেয়ার অপচেষ্টা : জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের দেয়া সুপারিশগুলো দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি বলেছে, কমিশন বিএনপির মতামত উপেক্ষা করেছে। তারা প্রাধান্য দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাওয়াকেই। দলটি শেষ মুহূর্তে এসে কমিশনের সুপারিশকে সন্দেহের চোখে দেখছে। শীর্ষ নেতারা বলেছেন, এটি নির্বাচন সময় মতো না হতে দেয়ার একটি অপচেষ্টা।
গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন। জানা গেছে, বৈঠকে এমন মতামত উঠে এসেছে। দলটির অভিমত, বিএনপি সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হওয়া সত্ত্বেও কমিশনের সুপারিশে তাদের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’ লিপিবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বাদ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।
দলটি বলছে, এটা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রতারণার শামিল। এটা করে ঐকমত্য কমিশন চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে কার্যত অনৈক্য সৃষ্টি করছে। বিএনপি এখন মনে করছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং আরো দু-একটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ। এগুলোকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন সঠিক সময়ে না করার ‘অপচেষ্টা’ হিসেবে দেখছে দলটি।
দীর্ঘ আলোচনার পর রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করলেও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ থেকে যায়। এমন অবস্থাতেই গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা তুলে দেন। সরকারকে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে সেখানে। সুপারিশে বলা হয়েছে, ওই আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, আগামী সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন (৯ মাস) ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করবে। গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো এই সময়ের মধ্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। তবে পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নেতারা গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান জারিকৃত লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও) এবং আইয়ুব খান প্রবর্তিত বেসিক ডেমোক্র্যাসি বা মৌলিক গণতন্ত্রের সাথে তুলনা করেছেন। তাদের অভিমত, কমিশনের সুপারিশে ঠিক একইভাবে দুটি দলের প্রস্তাব ও ঐকমত্য কমিশনের চিন্তা-ভাবনা জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। হয়তো এগুলো বাংলাদেশে আনার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও), ১৯৭০ ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান জারিকৃত একটি ফরমান। এতে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের নীতিসমূহ উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ এই এলএফও ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয় যে, আইন সভায় ৩০০টি আসন থাকবে। ফ্রেমওয়ার্কে রাষ্ট্রের দুই অংশের জন্য সংখ্যানুপাতের কথা বলা হয়। আরো উল্লেখ করা হয় যে, জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বানের ১২০ দিনের মধ্যে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। তবে এই সময়ের মধ্যে নতুন আইনসভা সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থ হলে নতুন নির্বাচন দেয়া হবে। অন্য দিকে ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ হচ্ছে ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান প্রবর্তিত একটি পরোক্ষ নির্বাচনভিত্তিক শাসনব্যবস্থা, যা মূলত তার ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার একটি উপায় ছিল। এই ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ সরাসরি রাষ্ট্রপতি বা সংসদ সদস্য নির্বাচন করতো না; বরং ‘মৌলিক গণতন্ত্রী’ নামে পরিচিত প্রায় ৮০ হাজার স্থানীয় জনপ্রতিনিধির একটি নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হতো, যাদের মাধ্যমেই রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হতেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সুপারিশে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ লিপিবদ্ধ করার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের। কিন্তু এই ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এর বিষয়টি পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এটা ঐক্য হতে পারে না। এটা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রতারণা। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে বিএনপি একটি সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার। অথচ বিএনপির যা প্রস্তাবনা, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে সেগুলোর কিছুই রাখা হয়নি। বরং বিএনপি যেগুলো চায়নি, সেগুলোই তারা করছে। ঐকমত্য কমিশন এখন কার্যত ‘অনৈক্য কমিশন’ হয়ে গেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঐকমত্য কমিশন যদি সব কিছু তাদের ইচ্ছে মতো করে, তা হলে বিএনপিকে তো কমিশন বৈঠকে না ডাকলেই পারতো। বিএনপিকে বিলাপ দিয়ে সুপারিশ জমা দেয়া, এটা কি ঐকমত্যের কোনো চিহ্ন?
