উচ্চ আর্থিক ঝুঁকিতে ৪২ প্রতিষ্ঠান

জুন শেষে ঋণ আড়াই লাখ কোটি টাকা : ১৫ বছরে অবস্থা আরো অবনতি

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে এই ৪২ প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা- যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ।

সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
Printed Edition

দেশের ৪২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ‘উচ্চ’ বা ‘অত্যন্ত উচ্চ’ আর্থিক ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টির অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে এই ৪২ প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা- যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ।

ঝুঁকির শ্রেণীবিন্যাস : ১০১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে ৫টি ঝুঁকি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে- অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ: ১৪টি (ঋণ: ১.৫৬ লাখ কোটি টাকা), এর মধ্যে ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ: ২৮টি (ঋণ: ৮৩ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা), মাঝারি ঝুঁকি: ৩৭টি, কম ঝুঁকি: ২০টি, অত্যন্ত কম ঝুঁকি: ২টি। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জ্বালানি, পরিবহন, নির্মাণ, টেলিযোগাযোগ, পানি, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের সংস্থাও রয়েছে। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে উচ্চ ঝুঁকির প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবে খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে জ্বালানি, পরিবহন, নির্মাণ, টেলিযোগাযোগ, পানি, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের সংস্থা রয়েছে।

মোট ঋণের চিত্র : ২০২৪ সালের জুন শেষে ১০১ প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে- চলতি দায় : ৩৯% (২.৪৯ লাখ কোটি টাকা), সাবসিডিয়ারি ঋণ চুক্তি : ২৬% (১.৬৬ লাখ কোটি টাকা), ঋণ চুক্তি: ১৬% (১.০২ লাখ কোটি টাকা), অন্যান্য ঋণ : ১৯% (১.২১ লাখ কোটি টাকা)। তাদের মোট ঋণের ৪২ শতাংশই সরকারের বিনিয়োগ বা ইকুইটি, বাকিটা দেশী-বিদেশী উৎস থেকে এসেছে।

সরকারের জন্য ঝুঁকি : অর্থ বিভাগের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা বা মূলধন ক্ষতির ফলে সরকারকে পুন:মূলধন জোগান বা ঋণ পরিশোধের দায় নিতে হতে পারে। এতে তিন ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়- ঋণের গ্যারান্টি দিয়ে প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি, ধারাবাহিক লোকসানে প্রতিষ্ঠান সচল রাখতে বাড়তি পুঁজি জোগান, প্রত্যাশিত মুনাফা না হলে রাজস্ব আয়ের ঘাটতি।

অতিরিক্ত তথ্য : ২০২৪ সালের জুন শেষে ১৪২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সরকারের কাছে দায় (ডিএসএল) দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। ১৫টি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে, ৪৭ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২টি প্রতিষ্ঠান মোট ১৯ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।

এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, মার্চ ২৫ শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ আবারো ১০৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সেপ্টেম্বর ২০২৪ শেষে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ ১০৪ দশমিক ৪৪১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। ডিসেম্বর ’২৪ শেষে এই অঙ্ক কিছুটা কমে ১০৩ দশমিক ৭৩৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। মার্চ ২৫ শেষে বিদেশী দায় আবারো বেড়ে ১০৪ দশমিক ৭৬২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মার্চ ২৫ শেষে সরকারি খাতের ঋণই রয়েছে ৮৪ দশমিক ৮৮৯ বিলিয়ন ডলার। ৬ মাস আগের প্রায় একই স্তরে রয়েছে এই ঋণ। এর মধ্যে ৭৩ দশমিক ৬১৫ বিলিয়ন ডলার হলো দীর্ঘমেয়াদি ঋণ।

সরকারি খাতের তুলনায় বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ তুলনামূলকভাবে কম হলেও এর বড় অঙ্কই হলো স্বল্পমেয়াদি- যা পরিশোধের চাপ থাকে বেশি। মার্চ ২৫ শেষে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতের বিদেশী ঋণের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হলো স্বল্পমেয়াদি দায়।

মার্চ ২৫ শেষে বৈদেশিক ঋণ বিবরণীতে দেখা যায়, ১০৪ দশমিক ৭৬২ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ৮৭.৭৪ শতাংশ হলো দীর্ঘমেয়াদি- যার মধ্যে বহুপক্ষীয় সংস্থার কাছ থেকে নেয়া ৪১.১৮ শতাংশ, দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতার কাছ থেকে নেয়া ২৮.৭৩ শতাংশ, আইএমএফের ঋণ ৪.৪৮ শতাংশ, বাণিজ্যিক ঋণ ১০.৮৯ শতাংশ, সরবরাহ ঋণ ০.১৮ শতাংশ আর ২.২৭ শতাংশ অন্যান্য ধরনের ঋণ।