আলিয়া এবং কওমি এই দুই ধরনের মাদরাসার প্রায় সোয়া কোটি শিক্ষার্থীর কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও মাদরাসার শিক্ষার প্রসারে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোগের বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিষয়েও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এসেছে। গাজীপুরের একমাত্র মাদারাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের বাইরে দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে আরো সাতটি আঞ্চলিক মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনে একটি প্রকল্প এর ইমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনার তথ্য তুলে ধরেন। সচিব বলেন, সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি এখন আলিম এবং কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যেও কারিগরি তথা কর্মমুখী শিক্ষা নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। সম্প্রতি কওমি মাদরাসার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বেফাকের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকের পর তারা এ বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। একই সাথে দেশের আলিয়া মাদরাসার পাঠ্যসূচিতেও কারিগরি শিক্ষার নতুন নতুন বিষয় যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারাও কর্মমুখী শিক্ষায় আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
সচিব জানান, দেশে এখন কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। একটি খসড়া হিসাবে দেখা গেছে, কওমি মাদরাসাগুলোতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন প্রায় ৮০ লাখ। অন্য দিকে আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমবেশি ৪০ লাখ। এই উভয় ধারার মাদরাসার প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা (মোট এক কোটি ২০ লাখ) আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর এবং যুগোপযোগী কর্মমুখী শিক্ষা অর্জনে আগ্রহী। সরকারও এ বিষয়ে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব কবিরুল ইসলাম বলেন, দেশের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তের আদেশ শিগগির জারি হবে। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির বিষয়টি অনেক দিনের দাবি ছিল। তিনি বলেন, আমি এখানে (সচিব হিসেবে) আসার পর থেকে তাদের এমপিওভুক্তির জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি, এমপিওভুক্তির আদেশ শিগগির হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এটির সার সংক্ষেপ চলে গেছে। উনি মালেশিয়া থাকার কারণে এখনো স্বাক্ষর হয়নি। হয়তো আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) এটি হতে পারে। আর তা না হলে পরের সপ্তাহে হবে বলে আমি আশা করছি। সচিব বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই চলতি বছরের শুরুতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে প্রথমে এমপিওভুক্ত করে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়া হয়। গত ২৫ জুন ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করতে ৮ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল।
নীতিমালা অনুসারে, মাদরাসাগুলোর মোট ছয়টি পদ এমপিওভুক্ত হবে। ইবতেদায়ি প্রধান বেতন পাবেন ১০ম গ্রেডে। আর সাধারণ, বিজ্ঞান ও আরবি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন হবে ১৩তম গ্রেডে। আর কারি বা নূরানি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৬তম গ্রেডে বেতন পাবেন। আর প্রতিটি ইবতেদায়ি মাদরাসার অফিস সহায়ক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যে পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা ২০তম গ্রেডে বেতন পাবেন। নীতিমালা অনুসারে, মাদরাসাগুলোর শিক্ষক পদে এনটিআরসিএর সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। নীতিমালায় মাদরাসাগুলোর ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা এসেছে। প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহায়ক পদে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন প্রসঙ্গে ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি মাদরাসার জন্য জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালাটি উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চলে যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে এলে আমরা নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) এমপিওভুক্ত দেবো। তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ২০০৬ সালের আগে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত; কিন্তু আগের আওয়ামী সরকার বৈষম্যমূলকভাবে তাদের এমপিও দেয়নি, সেগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে। এই অর্থবছরে আশা করি, এটা পারব। ২০২২ সালের পর থেকে নতুন করে কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি।