শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজার দিন শেষ করল পতনে

পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ পুনর্গঠন

বিগত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দিয়েই শুরু হয় পুঁজিবাজারের লেনদেন। কিন্তু বিক্রয়চাপের কারণে শেষদিকে এসে এ প্রবণতা ধরে রাখতে পারেনি বাজারগুলো।

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
Printed Edition

টানা তৃতীয় দিনের মতো সূচক হারালো দেশের পুঁজিবাজার। বিগত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দিয়েই শুরু হয় পুঁজিবাজারের লেনদেন। কিন্তু বিক্রয়চাপের কারণে শেষদিকে এসে এ প্রবণতা ধরে রাখতে পারেনি বাজারগুলো। পতন দিয়েই শেষ হয়েছে লেনদেন। এর আগে চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসেও সূচক হারায় বাজারগুলো।

প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ১০ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট হারিয়েছে। এ নিয়ে গত তিন দিনে সূচকটি ৩৩ দশমিক ৩১ পয়েন্ট হারাল। অন্য দুই সূচকের মধ্যে গতকাল ডিএসই-৩০ সূচকটির ৫ দশমিক ৮২ পয়েন্ট অবনতি ঘটলেও শরিয়াহ সূচকের ১ দশমিক ১৩ পয়েন্ট উন্নতি হয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ২৮ দশমিক ১৫ পয়েন্ট কমেছে। সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি হয়েছে যথাক্রমে ২৬ দশমিক ৯৫ ও ১৩ দশমিক ১৭ পয়েন্ট।

এ দিকে পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো এবং আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করা হয়েছিল। এ গ্রুপে ১০ জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তাদের মধ্যে দুইজন এ কাজে আগ্রহ প্রকাশ না করায় নতুন সদস্য নিয়োগ দিয়ে ফোকাস গ্রুপ পুনর্গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি বিএসইসি ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ পুনর্গঠনের বিষয়ে আদেশ জারি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের নতুন দুই সদস্য হলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহকারী মহাব্যবস্থাপক (লিস্টিং ডিপার্টমেন্ট হেড) মো: রবিউল ইসলাম এবং ইডিজিই এএমসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো: আসিফ খান।

ফোকাস গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলেন- প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডি এবং সিইও মো: মনিরুজ্জামান, মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আশিকুর রহমান, এ কে খান সিকিউরিটিজের সিইও মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়া, ক্যাল বাংলাদেশের এমডি ও কান্ট্রি হেড অ্যান্ড্রু দেশন পুষ্পরাজাহ, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশের (সিসিবিএল) জিএম ও সিটিও (ভারপ্রাপ্ত) এম ইমাম হোসেন, আহমেদ শেখ রায় অ্যান্ড কোং-এর পার্টনার শেখ তারেক জহির, আহমেদ হক সিদ্দিকী অ্যান্ড কোং-এর ম্যানেজিং পার্টনার মো: ওয়াদুদ আহমেদ এবং আইসিএবির সদস্য দীপক কুমার রায়।

জানা যায়, পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ক্লিন ইমেজের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ গঠিত হয়েছে। আগে গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’-এর পরামর্শে তাদের কাজে সহযোগিতা করতে এ ফোকাস গ্রুপ পুনর্গঠন করেছে বিএসইসি। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানের পুঁজিবাজারের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স কর্তৃক ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং-এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: মোস্তফা আকবর এবং অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।

বিএসইসির ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়, টাস্কফোর্সের অধীনে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক ফোকাস গ্রুপ থাকবে। প্রতিটি ফোকাস গ্রুপ নির্দিষ্ট বিষয়ে কাজ করবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে টাস্কফোর্সের কাছে সুপারিশ পেশ করবে। এ ছাড়া প্রয়োজনে কমিশনকে অবহিত করে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ উপযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্দিষ্ট ক্ষেত্র চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট সংস্কার এগিয়ে নিতে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করবে।

গতকাল ঢাকা শেয়ারবাজারে প্রধান সূচকটি ৫ হাজার ১৯৬ দশমিক ৭০ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করে সকাল সোয়া ১১টার মধ্যে পৌঁছে যায় ৫ হাজার ২১৪ দশমিক ১৪ পয়েন্টে। এ পর্যায়ে সূচকটির প্রায় ১৮ পয়েন্ট উন্নতি রেকর্ড করা হয়। এখান থেকেই বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে বাজারটি। টানা ১ ঘণ্টা বিক্রয়চাপ অব্যাহত থাকলে দুপুর সোয়া ১২টার ডিএসই সূচক নেমে আসে ৫ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে। শেষদিকে এসে সাময়িকভাবে সূচকের উন্নতি ঘটলেও দিনশেষে ১০ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট অবনতিতে ৫ হাজার ১৮৫ দশমিক ৮২ পয়েন্টে স্থির হয় সূচকটি।

গতকাল ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষস্থানটি আবার দখলে নেয় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এ দিন ২৪ কোটি ৩ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ২২ লাখ ৬ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়। ১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় ৭৪ কোটি ৫৭ লাখ শেয়ার বেচাকেনা করে লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে একই গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিকস। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, বিচ হ্যাচারি, ইস্টার্ন হাউজিং,স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এসিআই লি. ও ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন।

দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ কোম্পানি ছিল বিডি ল্যাম্প। গতকাল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ দাম বাড়ে কোম্পানিটির। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থান ছিল বিদ্যুৎ খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ডেসকো ও বহুজাতিক সিমেন্ট কোম্পানি হাইডেলবার্গের দখলে। এ দুটি কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৮৭ ও ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

অন্য দিকে দরপতনের তালিকার শীর্ষে ছিল জীবন বীমা কোম্পানি পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এ দিকে ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। দরপতনের শীর্ষ তালিকার অন্য কোম্পানির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সেন্ট্রাল ফার্মা, ফু ওয়াং ফুড, মাইডাস ফিন্যান্স, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, এইচ আর টেক্সটাইল ও নিউলাইন টেক্সটাইলস।