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে জুলাই সনদের পূর্ণ প্রতিফলন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, রেফারিকে তারা কখনো গোল দিতে দেখেননি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং আরো দু-তিনটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ।
নির্বাচনের চেয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বেশি জরুরি মনে করছে জামায়াত : জাতীয় নির্বাচন কোনো কারণে না-ও হতে পারে, কিন্তু জুলাই সনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং সেটি সবার আগে বাস্তবায়ন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে ডা: তাহের বলেন- আমরা আশা করি, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। তবে আমরা সবার জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই- যেখানে দেশের সব নাগরিক ভয়হীনভাবে ভোট দিতে পারবে।
কমনওয়েলথের ‘ইলেকটোরাল সাপোর্ট’ শাখা উপদেষ্টা ও ‘প্রি-ইলেকশন অ্যাসেসমেন্ট’ প্রধান লিনফোর্ড অ্যান্ড্রুজের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক শেষেও তিনি এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। ডা: তাহের বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনী পরিবেশ কেমন- তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির বিষয়ে জামায়াত এরই মধ্যে মত দিয়েছে। এবারের নির্বাচন সাধারণ কোনো নির্বাচন নয়, এটি উৎসবমুখর ও বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশে হওয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন দল বলেছে- একটি আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করা দরকার। এনসিসি যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা দ্রুত কার্যকর করতে হবে এবং সেই আদেশের ওপর গণভোট আয়োজন করতে হবে। ডা: তাহেরের মতে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটই যথার্থ পদক্ষেপ। নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তার মতে, জুলাই সনদ এত গুরুত্বপূর্ণ যে কিছু ফান্ড ব্যয় করেও এটি গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে আগামী নির্বাচনগুলোতেও এ চাপ বজায় থাকবে।
আদেশ বিতর্ক ও অনিশ্চয়তার ত্রিভুজ : অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ জারি করে তাতে এতে দ্বি-কক্ষ সংসদ গঠন এবং উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, প্রশাসনে দলমুক্ত নিয়োগ ব্যবস্থা, বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন গঠনসহ ৩৮টি কাঠামোগত সংস্কারের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। তবে কিছু ধারা, বিশেষত ‘জাতীয় পুনর্গঠন পরিষদ’ ও ‘সংবিধান সংশোধন কমিশন’-এর কাঠামো নিয়ে দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ নামে যে রাজনৈতিক কাঠামো গ্রহণ করে তার মূল লক্ষ্য হলো- দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার এবং অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন- ‘জুলাই সনদ একটি জাতীয় অঙ্গীকার। এর বাস্তবায়নে সবার মতামতই গুরুত্ব পাবে। তবে নির্বাচনের সময়সূচি বা প্রক্রিয়া এতে বাধাগ্রস্ত হবে না।’ তিনি আরো জানান, সরকারের লক্ষ্য ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন এবং নতুন সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান অবস্থায় তিনটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে- সংলাপের পথ খোলা থাকলে দলগুলো একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে, যা নির্বাচনের পথ সুগম করবে। ঐকমত্য কমিশন দৃশ্যত সংলাপ শেষ করে দিয়েছে। এখন সংলাপ বা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করতে পারে সরকার। গণভোটের দিন নির্ধারণ ও অন্য আপত্তি নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির আগে দলগুলোর সাথে সরকার কথা বলতে পারে। বিএনপি এবং জামায়াত ও অন্য কয়েকটি দল তাদের দাবি নিয়ে এখনো মাঠে সক্রিয়। দলগুলোর বয়কট বা আন্দোলন শুরু হলে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে উঠবে। আর যদি সরকার একতরফাভাবে বাস্তবায়ন আদেশ কার্যকর করে, তবে বৈধতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হবে, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতায় ছায়া ফেলবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন- ‘জুলাই সনদ ছিল জনগণের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার দলিল। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যদি দলীয় স্বার্থ নিয়ন্ত্রণ দেখা দেয়, তবে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনও রাজনৈতিক বৈধতার সঙ্কটে পড়বে।’
সব মিলিয়ে বলা যায়- জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ এখন কেবল একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের বৈধতা ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের মাপকাঠি। এই মতানৈক্য সমাধান নির্ভর করছে সংলাপ, স্বচ্ছতা ও আস্থার পুনর্গঠনের ওপর। যদি সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো সময় মতো ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারে, তবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়া আবারো অনিশ্চয়তার ঘূর্ণিতে পড়ে যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের নীরব পর্যবেক্ষণ : আওয়ামী লীগ এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও, দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে- তারা ‘বাস্তবায়ন আদেশের কিছু ধারা আইনি জটিলতা তৈরি করতে পারে’ বলে মনে করছে। বিশেষ করে, ‘দলীয় সম্পদের নিরীক্ষা ও রাজনীতিকদের সম্পদ ঘোষণা বাধ্যতামূলক করা’ সংক্রান্ত ধারাটি দলটির অনেক নেতার মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
আওয়ামী লীগের দৃশ্যত অবস্থান হলো তাদের অংশগ্রহণ নেই এমন কোনো নির্বাচন হতে না দেয়া। শেখ হাসিনা রয়টার্সের সাথে সাক্ষাৎকারে গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাইবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি এক সময় হুট করে ঢুকে পড়বেন বলে জানালেও অন্তর্বর্তী সরকার বা তার পরের সরকারের সময় দেশে না আসার ইঙ্গিতই দিয়েছেন রয়টার্সকে। তবে তিনি যেখানে আছেন সেখানে থেকে তার তৎপরতা চালিয়ে যাবেন। তিনি আশা করছেন- সনদ বাস্তবায়নের গতিতে রাজনৈতিক ঐকমত্য না এলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আইনি নয়, বরং রাজনৈতিক বৈধতার সঙ্কটে পড়বে।
সব মিলিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ নিয়ে মতানৈক্য এখন দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের অন্যতম বড় পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে। সরকার সময় মতো নির্বাচন আয়োজনের কথা বললেও রাজনৈতিক আস্থা ও অংশগ্রহণ ছাড়া সেই নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে- সেটিই এখন মূল প্রশ্ন।



