ছেংগারচরে ৯৭ শতাংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি বঞ্চিত

১১ কোটি টাকার প্রকল্প অচল

প্রকল্পের আওতায় ৪৫০ ঘনমিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি উচ্চ জলাধার নির্মাণসহ পুরো পৌর এলাকায় নিরাপদ ভূগর্ভের পানি সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে বাস্তবে পৌরসভার মোট ১০ হাজার ৪৭৫টি হোল্ডিংয়ের মধ্যে মাত্র ৩২৮টি পরিবারে সীমিত আকারে পানি সরবরাহ চালু রয়েছে, যা মোটের মাত্র ৩ শতাংশ।

Printed Edition

সুমন আহমেদ মতলব উত্তর থেকে (চাঁদপুর)

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভায় প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভূগর্ভের পানি শোধনাগার, উচ্চ জলাধার ও পানি সরবরাহ প্রকল্প উদ্বোধনের তিন বছর পার হলেও এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এতে পৌর এলাকার প্রায় ৯৭ শতাংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। পানির সঙ্কটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরবাসী।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের বাস্তবায়নে ২০১৯ সালে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ৪৫০ ঘনমিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি উচ্চ জলাধার নির্মাণসহ পুরো পৌর এলাকায় নিরাপদ ভূগর্ভের পানি সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে বাস্তবে পৌরসভার মোট ১০ হাজার ৪৭৫টি হোল্ডিংয়ের মধ্যে মাত্র ৩২৮টি পরিবারে সীমিত আকারে পানি সরবরাহ চালু রয়েছে, যা মোটের মাত্র ৩ শতাংশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উদ্বোধনের পর থেকেই পাইপলাইনের লিকেজ, যান্ত্রিক ত্রুটি এবং পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানি সরবরাহ কার্যক্রম নিয়মিত রাখা যাচ্ছে না। অনেক এলাকায় পাইপলাইন বসানো হলেও সেখানে পানি পৌঁছায় না। কোথাও এক দিন পানি এলেও পরদিন বন্ধ থাকে; যে কারণে অধিকাংশ মানুষ বাধ্য হয়ে টিউবওয়েলের পানি কিংবা বিকল্প উৎসের ওপর নির্ভর করছেন।

পৌর এলাকার ঠাকুরচর গ্রামের বাসিন্দা নুর নবী খান বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্প হয়েছে, কিন্তু আমরা এখনো টিউবওয়েলের পানিতেই নির্ভরশীল। আমাদের এলাকায় কোনো দিনই নিয়মিত পানি আসে না।

ঘনিয়ারপাড় এলাকার গৃহিণী ছালমা বেগম জানান, পানি সংযোগ নিয়েও মাসে গড়ে অর্ধেক সময় পানি পান না। আবার কখনো কখনো পানিতে শ্যাওলার মতো ময়লা দেখা যায়।

আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, অফিসে গেলে শুধু মেরামতের কথা বলা হয়। তিন বছর ধরে মেরামতই চলছে, কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। অথচ মাস শেষে বিল পরিশোধ করতে হয়। সচেতন নাগরিক ও ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম মনে করেন দুর্নীতি, তদারকির অভাব ও অবহেলার কারণেই প্রকল্পটি কার্যকর হয়নি। তার মতে, এভাবে চলতে থাকলে সরকারি অর্থের বড় ধরনের অপচয় হবে।

বর্তমানে ছেংগারচরের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধার বাইরে। তারা টিউবওয়েল, বেসরকারি বোতলজাত পানি কিংবা খাল-বিলের পানির ওপর নির্ভর করে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাচ্ছেন।

পানি শোধনাগারের অপারেটর মিরাজ হোসেন বলেন, লাইন লিকেজ ও যান্ত্রিক সমস্যার কারণে পুরোপুরি পানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। তবে সমস্যা সমাধানে মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে ছেংগারচর পৌর প্রশাসক মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লিকেজ, যান্ত্রিক ত্রুটি ও জনবল সঙ্কটের কারণে পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে এবং ধাপে ধাপে মেরামত কাজ সম্পন্ন করে শিগগিরই পৌরবাসীকে প্রত্যাশিত পানি সুবিধার আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।