২০০৮ সালের ৫ জুন দেশের ২৯তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি)। শুরু থেকেই উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
তবে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়নি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিয়ম অনুযায়ী, স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ প্রদানের জন্য সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু পাবিপ্রবির গ্র্যাজুয়েটরা এখনো সেই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাননি। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ দিন ধরে সমাবর্তন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। দীর্ঘ দিন ধরে তারা সবাই সমাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
সমাবর্তন না হওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এই অনুষ্ঠান কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি শিক্ষার্থীদের অর্জনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও সমাবর্তন না হওয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের গ্র্যাজুয়েট মো: শামীম হাসান বলেন, প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হওয়া জরুরি। আমাদের শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি লাভের যে স্বীকৃতি বা সার্টিফিকেট প্রাপ্তি এবং এই মুহূর্তটিকে যে আমরা স্মৃতি হিসেবে রেখে দেব, সেই সমাপ্তিটা সুন্দর ভাবে অনুষ্ঠিত হবে এটা আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা ১০ বছর আগে বের হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সমাবর্তন পেলাম না। এটি সত্যিই দুঃখজনক। আমি এটাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতাই বলব।
অন্যদিকে, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের রসায়ন বিভাগের গ্র্যাজুয়েট সুমাইয়া হক বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ মুহূর্তটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চায়। সমাবর্তনে সেই সুযোগ ও মাহেন্দ্রক্ষণটি আসে। কিন্তু বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষ সমাবর্তনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এমনকি প্রশাসন থেকে একটি সুনির্দিষ্ট তারিখও ঘোষণা করা হচ্ছে না। আমরা কি চিরকাল অপেক্ষায় থাকব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, চার বছরের স্নাতক শেষ করে একদিন গাউন ও টুপি পরে বন্ধুদের সাথে স্মৃতিময় মুহূর্ত কাটাব এমন স্বপ্ন কি অধরাই রয়ে যাবে? আমাদের সমসাময়িক বন্ধুরা যারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট হয়েছেন, তারা সমাবর্তনের মাধ্যমে সনদ পেয়েছেন। কিন্তু আমরা এখনো সেই স্বপ্নটাই দেখছি শুধু। পাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের কেন এভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে, এ প্রশ্ন প্রশাসনকে জানালাম।
জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো: নাজমুল ইসলাম বলেন, সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। যা শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আমি যতদূর জানি, এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত স্থাপনা, জায়গার সঙ্কট ও নানা দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকায় সমাবর্তনের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি। আশা করি, নবনির্মিত কনভেনশন হলসহ বিভিন্ন স্থাপনাগুলো চালু হয়ে গেলে খুব দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমাবর্তনের আয়োজন করতে পারবে। অনেক ফ্যাকাল্টি মেম্বার এখন এই বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এস এম আবদুল আওয়াল বলেন, বিভিন্ন কারণবশত এতদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের আয়োজন করে উঠতে পারিনি। স্বল্প সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা শিঘ্রই সমাবর্তন আয়োজনের উদ্যোগ নেব। যেহেতু সমাবর্তন একটি বড় আয়োজন, এ মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে সময় বলতে পারছি না। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আমরা এই আয়োজন করতে পারব বলে আশা রাখি।