পাঠ্যবই মুদ্রণে শুভঙ্করের ফাঁকি কৌশলে ঢুকছে নিম্নমানের বই

বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণের জন্য কাগজের যে স্পেসিফিকেশন দেয়া হয়েছে মুদ্রিত বইয়ের মানের বিচারে তার চেয়ে অনেক খারাপ কাগজ ব্যবহার করেছেন অনেক প্রেস মালিক।

শাহেদ মতিউর রহমান
Printed Edition

নানা কৌশলে এবারো ছাপা হচ্ছে নিম্নমানের পাঠ্যবই। বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণের জন্য কাগজের যে স্পেসিফিকেশন দেয়া হয়েছে মুদ্রিত বইয়ের মানের বিচারে তার চেয়ে অনেক খারাপ কাগজ ব্যবহার করেছেন অনেক প্রেস মালিক। আবার নিয়মমতো ভালো কাগজ ব্যবহার করা হলেও ছাপানো অনেক বইয়ের মান নিয়েও আপত্তি আসছে। অবশ্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি এবং তাদের নিয়োগকৃত বইয়ের মান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান পিডিআই কোম্পানির (প্রি ডেলিভারী ইন্সপেকশন এজেন্ট) পক্ষ থেকেও বইয়ের নানা অসঙ্গতি নিয়ে প্রতিনিয়তই আপত্তি আসছে। সম্প্রতি প্রাথমিক পর্যায়ের (শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী) বেশ কিছু প্রেসের বইয়ের মান নিয়ে আপত্তি আসার পর এনসিটিবি তাদের তদারকি দলকে তাগিদ দিয়ে তাদের নিয়মিত কাজের গতি ও পরিধিও বাড়িয়েছে।

এ দিকে এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট তদারকি দলের কয়েকজন সদস্য ও পিডিআই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর ২০২৬ সালের পাঠ্যবই ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে মুদ্রণে নানা ধরনের ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা ধরা পড়ছে। পাঠ্যবই মুদ্রণের পর ত্রুটিযুক্ত বই বাছাইয়ে মূলত ছয়টি পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত বছরগুলোতে যেসব বিষয়ে এনসিটিবি এমনকি পিডিআই কোম্পানিগুলোও যেখানে সফল হতে পারেনি এবার সেই বিষয়গুলোকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ত্রুটিযুক্ত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য থাকছে বইয়ের ফর্মা মিসিং ও ডাবল ফর্মা সংযুক্তির বিষয়টি। এখানে কোনো কোনো বইয়ের ভেতরে ফর্মা মিসিং থাকায় এই বইগুলো শিক্ষার্থীদের পড়ার অনুপযোগী থাকছে। একইভাবে ডাবল ফর্মার কারণেও এই বইগুলো নিয়েও শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্তিতে পড়বে।

আবার পিডিআই করার সময়ে শর্ট বইয়ের (সংখ্যার হিসাবে কম বই) একটি সমস্যা নিয়েও বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কোনো কোনো বইয়ে আবার ছাপার ভুলের কারণেও বইগুলো ব্যবহারের উপযোগিতা হারাচ্ছে। কিছু বইয়ের বাঁধাই ও কাটিং সমস্যাও প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। আর এসব ত্রুটি নিয়ে প্রেস মালিকদের অনেকেই শুভঙ্করে ফাঁকি দিয়ে এনসিটিবি তথা ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কেননা ফর্মা ভুলের কারণে প্রেস মালিকরা অনেক অর্থ সাশ্রয় করতে পারছে। একইভাবে নিম্নমানের বাঁধাই কিংবা কাটিং সুবিধা নিয়েও প্রেস মালিকরা অতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ পাচ্ছেন।

অন্য দিকে পিডিআই কোম্পানি থেকে অভিযোগ করা হয়েছে অনেক প্রেস মালিক কড়া নজরদারি সত্ত্বেও স্পেসিফিকেশনের শর্ত মোতাবেক কাগজ ব্যবহার করছেন না। গত কয়েক দিনে কয়েকটি প্রেসের মালিক কৌশলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আড়াই হাজার মে: টন নিম্নমানের কাগজ ব্যবহারের সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছে। পরে অবশ্য কড়া তদারকির কারণে প্রেসের এই অপকৌশল ধরা পড়েছে। এর মধ্যে সরকার প্রেস (স্বত্ব¡াধিকারী ওমর ফারুক) তাদের কারখানা থেকে সাত শ’ মে: টন নিম্নমানের কাগজ জব্দ করে সেগুলো বাতিল করেছে। এমন আরো বেশ কিছু বড় বড় প্রেস থেকেও নিম্নমানের কাগজ জব্দ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তদারকির দায়িত্বে থাকা এনসিটিবির কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবার যেকোনো মূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে ভালো মানের বই তুলে দিতে তারা বদ্ধপরিকর। কোনো অনিয়মই ছাড় দেয়া হবে না। তাই শুরু থেকে পাঠ্যবই মুদ্রণের প্রতিটি স্তরে স্তরে এনসিটিবি এবং পিডিআই এজেন্ট সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। সামান্যতম ত্রুটি বা অসঙ্গতি নজরে আসা মাত্রই আমরা প্রেস মালিকদের সতর্ক করা হচ্ছে। প্রয়োজনে বই বাতিল করা কিংবা কাগজও বাতিল করা হচ্ছে। সর্বোপরি চেষ্টা চলছে এবার ভালো মানের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য।